Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশ ঝুঁঁকিতে থাকলেও হামলার কোনো আশঙ্কা নেই

সাংবাদিকদের সিটিটিসি প্রধান

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৩ এএম | আপডেট : ১২:১৪ এএম, ২৮ এপ্রিল, ২০১৯

বৈশ্বিক ঝুঁকির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ঝুঁকিতে থাকলেও কোনো হামলার আশঙ্কা নেই। কোনো ধরনের হুমকি বা হামলার তথ্য এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে নেই। শ্রীলঙ্কা থেকে ফেরত আসা ১১ বাংলাদেশি শ্রমিকের কারো বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো ক্রিমিনাল রেকর্ড পাওয়া যায়নি। তবে সে বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। গতকাল শনিবার মিন্টু রোডে নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম। অন্যদিকে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। আইএসপন্থী একটি টেলিগ্রাম চ্যানেলে প্রকাশিত বাংলায় লেখা একটি পোস্টারের সূত্রে এই হামলা পরিকল্পনা সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার কথা জানিয়েছে তারা। পোস্টারে বাংলায় লেখা হয়েছে ’শিগগিরই আসছি’। শ্রীলঙ্কার একাধিক গির্জা ও হোটেলে ভয়াবহ হামলার কয়েক দিনের মাথায় এই কথিত হুমকির খবর সামনে এলো। টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় গোয়েন্দারা আইএসপন্থী একটি টেলিগ্রাম চ্যানেলে প্রকাশিত ওই পোস্টারটি খতিয়ে দেখছে।
মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়েছে শ্রীলঙ্কার হামলা ও হামলাকারীর সঙ্গে এই ১১ শ্রমিকের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তারা সেখানে ইব্রাহিম ইনসাফ আহমেদের কলসাস মেটাল নামে একটি পিতলের কারখানায় পিতলের তৈজসপত্র তৈরির কাজ করত। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ টাঙ্গাইলের বসবাসকারী। তারা মূলত টুরিস্ট ভিসায় সেখানে গিয়েছিল। তাদের কোনো ওয়ার্ক পারমিট ছিল না। অনেকের আবার ভিসার মেয়াদও ছিল না। হামলার ঘটনায় ওই ফ্যাক্টরির মালিক নিহত হয়েছেন। শ্রীলঙ্কার কর্তৃপক্ষ তাদের অ্যাম্বাসির মাধ্যমে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়েছে। সেখানে অন্যান্য দেশের শ্রমিকরাও ছিল। তাদেরও ফেরত পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা এই ১১ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। যে সন্ত্রাসী মারা গেছে আমরা তার সম্পর্কে এবং তার আত্মীয়দের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছি। এখন পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদে তারা কিছুই জানাতে পারেনি। তারা মালিককে দুই-চারবার দূর থেকে দেখেছে। তবে মালিকের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ করার কোনো সুযোগ হয়নি। সাধারণ লেবারের মতোই তারা ছিল।
এক প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, সারাবিশ্ব এখন ঝুঁঁকিতে রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়া ঝুঁঁকিতে রয়েছে, আমরাও ঝুঁঁকিতে আছি। তবে বৈশ্বিক ঝুঁঁকির কারণে আমাদের দেশ ঝুঁঁকিতে থাকলেও কোনো হামলার আশঙ্কা নেই। আমাদের দেশে হুমকি বা হামলার কোনো তথ্য এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে নেই।
তিনি বলেন, নিউজিল্যান্ডে হামলার পর আমাদের দেশের জঙ্গি সংগঠনের মধ্যে একটি প্রতিশোধপরায়ণ প্রবণতা জেগে উঠেছে। আমাদের বিভিন্ন ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির মাধ্যমে কিছু তথ্য পেয়েছি। তবে হামলার জন্য যে পরিমাণ সরঞ্জামের প্রয়োজন সেগুলো জোগাড় করা অনেক সময়ের ব্যাপার। এর আগে আমাদের বিভিন্ন অভিযানে তাদের সাংগঠনিক সক্ষমতা অনেকটা ভেঙে গিয়েছে। তবে শ্রীলঙ্কায় হামলার ঘটনার পর থেকে নিঃসন্দেহে তারা ইন্সপায়ার্ড হয়েছে। তবে হামলা করার জন্য সাংগঠনিক কাঠামো, মনোবল, সরঞ্জাম তাদের নেই। এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো হামলার আশঙ্কা নেই।
