পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘আমি বৃষ্টিবিহীন বৈশাখী দিন’। সত্যিই এক খরতপ্ত রুক্ষ রুদ্র আবহাওয়ায় বৈশাখ মাস পড়েছে দ্বিতীয় সপ্তাহে। অসহনীয় ভ্যাপসা গা জ্বলা গরম। ভোর সকালে পূবাকাশে সূর্য উঁকি দিচ্ছে তপ্ত কড়াইয়ের মতো। দিনভর আগুন ঝড়িয়ে তীর্যক সূর্য ডোবা অবধি রোদের কড়া তেজ। ফ্যানের বাতাসেও আগুনের হল্কা। বাড়িঘর, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, দোকান-পাট, শিল্প-কারখানা কোথাও স্তস্তি মিলছে না।
দুপুররোদে সড়কের পিচ গলছে। রাতের বেলায়ও নেই স্বস্তি। লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় জনদুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সর্বত্র গরমে-ঘামে কাহিল মানুষজন প্রাণিকুল। শহর নগর গ্রাম সবখানেই হাঁসফাঁস অবস্থা। গতকাল বুধবার দিনের তাপমাত্রার পারদ ৩৭.৫ ডিগ্রি (রাঙ্গামাটি) আর প্রকৃত তাপানুভূতি ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (যশোরে) ছাড়িয়ে গেছে।
গরমে মানুষের বিশেষত কর্মজীবী দিনমজুর দরিদ্র জনগোষ্ঠির কর্মক্ষমতা ও উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। সর্বত্র মানুষের আকুতি আল্লাহ মেঘ দে পানি দে ছায়া দে। স্বস্তির বৃষ্টি চাই। কিন্তু বৃষ্টি নেই। স্কুল কলেজ মাদরাসার শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে পথচারীরা বরফ আর লেবু মেশানো শরবৎ, আইসক্রিম মুখে তুলে নিয়ে গলা ভেজানোর চেষ্টা করতে দেখা যায়।
কিন্তু রাস্তাঘাটের ধারে-পাশে বিক্রি হওয়া এসব পানীয় স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতি ডেকে আনছে একথা বলছেন চিকিৎসকগণ। তারা এহেন গরমের সময়ে শরীর সুস্থ রাখতে ঘন ঘন বিশুদ্ধ পানি, লেবুর শরবৎ পানের পরামর্শ দিয়েছেন।
আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, দেশজুড়ে তাপপ্রবাহ ক্রমেই বিস্তারের সম্ভাবনা রয়েছে। তাপদাহে বাড়ছেই বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধির প্রকোপ। হাসপাতাল ক্লিনিক ডাক্তারের চেম্বারে রোগীর ভিড় তাই বলছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ দেশের সমুদ্র উপক‚লীয় জনপদে অস্বাভাবিক তীব্র ধরনের এই গরমের কারণে দুর্যোগ বিশেষজ্ঞগণ বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের আলামত হিসেবে দেখছেন। কেননা সমুদ্র উপক‚লীয় অঞ্চলে তাপদাহ দুর্যোগের অশনি সঙ্কেত বহন করে। তাছাড়া চলতি এপ্রিল ও আগামী মে মাসে বঙ্গোপসাগরে একাধিক নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড় রূপ নেয়ার আশঙ্কা রয়েছে মর্মে দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে জানা গেছে।
‘এল নিনো’ অবস্থার বিরূপ প্রভাবে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এলোমেলো বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, শ্রীলংকাসহ বিস্তীর্ণ পুড়ছে খরার দহনে। ধান, গমসহ ফল-ফসল উৎপাদনে পড়ছে এর নেতিবাচক প্রভাব।
গতকাল রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা ৩৫ হলেও তাপানুভ‚তি ৩৮ ডিগ্রি অতিক্রম করে। চট্টগ্রামে তা ৩৭ ডিগ্রি, যশোরে ৪০ ডিগ্রি এবং ভারতের নয়াদিল্লী, রাজস্থান ও কলকাতায় ৪২ ডিগ্রিতে ছিল। আবহাওয়া পূর্বাভাস মতে, গরম ও খরার দহন আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকতে পারে। কালবৈশাখী ঝড়ের সাথে বিক্ষিপ্ত ও সাময়িক বর্ষণ ছাড়া আপাতত মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের তেমন সম্ভাবনা নেই।
স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক আবহাওয়া নেটওয়ার্ক সূত্রগুলো বলছে, দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে তাপদাহের তীব্রতা ও খরার ব্যাপকতা হতে পারে মারাত্মক ধরনের। ইতোমধ্যে মাটির নিচে মজুদ পানির স্তর শুকিয়ে গেছে। সর্বত্র বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট প্রকট। দূষিত পানি পানের কারণে রোগব্যাধির প্রকোপ দেখা দিয়েছে।
