পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানী শহর ঢাকা দিন দিন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। বাড়ছে জনসংখ্যা, একের পর এক গড়ে উঠছে বহুতল ভবন। ইমারতের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে ঢাকার খাল, পুকুর, পার্কসহ সবুজ গাছপালা। ঢাকা শহরে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেয়ার মতো জায়গা এখন খুঁজে পাওয়া দায়। অপরিকল্পিত নগরায়ণে ঢাকা এখন যানজট, ধূলাবালি ও পানিবদ্ধতার শহর।
অন্যদিকে, পুরান ঢাকা মানেই ঘিঞ্জি ঘরবাড়ি, যানজট, রাস্তায় আবর্জনা, সরু রাস্তাঘাট, মিল-কারখানা, গুদাম, দোকান, বাসাবাড়ি- সবমিলে একাকার অবস্থা। এর মাঝে জীর্ণ-শীর্ণ হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য পুরনো ভবন, যার আভিজাত্য ও সৌন্দর্য ঢাকা পড়ে গেছে যুগ যুগের অযত্ম ও অবহেলায়। এর সঙ্গে গত এক দশকে যুক্ত হয়েছে নিয়মনীতিবর্জিত বহুতল ভবন নির্মাণের হিড়িক। সামান্য জায়গা পেলেই নির্মাণ করা হচ্ছে বহুতল ভবন, যেখানে ইমারত নির্মাণের কোনো রকম বিধি-নিষেধ অনুসরণ করা হয় না। আলো-বাতাস তো দূরের কথা, বড় কোনো দুর্যোগের মাঝে জীবনরক্ষার জন্য বের হয়ে আসার কোনো উপায় থাকে না।
এসব সমস্যার কথা মাথায় রেখে রাজধানীবাসীর জীবনমান উন্নয়নে ঢাকার চারটি এলাকা উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘ঢাকা সিটি নেইবারহুড আপগ্রেডিং প্রজেক্ট’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এ শহরকে চারটি ভাগে ভাগ করে উন্নয়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটির প্রস্তাবনায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগর এলাকা বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের কেন্দ্র। এ কারণে নগর জীবনের প্রাত্যহিক প্রয়োজনীয় উপকরণ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। ঢাকা মহানগর এলাকায় ৪০ বছরে জনসংখ্যা প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে। বর্তমানে ঢাকা বিশ্বের ১১তম বড় শহর। ২০৩০ সাল নাগাদ এটি বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ শহরে পরিণত হবে। তখন জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ২ কোটি ৭০ লাখ।
গত ৫ মার্চ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। সে সময় ঢাকা শহরের পরিকল্পিত উন্নয়নে একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স¤প্রতি স্থানীয় সরকার বিভাগে এ-সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
এতে বলা হয়, গত ৫ মার্চ অনুষ্ঠিত একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী নিম্মোক্ত বিষয়গুলো নিয়ে সদয় অনুশাসন প্রদান করেছেন। এগুলো হলো, পুরান ঢাকার মাঠগুলো দখলমুক্ত করতে হবে, রাস্তার প্রস্থ বাড়াতে হবে, বৃষ্টির পানি যেন পুকুরে যায় তা বিবেচনা করে ড্রেনেজ ব্যবস্থা করতে হবে, সিটি করপোরেশনে নবযুক্ত ইউনিয়নের জন্য নতুনভাবে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে, বাস-ট্রাক স্ট্যান্ড পিপিপি’র (সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব) আওতায় দেওয়া যায় কি না পর্যালোচনা করতে হবে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন করতে হবে, পুরান ঢাকায় আরবার রিনিউওয়াল প্রজেক্ট গ্রহণের উদ্যোগ নিতে হবে এবং প্রয়োজনে এলাকাবাসীর সঙ্গে জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন। প্রধানমন্ত্রীর এসব নির্দেশনা