উল্লেখ্য, শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলাকারী অনেকেই আইএস ফেরত জঙ্গি বলে সন্দেহ করছেন দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। গত রবিবার ‘ইস্টার সানডে’র দিন জঙ্গি হামলায় ২৫৩ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে জায়ান চৌধুরী নামে এক বাংলাদেশি শিশুও রয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিমের নাতি জায়ান চৌধুরী সাংরি-লা হোটেলে বিস্ফোরণে নিহত হয়। আহত হয়ে জায়ানের বাবা মশিউর হক চৌধুরী প্রিন্স বর্তমানে কলম্বোতে চিকিৎসাধীন।
আইএসের হুমকি?
টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, পোস্টারে ‘শিগগির আসছি ইনশাল্লাহ’ লেখার পাশাপাশি আল মুসারাত নামে একটি গ্রুপের লোগো সংযুক্ত রয়েছে। সেখান থেকেই তারা ধারণা করছে, এটি পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে হামলার ইঙ্গিত। প্রতিবেদনে ওই পোস্টারের কোনো ছবি যুক্ত করা হয়নি। গোয়েন্দা সূত্র বিষয়টিকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে বলে দাবি তাদের।
টাইমস অব ইন্ডিয়া বিশ্লেষক ও গোয়েন্দা সূত্রে দাবি করেছে, আইএসের কেন্দ্রীয় অনুমোদনপ্রাপ্ত স্থানীয় জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীনের (নব্য জেএমবি) মাধ্যমে বাংলাদেশে অবস্থান জোরালো করেছে জঙ্গিগোষ্ঠীটি। জেএমবি কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ এবং প্রতিবেশী কয়েকটি রাজ্যে সদস্য নিয়োগ ও আস্তানা তৈরি করেছে। শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ সিরিজ বোমা বিস্ফোরণের পর এই পোস্টার প্রকাশকে গুরুত্বের সাথে নেয়া হয়েছে বলে দাবি ভারতীয় গোয়েন্দাদের।
২১ এপ্রিল সকালে শ্রীলঙ্কায় ইস্টার সানডের অনুষ্ঠানে ৩টি গির্জা ও ৩টি পাঁচ তারকা হোটেলে সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় নিহত হয় ২৫৩ জন। এ ঘটনায় আহত হন ৫শ’রও বেশি। হামলার পর ইসলামিক স্টেট (আইএস) একটি ভিডিও প্রকাশ করে তার দায় স্বীকার করে। ওই ভিডিওতে হামলায় অংশ নেয়া সাতজনসহ জাহরান হাশিমকে আইএসের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে দেখা যায়। তবে ভিডিওতে একমাত্র জাহরান হাশিম ছাড়া অন্যদের মুখ ঢাকা ছিল। তাদের সেদিনের আত্মঘাতী হামলাকারী বলে মনে করা হচ্ছে। এই ঘটনার কয়েক দিনের মাথায় বাংলাদেশে হামলা-পরিকল্পনার খবর সামনে আনল ভারতীয় গোয়েন্দারা।
পৌনে ৩ বছর আগে রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার পর তার দায় স্বীকার করে বার্তা প্রকাশ করেছিল আইএস। যদিও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তা নাকচ করে দেয়া হয়। ২০১৬ সালের ১ জুলাই সংঘটিত ওই হামলায় ২০ জন দেশি-বিদেশি নাগরিককে হত্যা করে। আর অভিযান চালাতে গিয়ে নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তা। পরের দিন ভোরে সেনা কমান্ডোদের অভিযানে বাকি জিম্মি উদ্ধার করা হয়। তবে হামলায় জড়িত পাঁচ জঙ্গি এবং ওই রেস্তোরাঁ কর্মী সাইফুল ইসলাম চৌকিদার নিহত হয়।

প্রতিবেদনটি গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখা হচ্ছে- গোয়েন্দা কর্মকর্তা
আইএস ও বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠন নিয়ে কাজ করেন এমন একজন দায়িত্বশীল গোয়েন্দা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনটি আমরা খুবই গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ নিয়ে নানা তথ্য সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আইএসের বাংলা গান প্রকাশের বিষয়ে দুটি স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়েছে ইন্টারনেটে। যার একটিতে দেখা যাচ্ছে, 'আমাদের কালো পতাকা' নামের সেই ভিডিও গানটি আল মুরসালাত মিডিয়া কর্তৃৃক বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে। যা শীঘ্র্ই প্রকাশ করা হবে। বিষয়টি এরকম হলেও কিন্তু শংকা কমে যাচ্ছে না। কারণ, আইএসের বাংলা গান প্রকাশের উদ্দেশ্যেই কিন্তু এ অঞ্চলের মানুষদের জঙ্গি কার্যকলাপে উদ্বুগ্ধ করা। আজ তারা হামলার হুমকি না দিলেও তাদের পরিকল্পনা যে সুদূরপ্রসারী তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সুতরাং সতর্ক হতেই হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