পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামকে ঘিরে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকার ৬০টি উন্নয়ন প্রকল্প এগিয়ে চলছে। এসব প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করার তাগিদ দিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান। একই সাথে তিনি প্রকল্পের গুণগতমান অক্ষুন্ন রাখারও নির্দেশনা দেন। তার নেতৃত্বে সচিবদের উচ্চপর্যায়ের একটি দল চলমান উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শনে চট্টগ্রাম রয়েছেন। তিনদিনের সফরের গতকাল সোমবার দ্বিতীয় দিনে তারা মীরসরাইতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর পরিদর্শন করেন। প্রকল্পের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন মুখ্য সচিব। মীরসরাই, সীতাকুন্ড ও ফেনীর প্রায় ৩০ হাজার একর জমিতে গড়ে উঠছে দেশের সর্ববৃহৎ এ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। এ মেগাপ্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণ এখন শেষ পর্যায়ে। ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। চলছে পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহের কাজ। এ শিল্পনগরে ১০০ একর করে মোট ২০০ একর জমির ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে ‘শেখ হাসিনা সরোবর’ নামে দুটি হ্রদ।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বড়তাকিয়া থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর পর্যন্ত চার লেনবিশিষ্ট ২৯ কিলোমিটার সড়ক ‘শেখ হাসিনা সরণি’র কাজও দ্রুতও এগিয়ে চলছে। নজিবুর রহমান এ তিনটি প্রকল্প নির্মাণেও গুণগতমান অক্ষুন্ন রাখার নির্দেশনা দেন। তিনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে বলেন। প্রতিনিধি দলের সদস্য চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে সচিবদের টিম বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর পরিদর্শন করেন। প্রতিনিধি দলের নেতা নজিবুর রহমান শিল্পনগরীর সার্বিক অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তবে তিনি নির্ধারিত সময়ে গুণগতমান অক্ষুন্ন রেখে প্রকল্পের কাজ শেষ করার তাগিদ দেন। প্রকল্প এলাকার নিরাপত্তা বাড়াতে পুলিশ মোতায়েনেরও পরামর্শ দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব নিজের হাতেই নিয়েছেন। টানা তিন মেয়াদে তিনি ক্ষমতায়। বিগত প্রায় এক যুগে চট্টগ্রামের উন্নয়নে ব্যাপক উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েক হাজার কোটি টাকার বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। বেশ কয়েকটি মেগাপ্রকল্পসহ ৬০টি প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। প্রকল্পের বিষয়ে নিয়মিত তদারক এবং খোঁজখবর নেন প্রধানমন্ত্রী। তারই অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই নজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সচিবদের একটি টিম চট্টগ্রাম আসেন। প্রশাসনের কর্মকর্তারা এ ঘটনাকে নজিরবিহীন উদ্যোগ উল্লেখ করে বলেছেন, এটি চট্টগ্রামের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতার বহিঃপ্রকাশ।
রোববার সকালে চট্টগ্রামে এসেই সার্কিট হাউসে এ অঞ্চলের প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-এসডিজি শীর্ষক এক কর্মশালায় যোগ দেন তারা। এরপর চট্টগ্রাম বন্দরের এ যাবৎকালের সর্ববৃহৎ প্রকল্প বে-টার্মিনাল প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে যান সচিবগণ। সেখানে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল জুলফিকার আজিজসহ বন্দরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বেটার্মিনালের ভ‚মি অধিগ্রহণ চলছে। বন্দরের উন্নয়নে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকায় পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল ও পিপিপির আওতায় তিন হাজার কোটি টাকায় লালদিয়ায় একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণে প্রকল্পও হাতে নেওয়া হয়েছে বলে মুখ্য সবিচকে জানান বন্দর চেয়ারম্যান। এরপর সচিবগণ অন্যতম মেগাপ্রকল্প দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল কর্ণফুলী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল পরিদর্শন করেন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি এ প্রকল্পের খনন কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। এরপর সচিবগণ চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মেগাপ্রকল্প আউটার রিং রোড ও বিমানবন্দর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পতেঙ্গা সৈকতকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্রের অগ্রগতি সরেজমিন পরিদর্শন করেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন জানান, সচিবগণ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনকালে প্রকল্পের অগ্রগতি এবং সমস্যা নিয়ে প্রকল্প কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেন। কিছু কিছু সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান দেন তারা। যেসব প্রকল্প সরেজমিন পরিদর্শন করা যায়নি সেসকল প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়েও পর্যালোচনা করেছেন সচিবগণ। তারা আজ মঙ্গলবার সুবর্ণ এক্সপ্রেসযোগে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন। জেলা প্রশাসক জানান, রেলে সেবার মান সরেজমিন পরিদর্শনের পাশাপাশি ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হাইস্পিড ট্রেন, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন প্রকল্পসহ রেলের উন্নয়ন প্রকল্প সম্পর্কেও দিক নির্দেশনা দেবেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব।
এদিকে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে বিভাগীয় কমিশনারের উদ্যোগে আয়োজিত কর্মশালায় চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলার জেলা প্রশাসক ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালকগণ উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান প্রকল্প পরিচালকদেরও দিক-নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চল উন্নয়ন বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকাকালে দেখেছি, এখানকার সমুদ্র বন্দরসহ অর্থনৈতিক কর্মকান্ড দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখছে। এসডিজি অর্জনেও চট্টগ্রাম অনেকদূর এগিয়ে গেছে।
বিদেশি সংস্থাগুলো দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিগত ১০ বছরে সারাদেশে সরকারের বড়-ছোট অনেক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড সম্পন্ন হয়েছে। বেশকিছু প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। সেগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তদারকি করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সাথে আছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের সচিব ফয়েজ আহম্মদ, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আলকামা সিদ্দিকী (ভারপ্রাপ্ত সচিব), পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান খান কবির, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ আতিকুল হক, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ সাইদুল ইসলাম এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ আখতার হোসেন।
জলবায়ু পরিবর্তন ও রোহিঙ্গা এসডিজি অর্জনে চ্যালেঞ্জ
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরলস প্রচেষ্টায় ইতোপূর্বে এমডিজিতে বাংলাদেশের অর্জন সারাবিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমান বলেছেন, এ অর্জন প্রত্যাশা বাড়িয়ে দিয়েছে। সকলের সম্মিলিত উদ্যোগে সরকারের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখা গেলে আগামীতে এসডিজির সব লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। এসডিজি অর্জনে জলবায়ু পরিবর্তন ও রোহিঙ্গা ইস্যু অন্যতম সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে নতুন ১১ লাখ রোহিঙ্গার আশ্রয়ও একটি বড় বাধা। রোহিঙ্গা ও জলবায়ু সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক স¤প্রদায় ভাবছে। চলতি বছর সেপ্টেম্বরে সমস্যা দুটি সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন হবে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা যোগ দেবেন। আশা করছি ঐ সম্মেলন থেকে কার্যকর সমাধান বেরিয়ে আসবে। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে ‘স্থানীয় পর্যায়ে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়ন’ বিষয়ক দিনব্যাপী কর্মশালায় তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিটের (জিআইইউ) সহযোগিতায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার অফিস কর্মশালার আয়োজন করেন। বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে কর্মশালার প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিটের (জিআইইউ) মহাপরিচালক মো. আশরাফ উদ্দিন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জিআইইউর পরিচালক মোঃ আলী নেওয়াজ রাসেল। এতে ১১ জেলার ডিসিসহ মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।