পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিদেশের বন্ধ শ্রমবাজার এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি। সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া ও বাহরাইনে দীর্ঘ দিন ধরে বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। এতে শ্রমবাজারে কাক্সিক্ষত গতি বাড়ছে না। বিদেশে বাংলাদেশী মিশনের লেবার উইংগুলোর তৎপরতার অভাবেও শ্রমবাজার সম্প্রসারণ হচ্ছে না। সম্ভাবনাময় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে এখনো আশার আলো দেখা না গেলেও দেশটিতে ধরপাকড় অব্যাহত থাকায় প্রবাসী বাংলাদেশীরা চরম আতঙ্কে রয়েছেন। নতুন অনলাইন সিস্টেম চালু হলেই বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ শুরু হবে বলেও বায়রা কর্তৃপক্ষ আশাবাদ ব্যক্ত করছেন।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদ মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। কিন্তু কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের রাষ্ট্রদূত শহিদুল ইসলামের কূটনৈতিক তৎপরতায় চরম ব্যর্থতার দরুন প্রবাসী প্রতিমন্ত্রীর মালয়েশিয়ায় যাওয়ার দিন-তারিখ এখনো নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় অভিবাসী কর্মী নিয়োগসংক্রান্ত গঠিত স্বাধীন কমিটি এক সভায় বিদেশী কর্মী নিয়োগের বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। ঐ সভায় বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের বিষয়েও আভাস দেয়া হয়েছে বলে কুয়ালালামপুরস্থ একটি সূত্র জানায়। মালয়েশিয়ার বিভিন্ন কারাগারে আটককৃত শত শত বাংলাদেশী আইনি সহায়তা না পেয়ে দেশে ফিরতে পারছে না। তারা কারাগারের ভেতরে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গত নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতি উপজেলা থেকে ১২ মাসে ১ হাজার জন কর্মীকে বিদেশে চাকরি দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। এ বিষয়টি সামনে রেখে প্রবাসী মন্ত্রণালয় দেশের ৬৪টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং ৬টি ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজির সক্ষমতা বৃদ্ধি ও অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং বেশিসংখ্যক কর্মীকে প্রশিক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে।
গত জানুয়ারি থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে ১ লাখ ৯০ হাজার নারী-পুরুষ কর্মী চাকরি লাভ করেছে। অভিবাসী কর্মীদের রেমিট্যান্স আয়ও বাড়ছে। বিএমইটি’র নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। বর্তমানে দ্বিগুণ ভাড়ার টিকিট কিনতে বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের নাভিশ্বাস উঠছে। এতে অভিবাসন ব্যয় দিন দিন বাড়ছে। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক দেশগুলোর বিমানের টিকিট নিয়ে হাহাকার চলছে। টিকিট সঙ্কটের অজুহাতে এয়ারলাইন্সগুলো যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া হাতিয়ে নিচ্ছে। চারটি এয়ারলাইন্স ইতোমধ্যে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করেছে। আরো দু’টি এয়ারলাইন্স শিগগিরই একটি করে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ করে দেবে। বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের দ্বিগুণ ভাড়ার টিকিট কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এতে অভিবাসন ব্যয়ও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। যথাসময়ে টিকিট না পাওয়ায় ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন কর্মীর। টিকিট বিক্রির সিন্ডিকেট চক্র বিমানসহ অন্যান্য এয়ারলাইন্সের টিকিট ব্লক করে রেখে চড়া দামে তা বিক্রি করে কালো টাকার মালিক হচ্ছে। এয়ারলাইন্সের ভাড়া অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় ওমরাযাত্রীদেরও অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে। টিকিট সঙ্কট নিরসনে বায়রা কর্তৃপক্ষ ঢাকা বিমানবন্দরকে দ্রুত ওপেন স্কাই ঘোষণার দাবি জানিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে সফল শ্রম কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৫৮ লাখ ১৩ হাজার ৪৯৯ জন নারী-পুরুষ কর্মী চাকরি লাভ করেছে। ২০১৭ সালে ১০ লাখ ৮ হাজার ৫২৫ জন কর্মী বিদেশে গেছে। এ সময়ে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩৫২৬.৮৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ৭ লাখ ৩৪ হাজার ১৮১ জন কর্মী বিদেশে গেছে। এ সময়ে প্রবাসী কর্মীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে ১৩.১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
