Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বিএনপির এমপিদের শপথে সরকারের চাপ নেই

গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৭ এএম

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ নেওয়ার বিষয়ে সরকারের চাপ দেওয়ার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যারা শপথ নিয়েছেন তারা স্বেচ্ছায় শপথ নিয়েছেন। এ নিয়ে সরকারের কোনও চাপ নেই। আমরা চাপ দিতে যাব কেন? যারা তাদের নির্বাচিত করেছেন তারাই (জনগণ) শপথ নেওয়ার বিষয়ে তাদের চাপ দিচ্ছেন। সংসদে গিয়ে তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য কথা বলবেন।
গতকাল বিকালে গণভবনে আয়োজিত সদ্য সমাপ্ত ব্রুনাইয়ে তিন দিনের সরকারি সফর নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি একটা রাজনৈতিক দল। তাদের সিদ্ধান্ত তারাই নেবে। অন্য একটা দল সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারে না।
খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্যারোলের জন্য আবেদন করতে হয়। কিন্তু এখনো কেউ আবেদন করেনি। যেহেতু আবেদন করেনি সেহেতু এ বিষয়ে আমার মন্তব্য করার কিছু নেই।
শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়াকে আমরা রাজনীতিকভাবে গ্রেফতার করিনি। তিনি দুর্নীতির কারণে কোর্টের মাধ্যমে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন এবং সেই শাস্তি সে ভোগ করছেন। মামলাটাও কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার করেনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার করেছিলো। চলেছে ১০ বছর ধরে। আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে যদি আকাঙ্খা থাকতো কোর্টকে প্রভাবিত করতে চেষ্ঠা করতাম। কিন্তু তা আমরা করিনি। কোর্ট কোর্টের মতো চলেছে।
আ.লীগের নেতৃত্ব দল ঠিক করবে
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভবিষ্যত নেতৃত্বে কে আসবেন তা দল ঠিক করবে, আমি ঠিক করবো না। আমি একসময় অবসরে চলে যাবো। তখন দলে নতুন নেতৃত্ব আসবে। তবে কে নেতৃত্বে আসবেন তা ঠিক করবে দল। আওয়ামী লীগ ঠিক করবে যে, দলের নেতৃত্ব দেবেন কে। সেটা আমি ঠিক করবো না।
আওয়ামী লীগকে ঢেলে সাজানোর ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে দলটির প্রধান শেখ হাসিনা আরও বলেন, তৃণমূল থেকে দলকে সম্মেলনের মাধ্যমেই ঢেলে সাজাতে হবে। একেকটি সম্মেলন আয়োজন করতে অনেক খরচাপাতি আছে। আয়োজনের ব্যাপার আছে। সামনে সম্মেলন হবে। কখনও কেউ আসে, কেউ চলে যায়, রাজনীতিতে এটা হয়। দলকে ডিজিটাল করার প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, তৃণমূল থেকে শুরু করে দলের সবকিছু ডাটাবেজ করা হবে। আমি অবসর নিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় চলে গেলেও সুুইচ টিপে সব তথ্য পাবো।
জঙ্গিবাদকে আন্তর্জাতিক বিষয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার শঙ্কা নেই, এমন বলা যাবে না। কারণ, জঙ্গিবাদ এখন আন্তর্জাতিক বিষয় হয়ে গেছে। তবে আমরা সজাগ রয়েছি। সএক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নিয়ে সব সময় উদ্বেগ থাকবেই। শান্তিপূর্ণ নিউজিল্যান্ডেও নৃশংস হামলা সম্ভব হয়েছে। আর বাংলাদেশে তো জঙ্গিবাদ লেগেই আছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গিবাদ নিয়ে আমরা সজাগ রয়েছি। হলি আর্টিজানে হামলার পর থেকে আমাদের অবস্থানের কারণেই জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ব্রুনাই থেকে এসে বৃহস্পতিবারও আমি সমস্ত সংস্থার প্রধানদের নিয়ে রাত পর্যন্ত বৈঠক করেছি। তিনি বলেন, কিন্তু, শুধু নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করা সম্ভব হবে না। এজন্যই বক্তব্যের শুরুতে জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে এর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছি।
সরকারপ্রধান বলেন, শ্রীলঙ্কাতে বোমা হামলায় উচ্চবিত্তরা জড়িত। তারা কেন জঙ্গিবাদে, আমার বুঝে আসে না। তারা আসলে এটা করে কি পাচ্ছে? নিজেরাও মরছে, অন্যেদের ক্ষতি করছে। এজন্য বলছি, জঙ্গিদের কোনো দেশ নেই, ধর্ম নেই।
সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মানবিক কারণে যারা রোহিঙ্গাদের সেবা দিতে আসছেন, তারা নিজেদের সেবায় বেশি মনোযোগী হন। আমার ধারণা সমস্যা ওখানেই। অনেক সংস্থা এদের ভাসানচরে পাঠাতে চায় না। এর পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাসানচরে ১০ লক্ষ রোহিঙ্গাকে সুন্দরভাবে রাখা যাবে। সুপেয় পানি, সেনিটেশনের ব্যবস্থা আছে। সাইক্লোন শেল্টার করে দিয়েছি। পর্যটনের ভালো ব্যবস্থা আছে। এদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দেবো। এরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিজেদের মধ্যেও সংঘাত করছে। বেকার থাকাটা খুব খারাপ দিক। খুব সহজে এদের জঙ্গিবাদের দিকে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। এদের হায়ার করা যেতে পারে। ৪০ হাজারের বেশি বাচ্চা জন্ম দিয়েছে। বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এগুলোও আমাদের দেখতে হয়।
টিভি চ্যানেলের অনুমোদন পাবে
প্রিন্ট মিডিয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সব কিছুতেই বিশ্বে দ্রুত বিবর্তন হচ্ছে। সংবাদপত্রের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। প্রযুক্তি সারাবিশ্বের মানুষের জন্য নানা সুযোগ সৃষ্টি করেছে। সে কারণে অনলাইন পত্রিকার চাহিদা বাড়ছে। সারা বিশ্বে অনেক নামিদামি পত্রিকার ছাপাবন্ধ হয়ে গেছে। এটা প্রযুক্তির প্রভাব। তারা এখন অনলাইন পত্রিকার ওপর জোর দিয়েছে।
সম্প্রচার শিল্প নিয়ে অন্য এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, এখনও অনেকে চ্যানেল চাইছে। তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। বললাম যতো চাইছে, দিয়ে দিতে। কিছু না হোক, কিছু লোকেরতো চাকরি হবে, কর্মসংস্থান হবে। এ কারণে যতই চাইবে ততই অনুমোদন দিয়ে দেবো।
তিনি বলেন, আমরা সবকিছু ডিজিটালাইজড করে দিয়েছি, স্যাটেলাইটও হয়েছে। স্যাটেলাইটের মাধ্যমেও টিভি চালানো যায়। তিন মাসের জন্য বিনা পয়সায় (টিভি চ্যানেল) চালানোর প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে। কিন্তু চ্যানেলগুলো সেভাবে নিচ্ছে না। অথচ বিদেশি জায়গায় অনেক টাকা দিচ্ছে। কীভাবে আমাদের স্যাটেলাইটের মাধ্যমে অল্প খরচে টেলিভিশন চালাতে পারে সেজন্য কথা চলছে।
তিনি বলেন, প্রতিযোগিতার যুগ। যারা ভালো অনুষ্ঠান করবে তারা টিকে থাকবে। ভালো খবর যারা দেবে তারা, তাদের চ্যানেল মানুষ দেখবে। আমাদের দেশে ১৬ কোটি মানুষ সুতরাং গ্রাহক কখনও কমবে না বরং বেশি হবে। নবম ওয়েজবোর্ড সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওয়েজবোর্ডের ব্যাপারে সরকারের যা করণীয়, তা সরকার করেছে, বাকিটা মালিকপক্ষের, সেখান থেকে সাংবাদিকরা যা আদায় করে নিতে পারেন, সেটা তাদের ব্যাপার।
উল্লেখ্য, ব্রুনাইয়ের সুলতান হাসান আল বলকিয়ার আমন্ত্রণে ২১ থেকে ২৩ এপ্রিল দেশটিতে সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরে দুই দেশের মধ্যে ছয়টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং একটি বিনিময় নোট স্বাক্ষরিত হয়। ব্রুনাইতে এটাই ছিল প্রধানমন্ত্রীর প্রথম সফর।



