Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অনিশ্চয়তায় বরিশালে উচ্চ ক্ষমতার পাওয়ার প্লান্ট প্রকল্প

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতা আর স্থানীয় প্রশাসনের অসহযোগিতায় বরিশালে প্রস্তাবিত ‘২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট’ স্থাপন প্রকল্প গত দু বছরেরও অধিক সময় ধরে চরম অনিশ্চয়তার কবলে। অথচ এ ধরনের একটি পাওয়ার প্লান্ট জাতীয় গ্রীডে বিদ্যুৎ সরবরাহসহ দক্ষিণাঞ্চলের অন্তত দশ লাখ গ্রাহকের কাছে মানসম্মত পর্যায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করত। প্রকল্পের জন্য বিদ্যমান বরিশাল গ্যাস টার্বাইন পাওয়ার স্টেশন সংলগ্ন সরকারি খাস জমি ও বেসরকারি জমি অধিগ্রহনের ছাড়পত্র প্রদান করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন। বিষয়টি নিয়ে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় ও পিডিবি’র স্থানীয় পর্যায় থেকে কয়েক দফা জেলা প্রশাসনকে চিঠি দেয়ার পরেও কোন ইতিবাচক সাড়া মেলেনি জানা গেছে। তবে বরিশালে বিভাগীয় কমিশনার রামচন্দ্র দাশের সাথে আলাপ করা হলে তিনি বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবাহল নন বলে জানিয়ে যত দ্রুত সম্ভব পিডিবি ও সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের সাথে বৈঠক করে পরবর্তি কর্মপন্থা নির্ধারনের কথা জানান।
জাতীয় গ্রীডে বিদ্যুৎ সরবরাহ সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড থেকে ২০১৭-এর ফেব্রুয়ারি-মার্চে বরিশালে ২২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের চূড়ান্ত অনুমোদনশেষে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠান হয়। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয় নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বিদ্যমান বরিশাল গ্যাস টার্বাইন পাওয়ার স্টেশন সংলগ্ন প্রয়োজনীয় জমি হুকুম দখল করা সংক্রান্ত জেলা প্রশাসনের ছাড়পত্র প্রদানের অনুরোধ করে। ঐ জমি ঝালকাঠী জেলার নলছিটি উপজেলার আওতাভূক্ত।
বিষয়টি নিয়ে বরিশাল গ্যাস টার্বাইন পাওয়ার স্টেশন কর্তৃপক্ষ ঝালকাঠী জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিলেও অনেক বিলম্ব করে নলছিটি উপজেলা প্রশাসনকে বিষয়টি দেখার কথা বলে জেলা প্রশাসন। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে উপজেলা প্রশাসন বিদ্যমান পাওয়ার স্টেশনের সাথে প্রায় ১৬ একর জমি পাওয়া যেতে পারে বলে জেলা প্রশাসনকে জনায়। কিন্তু জেলা প্রশাসন থেকে পিডিবি বা বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়কে ইতিবাচক কিছু জানান হয়নি। ওই এলাকায় ইতোপূর্বে একটি বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে প্রায় শত একর এবং অপর একটি বেসরকারি পাওয়ার স্টেশনকেও প্রায় ৩০ একর জমি প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রের প্রয়োজনে সরকার জমির ব্যবস্থা করতে বললেও বিষয়টি আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কবলে আটকা পড়ে আছে।
বর্তমানে বরিশাল গ্যাস টার্বাইন পাওয়ার স্টেশনে ১৮.৪০ একর জমির ওপর বিদ্যমান ২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি পাওয়র প্লান্ট-এর প্রথমটি ১৯৮০ সালে স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করে ’৮৪ সালে চালু করা হয়। ২য় ইউনিটটি ১৯৮৭ সালে চালু করা হয়। ২০ বছর আয়ুস্কালের এ দুটি উৎপাদন ইউনিট ইতোমধ্যে যথাক্রমে ৩৫ বছর ও ৩১ বছর বয়স অতিক্রম করেছে। এসব উৎপাদন ইউনিট ক্ষমতার তিন-চতুর্থাংশের বেশি বিদ্যুৎ দিতে পারছে না। প্রস্তাবিত বরিশাল ২২৫মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্টে ৭৫মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩টি গ্যাস টার্বাইন ইউনিট থাকবে। যার দুটি টার্বাইনের আগুন থেকে তৃতীয় স্টিম টার্বাইনটি চলবে। ফলে এ পাওয়ার প্লান্টে উৎপাদন ব্যয় অন্তত: এক-তৃতীয়াংশ হ্রাস পাবে।
বছর দুয়েক আগে ভোলায় ২২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার স্টেশন চালু করা হয় চীনা কারিগরি সহায়তায়। কিন্তু ৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩টি ইউনিটই ক্ষমতার ১০% কম বিদ্যুৎ উপাদন করছে। ফলে ২২৫ মেগাওয়াটের স্থলে সেখান থেকে সর্বোচ্চ ১৯০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না। ভোলায় একই ক্ষমতার আরো একটি পাওয়ার স্টেশন করার প্রস্তাব দেয়া হলেও তা আর বেশিদূর আগায়নি।
এসব কিছু বিবেচনায় নিয়েই পিডিবি বরিশালে মাঝারি থেকে বড় পাওয়ার স্টেশন স্থাপনে সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। কিন্তু পুরো বিষয়টিই গত সোয়া দু’বছর অন্ধকারে হাতড়াচ্ছে। পিডিবি‘র একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, বরিশালের প্রস্তাবিত প্রকল্প নিয়ে সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের পাশাপাশি উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহন জরুরি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