পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘স্যার আমাকে জেলখানায় রাখার ব্যবস্থা করেন, প্রাণটা অন্তত বাঁচবে। না হলে ওরা আমাকে জানে মেরে ফেলবে।’ ৫০ বিজিবির অধিনায়কের কাছে এ অনুনয় ‘কালোবাজারী চক্র’ (অভিযুক্ত ও বিজিবির মতে) দ্বারা আক্রান্ত বর্তমানে পুলিশের হাতে আটক মরণাপন্ন সীমান্তবাসী জিয়াউরের। হাতে হ্যান্ডকাফ পরে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মুমূর্ষু জিয়াউর ও তার স্ত্রী জানান, বিজিবি-গ্রামবাসী মামলায় বিজিবির পক্ষে সাক্ষী দেয়ায় তিনি ও তার পরিবার বারবার আক্রান্ত হচ্ছেন। ‘আমার বাড়ির গেইট দরজা-জানালা, কাপড় চোপড় অর্থকড়ি সব কিছু লুটপাট করছে এই দুর্বৃত্ত দল। কিন্তু কারো কাছেই আমি কোনো সুবিচার পাচ্ছি না।’ গত ১২ এপ্রিল তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় প্রতিবেশি ও পুলিশ তাকে উদ্ধার করে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে তাকে ভর্তি করে। আগের দিন তার গেইট ভেঙে বাড়ির জানালা দরজাসহ সব কিছু লুটপাট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। প্রাণভয়ে গ্রামছাড়া জিয়াউর।
ঘটনার কারণ জানতে সরেজমিনে গেলে, সেই ভয়ঙ্কর রাতের বর্ণনা দেন জিয়াউরের স্বজন ও প্রতিবেশিরা। গত ১০ এপ্রিল বিজিবির বিরুদ্ধে গ্রামবাসীর করা একটি মামলা হরিপুর আমলি আদালত খারিজ করে দেয়। এরপর ১১ এপ্রিল রাতে কিছু চোরাকারবারী একত্রিত হয়ে তার বাড়িতে হামলা করলে জিয়াউর ও তার পরিবার প্রাণ ভয়ে বাসা থেকে পালিয়ে যায়। তখন কিছু চোরাকারবারী তার ঘরে ঢুকে ২টি আলমারী ভেঙে নগদ ৮০ হাজার টাকা, আনুমানিক ৪ ভরি ওজনের বিভিন্ন স্বর্ণালঙ্কার ও দামি মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এছাড়া তার ঘরের দেয়াল, জানালা-দরজাসহ ব্যবহারিক জিনিসপত্র ভেঙে ফেলে। এ প্রসঙ্গে প্রতিবেশি মেজার বলেন, আমরা আক্রমণকারীদের বুঝিয়েছি, তোমরা এভাবে খুনোখুনি করো না, আইন নিজের হাতে তুলে নিও না, প্রয়োজনে আইনের কাছে যাও। উত্তরে তারা মুখ খারাপ করে এবং বেপরোয়া ভাঙচুর ও লুটতরাজ চালায়। দরজা-জানালা, গেইট ভাঙচুর ও লুটের পর জিয়াউরের স্ত্রী থানায় মামলা করতে গেলে দুর্বৃত্তচক্র তার শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করে ও তাকে বাধা দেয় বলে অভিযোগ জিয়াউরের। উপরন্তু তার পরের রাতেই তার বাড়িতে হামলা হয়। প্রতিবেশি জাহিরুল, সায়রা ও সালেহা জানান, যেভাবে জিয়াউরকে মারধর করা হয়, তাতে জিয়াউরের বেঁচে থাকাটাই ছিল আশ্চর্যের ব্যাপার।
হরিপুর উপজেলার বহরমপুর এলাকার জামুন মশালডাঙ্গী গ্রামের মো. রফিকের ছেলে মো. জিয়াউর রহমানকে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী চোরাকারবারী বিভিন্নভাবে হয়রানি ও প্রতিনিয়ত প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছে। পরদিন ১২ এপ্রিল তাদের ওপর হামলা ও মালামাল লুটের ব্যাপারে গ্রামের লোকজনের কাছে গিয়ে সাহায্য প্রার্থনা করে এবং গ্রাম্য সালিশের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানায়।