ঢাকার পরিকল্পিত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রখ্যাত নগরবিদ ও ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. নজরুল ইসলাম বলেন, এই পরিকল্পনা বা প্রকল্প সম্পর্কে আমি বিশদ কিছু জানি না। সে জন্য কমেন্ট করতে পারছি না। তবে তিনি বলেন, নতুন করে পরিকল্পনা নেয়া হলে অবশ্যই ভালো কিছু হবে। পুরান ঢাকার জরাজীর্ণ দশা থেকে মুক্তির বিষয়ে প্রফেসর নজরুল ইসলাম বলেন, পুরান ঢাকাকে আপগ্রেডেশন করা যায়, আবার রি-ডেভেলপমেন্টও করা যায়। আপগ্রেডেশন হলো, বড় ধরণের ভাঙচুর না করে রাস্তাঘাট, ড্রেন নির্মাণ করা, ভবনগুলো সংস্কার করা। আর রি- ডেভেলপমেন্ট হলো- একটা এলাকা চিহ্নিত করে পুরো এলাকা ভেঙে নতুন করে তৈরী করা। সেক্ষেত্রে ওই এলাকার মানুষের সাথে আলাপ আলোচনা করে তাদের সম্মতিক্রমে তাদেরকে তাদের পছন্দমতো জায়গায় ৫/১০ বছরের জন্য পুনর্বাসিত করা। এরপর পুরনো এলাকা ভেঙে সেখানে একেবারে নতুন করে পরিকল্পিতভাবে রাস্তাঘাট ও ভবন তৈরী করে পুরনো বাসিন্দাদের আবার ফিরিয়ে আনা। এ পদ্ধতিকে জটিল ও কঠিন উল্লেখ করে প্রফেসর নজরুল ইসলাম বলেন, সিঙ্গাপুর শহর কিন্তু এভাবেই তৈরী করা হয়েছে। আপগ্রেডিং প্রসঙ্গে এই নগরবিদ বলেন, নতুন করে রাস্তাঘাট ও ড্রেন উন্নয়নের দেশে বিদেশে মডেল আছে। ইন্দোনেশিয়ার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, সেখানেও কিন্তু জরাজীর্ণ অবস্থা থেকে শহরকে উন্নত ও আধুনিক করার নজির আছে।
জানা গেছে, ঢাকা সিটি নেইবারহুড আপগ্রেডিং প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৮৮০ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক সহায়তা পাওয়া যাবে ৮৩৪ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে যেসব এলাকার উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করা হবে সেগুলো হচ্ছে কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ, নয়াবাজার, সূত্রাপুর, গুলিস্তান, খিলগাঁও, মুগদা ও বাসাবো। এসব এলাকার নাগরিক সেবার মান বাড়ানো, উম্মুক্ত স্থান বৃদ্ধি, আর্থসামাজিক উন্নয়ন, পরিবেশের উন্নয়ন, ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট উন্নয়ন, পার্ক- খেলার মাঠ-কমিউনিটি সেন্টার কাম মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর খিলগাঁও, বাসাবো, পুরান ঢাকা, কামরাঙ্গীরচর ও লালবাগ এলাকায় যেসব নদী, পুকুর বা ঝিল রয়েছে সেগুলোর উন্নয়ন করে দুই পাড় বাঁধাই করে দেওয়া হবে। দু’পাশে লাগানো হবে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। পাবলিক টয়লেট, কমিউনিটি সেন্টার কাম মাল্টিপারপাস বিল্ডিংও নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটির মাধ্যমে ডিএসসিসি এলাকায় যেসব নদী, পুকুর বা ঝিল রয়েছে সেগুলোর উন্নয়ন করে দুপাশে বাঁধাই করে দেওয়া হবে। পারঘেঁষে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হবে, যাতে অবসরে মানুষ সেখানে সময় কাটাতে পারেন। এছাড়া উল্লিখিত এলাকায় পাবলিক টয়লেট, কমিউনিটি সেন্টার কাম মাল্টিপারপাস বিল্ডিং নির্মাণ করা হবে, যার ওপরে জিমনেশিয়াম ও লাইব্রেরি থাকবে। সেই সঙ্গে এলাকার যেসব রাস্তাঘাট ভাঙাচোরা ও ব্যবহার অযোগ্য সেগুলো ঠিক করার পাশাপাশি নতুন রাস্তা তৈরি করা হবে। এছাড়া বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য এসটিএস নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে। আগামী ২০২২ সাল নাগাদ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।