 

Show all comments
  • Munna Jamal ২৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১:০১ এএম says : 0
    Bangla akta pobat accey thakur goray kayray ami kola khina
    Total Reply(0) Reply
  • Harun Khan ২৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১:০২ এএম says : 0
    এরশাদ চাচার মত ভিতরে হুমকি বাইরে নাটক।মোনাফেকের ক্ষমা নেই।সবাই কে আললাহর কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mahfuz Alam ২৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১:০২ এএম says : 0
    শুধু চাপ না বলতে পারেন "চাপের বাপ" হয়ে চাপাচাপি করে যাচ্ছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Mostafizur Rahman ২৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১:০২ এএম says : 0
    এখন বুঝলাম চাপ আছে,আগে সন্দেহ হচ্ছিলো এখন নিশ্চিত হলাম।কারণ আপনি যা করেন তা আগেই বলে ফেলেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Asif Osman ২৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১:০২ এএম says : 0
    মানুষ এখন মনে প্রাণে বিশ্বাস করে।আপনি যেটা করছেন না, বলেন।আসলে তলে তলে তাই করেন।আর যেটা বলেন করবো। আসলে সেটা করেনই না।
    Total Reply(0) Reply
  • AS Rana Chowdhury ২৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১:০৩ এএম says : 0
    ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাইনা। আপনার এই আগ বাড়িয়ে সাফাই সাক্ষী দেওয়াতেই প্রমান হয়, ডালমে কোচ কালা হ্যা। কাজেই এসব সাফাই সাক্ষীর কোন দরকার নাই
    Total Reply(0) Reply
  • শেখ ইয়াহইয়া ২৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১:০৪ এএম says : 0
    বিএনপি ঐক্যফ্রন্টের যারা নির্বাচিত হয়েছে তাদের শপথ নেওয়ার বেপারে সরকারের কোনো চাপ আছে বলে আমি মনে করিনা। যারাই নির্বচন করেছেন তাদের প্রচুর টাকা খরচ করতে হয়েছে এমন কি তারেক জিয়াকে ও টাকা দিতে হয়েছে। অতএব এই টাকা তুলতে হলে শপথ নেওয়া ছাড়া তাদের কোনো উপায় নেই। একদিকে শপথ না নেওয়াতে তারা সরকারী বেতন পাচ্ছেনা অন্য দিকে সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে ও বঞ্চিত হচ্ছে এই সব কিছু মিলেই তারা শপথ নিতেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Gazi Ikbul Mamun ২৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১:০৪ এএম says : 0
    মৃত্যুর ভয় সবাইর আছে। এই এমপিরা যদি শফত না নেয় তাহলে ফখরুল ছারা সব গুলোকে ঘুম করবে। আর প্রধানমন্ত্রির কথায় বুঝায় যায়। চাপ আচে নাকি নাই
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