পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উফ্! অসহ্য ভ্যাপসা গরম! ঢাকার তাপমাত্রার পারদ ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে থাকলেও বাস্তব তাপের দহন ৪৩ থেকে ৪৪ ডিগ্রি। পূর্বাভাস মতে আজ রোববার খরতাপ বেড়েই যাবে। এমনকি তাপদাহের এহেন অবস্থা চলবে চলতি সপ্তাহজুড়ে। দেশের উত্তরাঞ্চল, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, সিলেট, নেত্রকোনায় গত দুই দিনে ছিটেফোঁটা বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে এতে করে মধ্য-বৈশাখে গরমের তীব্রতা কমেনি। বরং আরো উসকে উঠেছে। বাতাসে আগুনের হল্কা। এগারো দিন ধরে গা-জ্বলা গরমের দাপটে প্রায় দেড় কোটি মানুষের বাসস্থল রাজধানী ঢাকা পরিণত হয়েছে উত্তপ্ত গ্যাস চেম্বারে। সারাদেশে তাপদাহে ব্যাহত হচ্ছে জনজীবনের স্বাভাবিক গতি। ভারত মহাসাগর ও এর সংলগ্ন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের উপকূল থেকে দুই হাজার কিলোমিটার দক্ষিণে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘ফণির’ ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি। সকালে আগুনের তেজ ছড়িয়ে দিয়ে সূর্যোদয় থেকে শুরু করে দিনভর এবং সূর্য ডোবা পর্যন্ত ঘরে-বাইরে তাপদাহে টেকা দায়। রাতেও নেই স্বস্তি। সেই সাথে সর্বত্র পানি ও বিদ্যুতের ভোগান্তি। সব মিলিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বাতাসের আর্দ্রতার হার অস্বাভাবিক বেশি (ঢাকায় দিনের বেলায় ৮৫ শতাংশ) থাকায় গরমের সাথে অতিরিক্ত ঘামে মানুষের শরীর দ্রুত দুর্বল কাহিল ও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। রাস্তাঘাটে বরফ মেশানো শরবৎ ও হরেক পানীয়ের সাহায্যে গলা ভিজিয়েও বুকজুড়ে তৃষ্ণা যেন মেটে না। বরং দূষিত পানির কারণে রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে। বিশুদ্ধ পানির অভাব প্রকট। গরমে-ঘামে ডায়রিয়া, পেটের পীড়া, জ্বর-কাশিসহ মৌসুমী বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাবে ঘরে ঘরে অসুস্থ হয়ে পড়েছে মানুষজন।
এদিকে ভারত মহাসাগর ও সংলগ্ন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি আরো ঘনীভূত হয়ে গতকাল সন্ধ্যা নাগাদ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। এর নাম ‘ফণি’। ভারতের দিকে ঘূর্ণিঝড়ের গতি ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কি.মি। এর প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রামসহ সমুদ্র বন্দরগুলোকে দুই নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সঙ্কেত দেখানো হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় আজ রোববার দক্ষিণ ভারতের অন্ধ্র-তামিলনাডু উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ‘ফণি’র অবস্থান অনেক দূরে হওয়ায় বাংলাদেশের আবহাওয়ায় এর তেমন প্রভাব পড়েনি।
তবে আবহাওয়া বিভাগ ও আন্তর্জাতিক আবহাওয়া-জলবায়ু নেটওয়ার্কের পূর্বাভাসে জানা যায়, ভারতমুখী ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’র পিঠে পিঠে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ থেকে আরও একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে। এটি মে মাসের গোড়ার দিকে বাংলাদেশ ও ভারত উপকূলের দিকে ধেয়ে আসার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরফলে এবারের গ্রীষ্ম মৌসুমের বড় অংশজুড়ে ঝড়-বজ্রপাত, শিলাঝড়, খরার দহন মিলিয়ে বাংলাদেশে রয়েছে দুর্যোগের ঘনঘটা। মাহে রমজানে রোজাদারদের জন্য দুর্ভোগের কারণ হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে চলতি এপ্রিল ও আসন্ন মে মাসে বঙ্গোপসাগরে একাধিক নিম্নচাপ থেকে শক্তি সঞ্চয় করে দুইটি ঘূর্ণিঝড় রূপ নেয়ার আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। এক সপ্তাহ কিংবা ততোধিক সময় ধরে সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির তাপমাত্রা অবিরাম ২৮ ডিগ্রি সে. বা ততোধিক পর্যায়ে থাকলে সাগরে নিম্নচাপ থেকে ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হতে পারে। গত এক সপ্তাহেরও বেশিদিন যাবৎ বঙ্গোপসাগরের উপরতল উত্তপ্ত অবস্থায় রয়েছে। যা ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের অশনি সঙ্কেত বলেই মনে করা হচ্ছে।