হামলাকারীরা প্রভাবশালী চোরাকারবারী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রাম্য সালিশের কোনো সম্ভাবনা না দেখলে একান্ত নিরুপায় হয়ে সন্ধ্যায় মো. জিয়াউর রহমানের স্ত্রী হরিপুর থানায় মামলা দায়ের করতে রওনা দেন। পথিমধ্যে চোরাকারবারীদের সাঙ্গপাঙ্গরা জিয়াউরের স্ত্রীকে বাধা দেয় এবং শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে।
অপরদিকে মো. জিয়াউর রহমানকে বাড়িতে একা পেয়ে চোরাকারবারীরা ব্যাপক মারধর করে মারাত্মক আহত করে। পূর্বে জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে চোরাকারবারীরা হরিপুর থানায় মিথ্যা মামলা দায়ের করেছিল। উক্ত মামলার আসামী হিসেবে চোরকারবারীরা আহত অবস্থায় তাকে ধরে নিয়ে হরিপুর থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করে। বর্তমানে জিয়াউর রহমান পুলিশের হেফাজতে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে মৃত্যুর মুখোমুখি।
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও ৫০ বিজিবি অধিনায়ক লে কর্নেল এসএমএন সামিউল্লাহ চৌধুরী বলেন, জিয়াউর আমাদের মামলার সাক্ষী এবং জেলার কিছু গুরুত্বপূর্ণ সীমান্তে চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবির সহায়তাকারী। তাই তার ওপর হামলাটি অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি স্বীকার করেন, জিয়াউর তাকে বলেছে, স্যার বাইরে নিরাপত্তা নাই, আমাকে কারাগারে রাখার ব্যবস্থা করেন।
বিষয়টি নিয়ে মতামত চাইলে আবুল হোসেন সরকার মহাবিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক, নাট্যকার ও সাংবাদিক খোদা বক্শ ডাবলু বলেন, এক রকমের মৃত্যুর ঘেরাটোপে জিয়াউরসহ সীমান্তবাসীদের জীবন বন্দি। এরাই জীবন বাঁচানোর তাগিদে বিএসএফর হাতে মারা যাচ্ছেন, এরাই সেদিন বিজিবির সাথে সংঘর্ষে মারা গেলেন, এঁরাই নিজেদের মধ্যেও সংঘর্ষে মরেন। রাষ্ট্র তাদের শান্তির জীবন দিতে ব্যর্থ। অথচ যাদের ঘুঁটি হিসেবে কাজ করতে গিয়ে সীমান্তবাসী অপরাধচক্রে জড়িয়ে পড়েন, তারা থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
উল্লেখ্য, গত ১২ ফেব্রুয়ারি ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে বিজিবি-গ্রামবাসীর মধ্যে ভারতীয় গরু সন্দেহে জব্দ করা নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় ৩ জন গ্রামবাসী নিহত হয়। প্রথমে বিজিবির পক্ষ থেকে হরিপুর থানায় ২টি মামলা দায়ের করা হয়। পরে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে বিজিবির বিরুদ্ধে ঠাকুরগাঁও হরিপুর আমলী আদালতে ৩টি অভিযোগ দায়ের করা হয়। বিজিবির বিরুদ্ধে করা মামলারই প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী ছিলেন জিয়াউর। গত ১১ এপ্রিল মামলাটি হরিপুর আমলী আদালতে খারিজ হয়ে গেলে পরদিনই তার ওপর হামলা হয়।
এ ব্যাপারে হরিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিরুজ্জামান বলেন, জিয়াউরের নামে ২টি ওয়ারেন্ট ছিল, সেজন্য তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার ওপর হামলা সম্পর্কে তিনি বলেন, অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।