চলতি এপ্রিল মাসের পূর্বাভাসে বলা হয়, এ মাসে দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এ সময় তাপমাত্রার পারদ অতিক্রম করতে পারে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘর। এছাড়া দেশের অন্যত্র ১ থেকে ২টি মৃদু (৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সে.) থেকে মাঝারি (৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সে.) ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এপ্রিলে বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে ২টি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এরমধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।
আবহাওয়া-জলবায়ুর আন্তর্জাতিক আবহাওয়া নেটওয়ার্ক সূত্রগুলো জানায়, বাংলাদেশ এবং আশপাশ অঞ্চলে চলতি বছর টানা দুর্যোগের আলামত দেখা দিয়েছে। ভয়াবহ খরা, অসহনীয় তাপপ্রবাহ, অতিমাত্রায় বজ্রপাত, হঠাৎ অতিবৃষ্টির কারণে এলাকাওয়ারি বন্যা ও সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা থাকছে আগামী জুন মাস পর্যন্ত। কয়েক বছর বিরতি দিয়ে এ অঞ্চলে আবহাওয়ায় আবারো ‘এল নিনো’ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে বৈরী আবহাওয়ার প্রভাব পড়েছে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলজুড়ে। এর পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত আবহাওয়ামন্ডলে ‘নিরপেক্ষ’ অর্থাৎ ‘চরম ভাবাপন্ন নয়’ এমন একটি অবস্থা বিরাজ করছিল। ‘এল নিনো’ হচ্ছে বৃষ্টিপাতের আবহ রোধকারী আবহাওয়া-জলবায়ুর বিশেষ এক অবস্থা।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পানিসম্পদ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. রিয়াজ আখতার মল্লিক মনে করেন, ‘এল নিনো’ অবস্থা এবার ব্যাপক ও দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম। এরফলে আবহাওয়ায় সম্ভাব্য প্রভাব পড়বে এবং বৈরী অবস্থা বিরাজ করতে পারে। বৃষ্টিপাতে তারতম্য হতে পারে। বাড়তে পারে তাপমাত্রার পারদ। আগামী জুন মাস পর্যন্ত এর নেতিবাচক প্রভাব বজায় থাকতে পারে। এরজন্য সম্ভাব্য পূর্ব-প্রস্তুতি ও দুর্যোগ সতর্কতা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
৭২ ঘণ্টায় আরও বাড়বে তাপমাত্রা
সর্বোচ্চ সীতাকুন্ডে ৩৭.৮ ডিগ্রি সে.
সারাদেশেই দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রাতের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পারদ। গতকাল বুধবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সীতাকুন্ডে ৩৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৬.৭ এবং সর্বনিম্ন ২৫.৪ ডিগ্রি সে.। চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ ৩৬.৪, ময়মনসিংহে ৩৫.৬, সিলেটে ৩৬.৬, রাজশাহীতে ৩৭, রংপুরে ৩৪.৮, খুলনা ও বরিশালে ৩৬.৬, সৈকত নগরী কক্সবাজারে ৩৬.৫ ডিগ্রি সে.।
আজ (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজশাহী, পাবনা ও সৈয়দপুর অঞ্চলসহ চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা ও সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু তাপমাত্রা বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ফের কিছুটা বেড়ে যেতে পারে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় তাপমাত্রা আরও বেড়ে যেতে পারে। এর পরের ৫ দিনে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে পশ্চিমা লঘুচাপের একটি বর্ধিতাংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।