পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রযুক্তির উৎকর্ষের সাথে সাথে দেশে সাইবার অপরাধ বেড়ে চলেছে। রাজধানী ছাড়াও প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে সাইবার অপরাধের ঘটনা। প্রতি ২০ সেকেন্ডে একটি করে সাইবার অপরাধ ঘটছে। পুলিশসহ সরকারি সংশ্লিষ্ট সেলে প্রতিদিন জমা পড়ছে শত শত অভিযোগ। ভুক্তভোগীদের বেশিরভাগই নারী। এর পরেই রয়েছে তরুণ ও যুবকদের সংখ্যা। বিভিন্ন সময়ে সেনা কর্মকর্তাসহ অনেক উন্নত পেশার লোকদেরও সাইবার অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। সাইবার অপরাধ দমনে সরকার বর্তমানে অনেক সোচ্চার ও জোরালোভাবে কার্যক্রম শুরু করেছে। যদিও এসব অভিযোগে বিচার ও শাস্তির হার খুবই কম। যার কারণে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও লোকলজ্জা, ভয়-ভীতি তথা হয়রানির ভয়ে অভিযোগও করেন না। এছাড়া স্বচ্ছ ধারণা না থাকা ও প্রতিকার পেতে অধিক সময়ক্ষেপণ হওয়ায় অভিযোগী অনীহা বেশি। সাধারণত ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, গুগল, স্কাইপ- এ ভুয়া আইডি খুলে বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল ও ব্লগে মিথ্যা ও মানহানিকর তথ্য প্রচার, অশ্লীল ছবি ও ভিডিও আপলোড এবং মেসেজ পাঠিয়ে প্রতারণার ঘটনাগুলোই মোটা দাগে সাইবার অপরাধ হিসেবে পরিচিত।
জানা যায়, দেশে ১৩ ধরনের সাইবার অপরাধের ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে- পারিবারিক বিদ্বেষ সৃষ্টি, স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া, বন্ধু-বান্ধবের মধ্যে বিরোধ তৈরি, উগ্র ও বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য প্রচার, ইউটিউবে অন্তরঙ্গ ভিডিও ও ছবি আপলোড, ফেক অ্যাকাউন্ট তৈরি, পাসওয়ার্ড বা গোপন নম্বর অনুমান করে আইডি হ্যাক, মোবাইল ব্যাংকিং, ই-কমার্স, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি, অনলাইন এমএলএম (মাল্টি লেভেল মার্কেটিং), অনলাইনে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও অনলাইন গ্যাম্বলিং (জুয়া)।
দেশে সাইবার অপরাধ নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এরমধ্যে পুলিশ সদর দফতরের লফুল ইন্টারসেপশন সেল (এলআইসি), কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল (সিসিটিসি) ইউনিটের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগ, অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ সেন্টার, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাইবার অপরাধ তদন্তবিষয়ক সেল, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের সাইবার হেল্প ডেস্ক ও ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি)।
সাইবার সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের সাইবার হেল্প ডেস্ক ও ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) এবং পুলিশের পাঁচটি ইউনিটে সাইবার অপরাধ নিয়ে প্রতিদিন শত শত অভিযোগ জমা পড়ছে।
এক নারীকে অর্ধ উলঙ্গ অবস্থায় শরীরের নিম্নাংশে ট্যাট্যু আঁকাসহ নানা অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়ায় গত ১৬ এপ্রিল তরিকুল ইসলাম বাদশাহ ওরফে বাদশা ট্যাট্যু নামে একজনকে গ্রেফতার করে ডিএমপির সাইবার নিরাপত্তা ও অপরাধ দমন বিভাগ।
ভিডিওটি ভাইরাল হলে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ভিডিওতে দেখা গেছে, এক নারীর অর্ধ উলঙ্গ শরীরের নিম্নাংশে একজন পুরুষ ট্যাট্যু আঁকাসহ হাত দ্বারা ম্যাসেজ করছে। এছাড়া বাংলায় নানা অশ্লীল মন্তব্য করে তামাশা করছিল। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে রমনা থানায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়।