দূর ও নিকট অতীতের দুর্যোগ খতিয়ান অনুসারে, সচরাচর এপ্রিলের শেষের দিক থেকে শুরু করে মে মাস ও জুনের প্রথমার্ধ এবং অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস বাংলাদেশ ও আশপাশ অঞ্চলের উপক‚লে আঘাত হানে। এরমধ্যে ছিল বেশ কয়েকটি প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস। বঙ্গোপসাগরের কোলে বাংলাদেশের চোঙা (ফানেল) আকৃতির সমুদ্র উপকূল, চর ও দ্বীপাঞ্চল ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মতো দুর্যোগ প্রবণ।
বিগত সময়ে শতাব্দীর প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূল, চর ও দ্বীপাঞ্চলে আঘাত হেনে তছনছ করে সেই ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল সোমবার দিবাগত রাতে। প্রতি ঘণ্টায় ২৫০ কিলোমিটার বেগে ঘূর্ণিঝড় এবং সেই সঙ্গে ২৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস উপকূলে ছোবল হানে। সেই প্রলয়ংকরী গর্কি ছিনিয়ে নেয় ২ লাখ বনিআদমের প্রাণ। হাজার কোটি টাকার সম্পদ বিরান হয়ে যায়। ২৮ বছর পর ঘুরে আসছে সেই প্রলয়-ভয়াল শোকাবহ দিনটি আগামীকাল
বাড়বে গরমের মাত্রা স্বস্তির বৃষ্টিপাত নেই
গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত হালকা ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এরমধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড যশোরে ১৯ মিলিমিটার। এ সময়ে গোপালগঞ্জে ৩ মি.মি. নিকলিতে সামান্য, ময়মনসিংহে সামান্য, নেত্রকোনায় ১ মি.মি., সিলেটে ১২ মি.মি., সৈয়দপুরে ৩ মি.মি., সাতক্ষীরায় ১ মি.মি. বর্ষণ হয়েছে। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় খুলনা ও যশোরে ৩৭.২ ডিগ্রি সে.। এ সময় পুরো খুলনা বিভাগে অসহ্য তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। ঢাকার তাপমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ ৩৫.৫ ডিগ্রি সে. এবং সর্বনিম্ন ২৬.২ ডিগ্রি সে.। তবে রাজধানী ঢাকায় গতকাল প্রকৃত তাপদাহ ছিল ৪৩ থেকে ৪৪ ডিগ্রি সে.। চট্টগ্রামের তাপমাত্রা ৩৪.২ ডিগ্রি সে. এবং সর্বনিম্ন ২৬.৩ ডিগ্রি সে.।
এদিকে আজ রোববার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলসহ রাজশাহী, খুলনা ও ঢাকা বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া দেশের অন্যত্র আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
বরিশাল, পটুয়াখালী, সিলেট ও ফরিদপুর অঞ্চলসহ খুলনা বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
খুলনা, রাজশাহী, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগে দিনের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। দেশের অন্যত্র তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।
পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় আবহাওয়ার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের কোন সম্ভাবনা নেই। এরপরের ৫ দিনে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’ ভারতমুখী
ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’ দক্ষিণ ভারত অভিমুখে গতিপথ বজায় রেখেছে। ঘূর্ণিঝড়টি আজ (রোববার) অন্ধ্র-তামিলনাডু উপকূল অতিক্রম করতে পারে। আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে আবহাওয়াবিদ মুহম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, নিরক্ষীয় ভারত মহাসাগর ও এর সংলগ্ন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিস্নচাপটি কিছুটা উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে গতকাল সন্ধ্যা নাগাদ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘ফণি’।
‘ফণি’ গতকাল বিকেলে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৯৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১৮৫৫ কি. মি. দক্ষিণে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৯২৫ কি. মি. দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১৮৮০ কি. মি. দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ভারতের অন্ধ্র উপকূলের দিকে অগ্রসর হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ৬২ কি. মি., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কি. মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সমুদ্রে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।