Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এখনও ক্ষত শুকায়নি আহত শ্রমিকদের

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ৬ বছর

সেলিম আহমেদ, সাভার থেকে | প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

আজ সাভারের আলোচিত রানা প্লাজা দুর্ঘটনার ৬ষ্ঠ বর্ষপূর্তি। দিনটি পালন উপলক্ষে রানা প্লাজার সামনে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিভিন্ন শ্রমিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো। ভবন ধসের এতো বছর পরও এখনও ক্ষত শুকায়নি আহত শ্রমিকদের। অনেকেই মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। সহায়-সম্বল বেচে চিকিৎসা করিয়ে বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। তাদের ক্ষোভ প্রথমে কিছু সাহায্য সহযোগিতা পেলেও এখন আর কেউ তাদের খোঁজ নেয় না।
শিলা বেগম (৩১) কাজ করতেন রানা প্লাজার ছয়তলার ইথার টেক্স কারখানায় অপারেটর পদে। প্রায় দুই বছর ধরে তিনি কারখানাটিকে কাজ করছিলেন। ভালই চলছিল তার সংসার। কিন্তু আচমকা রানা প্লাজা ধসে তার সব শেষ হয়ে যায়। ভবনের বিমের নিচে চাপা পড়েন তিনি। প্রায় ১৮ ঘণ্টা পর তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। প্রথমদিকে কিছু টাকা পেলেও সেই টাকায় তার চিকিৎসাও ঠিকমতো হয়নি। টাকার অভাবে সন্তানের লেখাপড়াও বন্ধের পথে। কোন রকম দু’মুঠো খেয়ে বেঁচে আছেন তিনি। তবে টাকার অভাবে এখন তার চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে।
মৃত্যু পথযাত্রী শ্রমিক রওশন আরা (৩৫)। কাজ করতেন ৬ তলার ইথার টেক্স কারখানায়। ভবন ধসে বিম চাপা পড়ে শরীরে বেঁধেছে মরণঘাতী রোগ ক্যানসার। প্যারালাইজড রিকশাচালক স্বামীর টাকায় চলছে কোনো মতে চিকিৎসা। টাকার অভাবে দুই সন্তানকে এতিমখানায় ভর্তি করেছেন তিনি। এখন ক্যামোথেরাপির ওপর নিয়ে বেঁচে আছেন।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, রানা প্লাজার ধসের বর্ষপূর্তি আসলে কিছু সাংবাদিকরা আসে। কিন্তু যাদের জন্য আজ আমাদের এ অবস্থা তারা কেউ আমাদের খোঁজ-খবর নেয় না। এনজিও কারিতাস একটা গরু দিতে চেয়েছিল কিন্তু আজও পর্যন্ত পাইনি। কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, যে কয়দিন বাঁচব ক্যামোথেরাপি দিয়ে বাঁচতে হবে।
ছালমা বেগম (২৮) কাজ করতেন ৮ম তলায় নিউ স্টাইল লিমিটেড কারখানায়। এক মাস ছিল তার চাকরির বয়স। কিন্তু দুর্ঘটনায় মেরুদন্ডের হাড় ভেঙে যায়। ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে তাকে উদ্ধার করা হয়। তিনিও টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে পারেনি বলে জানান।
নিলুফা ইয়াছমিন (৩০) ইথার টেক্স কারখানার শ্রমিক। কেবলমাত্র চাকরিতে যোগদান করেছিলেন তিনি। দুর্ঘটনায় মেরুদন্ড ও মাথায় আঘাত পান। তিনি বলেন, যে সামান্য টাকা পেয়েছি তা দিয়ে কয়েক দিনের চিকিৎসা খরচ হয়েছিল। এখন অর্থাভাবে চিকিৎসা করতে পারছি না। রানা প্লাজার ৮ম তলায় নিউ ওয়েভ স্টাইল লিমিটেড কারখানায় কোয়ালিটি ইন্সপেকশন পদে কাজ করতেন মাহমুদুল হাসান হৃদয় (৩২)।
পরিবার নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকতে পারবে সেই আসায় রানা প্লাজায় চাকরি নিয়েছিলেন। মাত্র ১৪ দিনের মাথায় ভবনটি ধসে পড়ে। ভবনের নিচে চাপা পড়ে সুখ-শান্তি। ধ্বংসস্তুপের নিচ থেকে উদ্ধারকর্মীরা ২০ ঘণ্টা পর তাকে উদ্ধার করে। তিনিও বর্তমানে অর্থকষ্টে দিনযাপন করছেন। তিনি বলেন, রানা প্লাজার আহত ৩শ’ শ্রমিক নিয়ে ‘সাভার রানা প্লাজা সারভাইভার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠন করেছি। সংগঠনটির সভাপতি তিনি নিজেই। তাদের সংগঠনের কোন পুঁজি নেই। একটি মাটির ব্যাংক তাদের পুঁজি।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে শ্রমিকরা কর্মস্থলে যোগ দেয়ার পরপরই সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশে রানা প্লাজা নামের বহুতল ভবনটি ধসে পড়ে। এ দুর্ঘটনায় ১১শ’ ৭৫ জন শ্রমিক নিহত এবং দুই হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়। যা বিশ্বের ইতিহাসে ৩য় বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