ভুয়া ব্যাংকার সেজে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করে অন্তরঙ্গ ছবি ধারণ করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ায় সিলেটের হবিগঞ্জে চম্পা বণিক (২২) নামে এক কলেজছাত্রী আত্মহত্যা করেছেন। গত ২ এপ্রিল বিকেলে নিজ ঘরে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় ওই ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় প্রধান আসামি দিপু ঘোষ ওরফে বাঁধন (২৫) ও তাঁর বড় ভাই যিশু ঘোষকে (৩০) গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা দু’জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে।
অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি প্রকাশ করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করায় গত ৭ মার্চ সিরাজগঞ্জের তাড়াশে মুক্তি রানী (২৫) নামের এক স্কুল শিক্ষিকা আত্মহত্যা করেছেন। মুক্তি রানী তাড়াশ উপজেলার তালম ইউনিয়নের গুল্টা গ্রামের অতুল খার স্ত্রী ও বস্তুল কারিতাস স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, পাশের গ্রামের ক্যাবল ব্যবসায়ী আব্দুল হামিদের সঙ্গে মুক্তি রাণীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একসময় তা শারীরিক সম্পর্কে গড়ায়। পরে আব্দুল হামিদ মোবাইল ফোনে মুক্তির নগ্ন ছবি তুলে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। পরে স্কুল শিক্ষিকা একটি চিঠি লিখে ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করেন।
কিছুদিন আগে ফেসবুকে এসএসসি ২০০৪ ও এইসএসসি ২০০৬ গ্রুপে ঢুকে ৬ মহিলাকে বন্ধু বানিয়ে তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় একব্যক্তি। পরে তাদের ছবির সাথে অশ্লীল ছবির অংশ সংযুক্ত করে নামে বেনামে বিভিন্ন ফেইক পেইজে পোস্ট করে তাদের ব্ল্যাকইমেইলিং করা হয়। ভুক্তভোগীরা পুলিশের কাছে অভিযোগ করলে সাইবার ক্রাইম ইউনিট তাদেরকে আটক করে।
বিটিআরসি’র তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯ কোটি ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে ৭০ ভাগই সাইবার অপরাধের ঝুঁকিতে আছেন। ব্যবহারকারীদের মধ্যে ২০ ভাগ কোনও না কোনোভাবে সাইবার অপরাধের সঙ্গে জড়িত। মাত্র ১০ ভাগ ব্যবহারকারী সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন। একই তথ্যানুযায়ী, দেশে বর্তমানে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি। আর সাইবার অপরাধের ৭৫ ভাগ অভিযোগই ফেসবুককেন্দ্রীক। ইন্টারনেটের মাধ্যমে হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হওয়া ৪৯ শতাংশই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী।
শুধু ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছেই সাইবার অপরাধ নিয়ে বছরে অভিযোগ জমা পড়ে ২০ হাজারও বেশি। এর মধ্যে মহানগর পুলিশের ‘হ্যালো সিটি’ অ্যাপসের মাধ্যমেই অভিযোগ জমা পড়ে ৬ হাজারেও বেশি। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের সাইবার হেল্প ডেস্কেও বছরে ১০ হাজারের বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে।
গত মার্চে গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক তথ্যে জানা যায়, গত ৬ বছরে সাইবার অপরাধের ঘটনায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে তিন হাজার ৬৫৯টি। এর মধ্যে সাইবার ট্রাইব্যুনালে গেছে এক হাজার ৫৭৫টি মামলা। নিষ্পত্তি হয়েছে ৫২২টির। মাত্র ২৫টি মামলায় আসামিদের সাজা হয়েছে। পুলিশের ক্রাইম ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (সিডিএমএস) পরিসংখ্যান ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
