পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রাচীন ও মোগল আমলের অসংখ্য মসজিদ কুমিল্লার ইতিহাস ঐতিহ্যকে মহিমান্বিত করেছে। বর্তমান কুমিল্লা অর্থাৎ পূর্বতন ত্রিপুরা জেলায় ত্রয়োদশ শতাব্দীর দিকে মুসলমানদের আগমন ঘটে। চতুর্দশ শতাব্দীতে এ জেলায় তুর্কী মুসলমানদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। মুসলিম অধিকার প্রতিষ্ঠার সাথে সাথেই এ জেলায় ব্যাপকভাবে ইসলাম প্রচারের কাজ শুরু হয়। সুলতানি আমল, পাঠান ও বার ভূঁইয়াদের আমল এবং মোগল আমল ছিল এ জেলার মুসলমান শাসনামল। মুসলমান শাসনামলের মধ্যে কুমিল্লায় মোগল আমলে নির্মিত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সংখ্যা সবচেয়ে বেশী।
পাক-ভারত উপমহাদেশের প্রাচীন মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম শাহ সুজা মসজিদ। কুমিল্লা শহরের গোমতী নদীর কুল ঘেঁষে মোগলটুলী-গাংচর এলাকায় দাড়িয়ে আছে মোগল স্থাপত্য শিল্পের অপূর্ব নিদর্শন শাহ সুজা মসজিদ। ১৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট শাহজাহানের আমলে শাহ সুজা এটি নির্মাণ করেন। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৫৮ ফুট এবং প্রস্থ ২২ ফুট। উত্তর দক্ষিণে লম্বা মসজিদের দেয়ালের পুরুত্ব ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি। বারান্দা ২৫ ফুট। মসজিদের মূল গম্বুজ ৩টি। ছোট বড় মিনার রয়েছে ১৮টি। মসজিদের সামনের সীমানায় ২টি করে বড় মিনার আছে। ২২ ফুট করে ২টি কক্ষের উপর আছে ২টি করে আরো ৪টি মিনার। বর্তমানে শাহ সুজা মসজিদের পুরনো স্থাপত্য শৈলী ঠিক রেখে আধুনিক কারুকাজের সমন্বয়ে সামনের অংশ স¤প্রসারণ করা হয়েছে। কুমিল্লার অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মতো দেশি বিদেশী পর্যটকদের কাছে শাহ সুজা মসজিদও মোগল স্থাপত্যের প্রাচীন কীর্তি।
কুমিল্লা নগরীর ছোটরা এলাকায় অবস্থিত প্রায় দু’শতাধিক বছরের প্রাচীন জংলীবিবির মসজিদটিতে তিনদিক থেকে যাওয়া যায়। জজকোর্ট চৌমুহনীর পশ্চিম দিকের রাস্তা দিয়ে, মগবাড়ি চৌহমুনী পার হয়ে দক্ষিণ দিকের গলি পথে এবং জেলখানার পূর্বদিকের সড়ক হয়ে গেলেও মসজিদটি দেখা যায়। ১৮০৭ খ্রীষ্টাব্দে মসজিদটি ছোটরা এলাকায় নির্মিত হয়। কুমিল্লার সেটেলমেন্ট কালেক্টর আলেকজান্ডারের বাঙালি সহধর্মিনী ছিলেন মাসুমা খাতুন ওরফে জংলীবিবি। আলেকজান্ডার তার জীবদ্দশায় তার স্ত্রী জংলীবিবিকে বেশ পরিমাণ সম্পদ দিয়ে যান। ওই সম্পদের কিছু অংশে তিনি মসজিদটি নির্মাণ করেন। তার নামানুসারেই মসজিদটির নামকরণ হয়।
কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার ভাউকসার গ্রামে সৈয়দ গাজীউল হক চৌধুরী তার সহধর্মিনী নারী শিক্ষার অগ্রদূত মহিয়সী নারী নবাব ফয়েজুন্নেছার অনুপ্রেরণায় ১৯০২ সালে নিজ গ্রামের চৌধুরী বাড়ির পূর্বপার্শ্বে অপূর্ব কারুকাজ খচিত তিন গম্বুজ বিশিষ্ট একটি মনোরম মসজিদ নির্মাণ করেন। যা ভাউকসার পূর্বপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ নামে পরিচিত। ভারতীয় নির্মাণ শ্রমিক দ্বারা তৈরি মনোরম স্থাপত্য শৈলীর এ মসজিদটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছিল চুন শুড়কি। মসজিদের ভেতরে গম্বুজের পুরো অংশ জুড়ে রয়েছে নানা রকমের নকশা। দেশি বিদেশি পর্যটকরা ভাউকসার গ্রামের এ অপূর্ব মসজিদটি দেখতে আসেন।
এছাড়াও সপ্তদশ-অষ্টাদশ শতাব্দীতে নির্মিত আরও কিছু মসজিদ রয়েছে কুমিল্লায়। এর মধ্যে ১৬৫৯ খ্রীষ্টাব্দে নির্মিত লাকসামের পশ্চিমগাঁয়ের কাজীর মসজিদ, ১৬৮২ খ্রীষ্টাব্দে লালমাই পাহাড়ের চূড়ায় নির্মিত আদিনামুড়া মসজিদ, বুড়িচং উপজেলায় ১৭১৬ খ্রীষ্টাব্দে নির্মিত ভারেল্লা মসজিদ, লাকসামের বাইশগাঁও ইউনিয়নের শরীফপুর গ্রামে একটি জলাশয় পাড়ে সম্রাট আওরঙ্গজেবের রাজত্বকালে ১৭০৬ খ্রীষ্টাব্দে নির্মিত বড় শরীফপুর মসজিদ এবং বরুড়া উপজেলায় ১৭৭৫ খ্রীষ্টাব্দে নির্মিত চিতড্ডার মসজিদ উল্লেখযোগ্য। কালের বিবর্তনে এসব মসজিদের আগের স্থাপত্য শৈলীর রূপ পরিবর্তন করে কোনটি আধুনিকায়ন করা হয়েছে, কোনটির কাজ চলছে। এর মধ্যে ১৭৫২ খ্রীষ্টাব্দে নির্মিত কুমিল্লা শহরের চকবাজারে আমির মোহাম্মদ জামে মসজিদের আধুনিকায়ন কাজ চলছে।
কুমিল্লা জেলা ইমাম সমিতির সভাপতি আলহাজ হাফেজ মাওলানা আহসানুল করীম আল আযহারি বলেন, প্রাচীন ও মোগল আমলের কুমিল্লায় নির্মিত অসংখ্য মসজিদ ও মুসলমানদের অনেক কীর্তি রয়েছে। এগুলো যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষন করে টিকিয়ে রাখা দরকার আগামী প্রজন্মের জন্য। জেলার বিভিন্ন স্থানে এ ধরণের প্রাচীন মসজিদ সংস্কার করে অত্যাধুনিকভাবে পুন:নির্মাণ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে মসজিদ কমিটি বা দায়িত্বশীল যারা রয়েছেন তাদেরকে মসজিদের প্রাচীন স্থাপত্য শৈলীর ডিজাইন ঠিক রেখে কাজটি সম্পন্ন করলে ইতিহাসটা স্মৃতি না হয়ে চোখের সামনেই বেঁচে থাকবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।