পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাচেষ্টার ঘটনায় জড়িত আলোচিত সেই শম্পা ওরফে চম্পাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গতকাল সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নুসরাতের বাবা এ কে এম মুসা এবং মা শিরীনা আক্তার তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যাকারীদের কেউই আইনের হাত থেকে রেহাই পাবে না। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সামনে অঝোরে কাঁদেন নুসরাতের মা শিরীনা আক্তার।
এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার চার নম্বর আসামি কাউন্সিলর মাকসুদ আলমকে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। সোমবার দুপুরে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শরাফউদ্দিন আহমেদের আদালত এ আদেশ দেন।
অন্যদিকে হত্যাকান্ডের ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আরও ১২ জন জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করে রোববার মামলার অন্যতম দুই সন্দেহভাজন আসামী নুরুদ্দিন ও শাহাদত হোসেন শামীম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। জবানবন্দীতে তারা সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিনের নামও উল্লেখ করেছেন। বাকিদের বেশিরভাগই ওই মাদরাসার আলিম ও ফাজিল শ্রেণির শিক্ষার্থী। ঘটনায় জড়িত ছিলেন মাদরাসার কয়েকজন শিক্ষকও। জড়িতদের ফাঁসির দাবি জানিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে সোনাগাজীর রাজনৈতিক ও সামাজিকসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, রাফি হত্যাচেষ্টার ঘটনায় আলোচিত সেই শম্পা ওরফে চম্পাকে ফেনী থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে কখন গ্রেফতার করা হয়েছে সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।
বড় ভাইকে চাকরি দিলেন প্রধানমন্ত্রী
অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানকে চাকরি দিলেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল নুসরাতের পরিবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে নোমানের হাতে ব্যাংকের নিয়োগপত্র তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্নাতকের ফলাফল প্রকাশের পর এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ট্্েরইনি অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার পদে যোগ দেবেন নোমান। সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে প্রতিবাদ করে নুসরাত এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। প্রধানমন্ত্রী নুসরাতের এই মর্মান্তিক মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান›।
প্রেস সচিব আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী তাদের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এ সময় নুসরাতের বাবা-মা এই দুঃসময়ে তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যাকারীদের কেউই আইনের হাত থেকে রেহাই পাবে না।
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নোমানকে এনবিআর গ্লোবাল ব্যাংকে চাকরি দেয়া হবে। নুসরাতের পরিবারে প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। আমি নুসরাতের পরিবার এবং তার ছোট ভাইয়ের লেখাপড়া ও চাকরির বিষয়ে খেয়াল রাখবো।
আদালতে জবানবন্দী
রোববার মামলার অন্যতম দুই সন্দেহভাজন আসামী নুরুদ্দিন ও শাহাদত হোসেন শামীম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। জবানবন্দীতে সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিনসহ ১২জনের নাম রয়েছে। বাকিদের বেশিরভাগই ওই মাদরাসার আলিম ও ফাজিল শ্রেণির শিক্ষার্থী। ঘটনায় জড়িত ছিলেন মাদরাসার কয়েকজন শিক্ষকও। দীর্ঘ ৯ ঘন্টা ধরে ফেনী জেলা ও দায়রা জজ আদালদের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ জাকির হোসাইন ওই দু’জনের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে এজাহারভুক্ত আসামি নুরুদ্দিন ও শাহাদাত পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন।
পিবিআই-এর ফেনীর দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জবানবন্দি গ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের বলেন, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে নুরুদ্দিন ও শাহাদাত অনেক তথ্য দিয়েছে। তারা হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করেছে। প্রিন্সিপাল সিরাজের নির্দেশে তারা কিভাবে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল এবং তা বাস্তবায়নের জন্য কীভাবে কী করে তা বিস্তারিত বলেছে। তারা আরও কিছু নাম বলেছে। আমরা তদন্তের স্বার্থে তা প্রকাশ করছি না। এসব তথ্য যাচাই বাছাই করে বাকিদেরও গ্রেফতার করা হবে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সরাসরি হত্যাকান্ডে অংশ নেয়া শাহাদাত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে জানায়, নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়ার পর সে দৌঁড়ে নিচে নেমে উত্তর দিকের প্রাচীর টপকে বের হয়ে যায়। এর মিনিট খানেকের মধ্যে নিরাপদ স্থানে গিয়ে সে রুহুল আমিনকে ফোনে আগুন দেয়ার বিষয়টি জানায়। সে সময় রুহুল আমিন বলে, আমি জানি। তোমরা চলে যাও। শাহাদাত বলেছে, নুসরাতের দায়ের করা মামলার পর রুহুল আমিন থানা ম্যানেজ করার দায়িত্ব নিয়েছিল। এজন্য সে প্রিন্সিপাল সিরাজের পরিবারের কাছ থেকে টাকাও নেয়। দেড় মাস আগেও সে নুসরাতকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু নুসরাত তাকে প্রত্যাখান করার পাশাপাশি অপমানও করে। এ কারণে সে নিজেও নুসরাতের প্রতি ক্ষুদ্ধ ছিল। যার ফলে প্রিন্সিপাল সিরাজের নির্দেশে অন্যদের সঙ্গে নিয়ে হত্যাকান্ডে অংশ নেয়।