২০১৩ সালে অভিবাসী আইন মোতাবেক বিভিন্ন দেশে অভিবাসী কর্মীদের ব্যয় পৃথক পৃথক ভাবে নির্ধারণ করা হয়। সউদী আরবে অভিবাসন ব্যয় জনপ্রতি ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা, মালয়েশিয়ায় জনপ্রতি ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা, ব্রুনাই জনপ্রতি ১ লাখ ২০ হাজার টাকা, সংযুক্ত আরব আমিরাতে জনপ্রতি ১ লাখ ৭ হাজার ৭৮০ টাকা, কুয়েতে জনপ্রতি ১ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু একাধিক দালালের হাত বদল হয়ে অভিবাসন ব্যয় কয়েকগুণ বেশি নেয়া হচ্ছে।
প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, অধিক দক্ষ কর্মী বিদেশে প্রেরণের লক্ষ্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয় নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছে। নিরাপদ নিয়মিত সুশৃঙ্খল ও দায়িত্বশীল অভিবাসনে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিগগিরই প্রত্যেক জেলায় জেলায় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সমন্বয়ে সেমিনার শুরু করা হবে।
বায়রার যুগ্ম-মহাসচিব মিজানুর রহমান বন্ধকৃত শ্রমবাজারগুলো চালু না হওয়া সম্পর্কে বলেন, সউদী আরব দেশটির চাহিদানুযায়ী বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিচ্ছে। ২০১৮ সালে সর্বমোট জনশক্তি রফতানির অর্ধেকই গেছে সউদী আরবে। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী কর্মীর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ অভিবাসী কর্মী নিয়োগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ফিরিয়ে আনতে নতুন অনলাইন সিস্টেম চালু করতে যাচ্ছেন। শিগগিরই এ প্রক্রিয়া চালু হলে কোনো সিন্ডিকেট নয়, সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিই মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সুযোগ পাবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বায়রার যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, জনশক্তি রফতানিতে গতি বাড়াতে হলে দক্ষ কর্মী প্রেরণে বেশি উদ্যোগ নিতে হবে। ইউরোপ ও পূর্ব এশিয়ায়ও বাংলাদেশী দক্ষ কর্মীর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তিনি বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রুনাইয়ে সফর করার পর দেশটিতে বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগের সংখ্যা বাড়বে ইনশাআল্লাহ। আসন্ন রমজানের পরে কর্মী নিয়োগের লক্ষ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে আসবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সউদী আরবের জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কাউন্সেলর আমিনুল ইসলামের দুর্ব্যবহার ও অসহযোগিতার কারণে প্রবাসীরা প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কাউন্সেলর আমিনুল ইসলামের আচরণে কনস্যুলেটের ভাবমর্যাদা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শ্রম উইংয়ের নিয়মিত কার্যক্রম অনেকটাই শ্লথ হয়ে পড়েছে। রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ ২০১৮ সালের ১০ ডিসেম্বর অভিযুক্ত কাউন্সেলর আমিনুল ইসলামকে অবিলম্বে কর্মস্থল থেকে দেশে ফিরিয়ে নিতে প্রবাসী সচিব রৌনক জাহান ও পররাষ্ট্র সচিবের কাছে লিখিত অনুরোধ জানান। কিন্তু অদ্যাবধি কাউন্সেলর বহাল তবিয়তে রয়েছেন। পারফরম্যান্স অডিট অধিদপ্তর মহাপরিচালক সাইফুর রহমান গত বছর নভেম্বর মাসে জেদ্দায় তদন্তকালে কাউন্সেলরের বিরুদ্ধে ১২ লক্ষাধিক টাকা দুর্নীতি ও অনিয়মের ঘটনা ধরা পড়ে । এর পরেও তার কিছুই হচ্ছে না বলেও জেদ্দা থেকে একাধিক প্রবাসী ভুক্তভোগী জানান।
এ দিকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমেদ মধ্যপ্রাচ্যেও শ্রমবাজার শক্তিশালী, সুসংহত ও নিয়মিতকরণের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সউদী আরব, দুবাই, ওমান ও কাতার সফর করেছেন। এসময়ে সউদী উপমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করে দেশটিকে প্রবাসী বাংলাদেশীদের নানা সমস্যার সমাধান এবং বাংলাদেশ থেকে অধিক কর্মী নেয়ার অনুরোধ জানান। দেশগুলোতে বসবাসকারী বাংলাদেশী কমিউনিটি, দূতাবাসের লেবার উইং, সেইফ হোম পরিদর্শন করে প্রবাসী কর্মীদের যেকোনো সমস্যা দ্রুত নিরসনের নির্দেশনা দেন। ঢাকায় হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিভিন্ন শাখায় আকর্ষিক পরিদর্শনে যান প্রবাসী প্রতিমন্ত্রী। বিমানবন্দরে বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের ভোগান্তি লাঘবে নারী কর্মীদের জন্য একটি পৃথক কিউ ইমিগ্রেশন চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শ্রম অভিবাসনকে আরো মর্যাদাপূর্ণ অবস্থায় নিয়ে যেতে ৬০ সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় শ্রম অভিবাসন ফোরাম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া শ্রমবাজারের গতি আরো কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় তার দিকনির্দেশনাও দেয়া হয়েছে সংস্থা ও অধিদপ্তরগুলোকে। প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সিসেলস, ওমান, জাপানসহ আরো কয়েকটি দেশে বিভিন্ন খাতে অধিক কর্মী প্রেরণের লক্ষ্যে সেসব দেশের প্রতিনিধিদের সাথেও একাধিক বৈঠক করেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।