পুলিশের ক্রাইম ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (সিডিএমএস) পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৩ সালে ৩৫টি ও ২০১৪ সালে ৬৫টি মামলা হয় সারাদেশে। ২০১৪ থেকে ২০১৫ সালে মামলা হয় ৫৯৭টি যার মধ্যে ১৩৭টি ঢাকায়। ২০১৬ সালে সারাদেশে মামলা হয় ৮৭৯টি যার মধ্যে ঢাকায় ২০৬টি। ২০১৭ সালে মামলা হয় ১ হাজার ২৮টি। এর মধ্যে ঢাকায় ২৩৬টি। ২০১৮ সালে মামলা হয় ১ হাজার ৫৫টি যার মধ্যে ৩৩৩টি ঢাকায়। তথ্য বলছে, ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালে শুধু ঢাকায় মামলা হয়েছে ৯১২টি।
অপরাধের শিকার হওয়াদের মধ্যে- শতকরা ৩৪ ভাগের বয়স ১৯ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। ৩১ ভাগের বয়স ২৬ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। ২৭ ভাগের বয়স ৩৬ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে। ৬ ভাগের বয়স শূন্য থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। আর দুই ভাগের বয়স ৫৫ বছরের বেশি। পরিসংখ্যান বলছে, ক্ষতিগ্রস্তদের ৫৩ ভাগ নারী, পুরুষ ৪৭ ভাগ। ২৩ থেকে ২৫ বছর বয়সী নারীরাই সবচেয়ে বেশি সাইবার অপরাধের শিকার হন।
সাইবার অপরাধসহ অন্যান্য অপরাধের বিষয়ে অবহিতকরণে সবকারের তরফ থেকে নানান ই-সেবা চালু করা হয়েছে। এরমধ্যে- ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সার্ভিস সেল সেন্টার ৯৯৯, ক্রাইম ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিডিএমএস), সিটিজেন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিআইএমএস), আইজিপি কনপ্লেইন সেল ও বিডি পুলিশ হেল্প লাইনসহ বেশ কিছু বড় ই-সেবা ইতোমধ্যে আলাদাভাবে সেবা দিচ্ছে।
সাইবার অপরাধের বিচারের জন্য ২০১৩ সালের ২৮ জুলাই সাইবার ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠিত হয়। ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম শামীম বলেন, প্রতিষ্ঠার পর সারাদেশে তিন হাজার ৬৫৯টি মামলার মধ্যে বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনালে গেছে ১৫৭৫টি। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৫২২টি। ২৫টি মামলায় অপরাধ প্রমাণ হওয়ায় আসামিদের সাজা হয়েছে। তদন্তে ত্রুটি, মামলার একপর্যায়ে বাদীর অনীহা, আদালতে সাক্ষীর হাজির না হওয়া, বাদী-বিবাদীর মধ্যে আপস ইত্যাদি কারণে মামলা খারিজ হয়ে যাচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।
পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, অপরাধের ধরন ও ধাঁচের ভিন্নতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। সাইবার অপরাধ মোকাবিলার জন্য পুলিশের প্রতিটি ইউনিটে একটি করে সাইবার মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। এছাড়া পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে সর্বশেষ প্রযুক্তির সংযোজনসহ কর্মকর্তাদের বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।
সাইবার অপরাধ থেকে বেঁচে থাকতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের মধ্যে- অচেনা, অপরিচিত কারো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহন না করা, সন্দেহজনক লিংকে ক্লিক না করা, শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি ও সংরক্ষণ, ব্যাংকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্ডের তথ্য ও পাসওয়ার্ড শেয়ার না করা। এছাড়া ভুক্তভোগী হলে যতদ্রুত সম্ভব নিকটস্থ থানায় অভিযোগ করে অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে আলামতের স্ক্রিনশট, লিংক, অডিও/ভিডিও ফাইল অথবা রিলেটেড ডকুমেন্টস সংরক্ষণ করে সেগুলো নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে সরবরাহ করা।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।