আরেক আসামী নুরুদ্দিন জানিয়েছে, তার সঙ্গে প্রিন্সিপাল সিরাজের ভালো সম্পর্ক ছিল। এ কারণে তার নির্দেশে তারা পরিকল্পনা করে নুসরাতকে পুড়িয়ে মারার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে ঘটনার সময় সে ভবনের নিচে ছিল। আর পরিকল্পনা অনুযায়ী মাদরাসার শিক্ষার্থী ও প্রিন্সিপাল সিরাজের ভাগনি পপি গিয়ে নুসরাতকে ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে যায়। মূলত এই পপিই হলো নুসরাতের জবানবন্দিতে বলে উল্লিখিত আলোচিত শম্পা। পুলিশ ও নুসরাতের পরিবারকে বিভ্রান্ত করতে শম্পা নামে কল্পিত চরিত্রের গল্প ফাঁদে নুরুদ্দিন। সিরাজ নানা সময়ে ছাত্রীদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে তাদে যৌন হয়রানি করতো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিবিআইর এই সূত্রটি দাবি করে, নুসরাতের ওপর হামলার সময় নুর উদ্দিন হামলাকারীদের নিরাপত্তা ও হামলার পর নিরাপদে বের হয়ে যাওয়াটি নিশ্চিত করতে স্কুলগেটে অবস্থান করেছিল। আর শাহাদাত হোসেন শামীম বাজার থেকে বোরকা ও পলিথিনে করে এক লিটার কেরোসিন সংগ্রহ করে মাদরাসায় নিয়ে আসে। ঘটনার সময় ওড়না দিয়ে নুসরাতের দুই হাত পেছন থেকে ও মুখ চেপে ধরে কাপড় দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়। এবং নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে দেওয়া হয়। নুসরাতের গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয় জাবেদ।
সূত্রটি আরো দাবি করে, এ ছাড়া নুসরাতকে পরীক্ষার হল থেকে ছাদে ডেকে নেয় পপি। নুসরাতকে বলা হয়েছিল, তার বান্ধবীকে ছাদে মারধর করা হচ্ছে। ছাদে তখন অপেক্ষায় ছিল শামীম, জাবেদ, শম্পাসহ আরো একজন।
কাউন্সিলর মাকসুদ ৫ দিনের রিমান্ডে
মামলার চার নম্বর আসামি কাউন্সিলর মাকসুদ আলমকে (৪৫) পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার দুপুরে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শরাফউদ্দিন আহমেদের আদালত এ আদেশ দেন।
পিবিআই’র উপপরিদর্শক ও এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহ আলম বলেন, কাউন্সিলর মাকসুদ আলমকে সোমবার সকালে ফেনী জেলা কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়। ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া আবেদনের ওপর শুনানি শেষে বিচারক তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। কাউন্সিলর মাকসুদ সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিল। সে সোনাগাজী পৌরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। একই সঙ্গে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার পরিচালনা কমিটির সদস্য। নুসরাত হত্যা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়ার পর গত ১২ এপ্রিল পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে মাকসুদকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত শনিবার তাকে গ্রেফতার করা হয়।
ফাঁসির দাবিতে উত্তাল সোনাগাজী
সোনাগাজী (ফেনী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, মাদরাসাছাত্রী নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার বিচার ও জড়িতদের ফাঁসির দাবি জানিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে সোনাগাজীর রাজনৈতিক ও সামাজিকসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। গত রোববার সকালে উত্তর চরছান্দিয়া চট্টগাম সমাজের উদ্যোগে উপজেলার জিরো প্রয়েন্টে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। এসময় বিক্ষোভ কর্মসূচিতে উপজেলার সর্বস্তরের হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন। এই সময় সকলে নিপীড়ক সিরাজ ও তার দোসরদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল করে তোলে পুরো সোনাগাজী। সকলের কন্ঠে আওয়াজ ছিল, আমার বোন কবরে খুনি কেন বাহিরে, নুসরাতের খুনিদের ফাঁসি চাই দিতে হবে। এদিকে বিকালে ফের বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন উপজেলা ছাত্রলীগ ও ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন এর পূর্বে বিক্ষোভ করেন নবাবপুর আমিরাবাদ বিসিলাহা স্কুল এন্ড কলেজ, মতিগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
উল্লেখ্য, সোনাগাজীর ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত আক্তার রাফিকে যৌন হয়রানি করেছিল ওই মাদরাসার প্রিন্সিপাল সিরাজ উদ্দৌলা। এ ঘটনায় নুসরাত থানায় অভিযোগ করলে প্রিন্সিপালকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর থেকেই মাদরাসার প্রিন্সিপাল সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা তুলে না নেয়ায় নুসরাতকে চাপ দেয়া হয়। গত ৬ এপ্রিল পরীক্ষার আগ মুহূর্তে মিথ্যা কথা বলে নুসরাতকে মাদরাসার ছাদে ডেকে নিয়ে গিয়ে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়া হয়। শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ পুড়ে যাওয়ায় জীবনের সঙ্গে লড়াই করে হেরে যান তিনি। গত ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।