পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতল ও বিভিন্ন নিত্যপণ্যের প্লাস্টিক মোড়কে সারাদেশের পরিবেশ বিপর্যস্ত। ভেঙে পড়ছে ড্রেনেজ ব্যবস্থা, উর্বরতা হারাচ্ছে মাটি, বাতাসে ছড়াচ্ছে বিষ, ভরাট হচ্ছে নদী-খাল-বিল, পরিচ্ছন্নতা হারাচ্ছে সড়ক-গলিপথ। সব মিলিয়ে প্লাস্টিক বা পলিথিনের ব্যাপক ব্যবহারে মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে দেশের পরিবেশ। এগুলো অপচনশীল হওয়ায় পরিবেশের ওপর দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।
সর্বনাশা এই পলিথিন বা প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারে দূষিত হচ্ছে মাটি, পানিসহ সামগ্রিক পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থা। মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়ছে জনস্বাস্থ্য। পরিবেশবিদদের মতে, যত্রতত্র পলিথিন নিক্ষেপের ফলে মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে পানি, মাটি ও বাতাস। মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে চর্মরোগে। পলিথিনের অবাধ ব্যবহারের কারণে বিভিন্ন স্থানে ড্রেনেজ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাও দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
পলিথিন ও প্লাস্টিক বোতলের যথেচ্ছ ব্যবহার রাজধানী ঢাকার পরিবেশকে মারাত্মকভাবে দূষিত করেছে। অপচনশীল পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতল রাজধানীর ড্রেনেজ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাকে প্রায় বিকল করে ফেলেছে। নালা-নর্দমাগুলো পলিথিনে সয়লাব হয়ে আছে। এতে পানিপ্রবাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টিতেই দেখা দিচ্ছে পানিবদ্ধতা। আসছে বর্ষায় রাজধানী ঢাকা পানিবদ্ধতার মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে- পরিবেশবাদীদের এমনই আশঙ্কা। তাদের অভিযোগ, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ ঢাকা সিটি করপোরেশন এ ব্যাপারে উদাসীন। তাই আসছে বর্ষায় রাজধানীবাসীকে পানিবদ্ধতার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়তে হবে।
শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, পলিথিন ও বিভিন্ন প্লাস্টিক পণ্য ব্যাপকভাবে ব্যবহারে সারাদেশে খাল-বিল, নদী-নালা থেকে শুরু করে সমুদ্র্রে পর্যন্ত প্লাস্টিক ছড়িয়ে পড়ছে। এতে পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। সেই সাথে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য। প্লাস্টিক শুধু আসবাবপত্র বা পলিথিনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। বর্তমানে নামীদামি কসমেটিক কোম্পানির সাবান, ফেসওয়াশ, টুথপেস্ট, বডিওয়াশ, ডিটারজেন্ট, বিস্কিট, চানাচুর, চিফস, মসলা ইত্যাদিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন দ্রব্যের মোড়কে মাইক্রোবিড নামক ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণার উপস্থিতি দেখা যায়, যা ব্যবহারের পর নদী-নালা, খাল-বিল ও অন্যান্য জলাশয়ে যাচ্ছে এবং মাছের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করছে। আর এর ফলে চর্মরোগসহ মারাত্মক ক্যান্সার পর্যন্ত হচ্ছে।
প্লাস্টিক এমন এক পদার্থ, যার আয়ুষ্কাল হাজার হাজার বছর। যা মাটিতে গেলে ক্ষয় হয় না বা মাটির সাথে মিশে যায় না। এটি মাটিতে পানি ও প্রাকৃতিক যে পুষ্টি উপাদান রয়েছে, তার চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করে। যার ফলে মাটির গুণগত মান হ্রাস পায়। অর্থাৎ মাটি তার উর্বরা শক্তি হারিয়ে ফেলে। পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক এই পলিথিনের ব্যবহার রোধের বিষয়টি দেশব্যাপী যে গুরুত্ব হারিয়েছে, সেটি বাজারে গেলে বা রাস্তায় সামান্য একটু হাঁটলেই বোঝা যায়। বাড়ির দরজা থেকে শুরু করে নদী, নালা, ড্রেন সবখানেই মিশে গিয়ে এই ধরিত্রীর শ্বাসরোধ করে ফেলেছে পলিথিন ও প্লাস্টিক সামগ্রী। একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা মহানগরীর প্রতিটি পরিবার দিনে গড়ে পাঁচটি পলিথিন সংগ্রহ করে, যার চারটিই তারা ফেলে দেয়। এভাবে নগরীর পথের ধারে, নর্দমায়, জলাধারে পলিথিনের স্ত‚প জমছে, যা নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে বিপর্যস্ত করার পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ করছে। এ ছাড়া পলিব্যাগ তৈরির সময় বাতাসে হাইড্রোজেন সায়ানাইড ও ডাই অক্সিজেনের মতো বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে যায়, যা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ১৯৯০ সালে ১৫ হাজার মেট্রিক টন প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয়। ২০১০ সালে এর ব্যবহারের পরিমাণ ৭ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। অর্থাৎ ২০ বছরে প্লাস্টিকের ব্যবহার বেড়েছে ৫০ গুণ। বর্তমানে ছোট, মাঝারি, বড় সব মিলিয়ে ৫ হাজার শিল্পকারখানায় ১২ লাখ মেট্রিক টনের বেশি প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে। সে হিসাবে প্লাস্টিক পণ্যের জনপ্রতি ব্যবহার বছরে ৭.৫ কেজি। পরিবেশ দূষণের অনেকগুলো উপকরণের মধ্যে খুবই ক্ষতিকারক উপাদান হলো পলিথিন ও অন্যান্য প্লাস্টিক পণ্য। আশির দশকের শুরু থেকে অর্থাৎ ধরা যায় ১৯৮২ সাল থেকে দেশে এই পলিথিনের যে প্রচলন শুরু হয়েছিল, তা এখনো চলছে আশঙ্কাজনক হারে।
পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনা করেই সরকারিভাবে ২০০২ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকা এবং একই বছর ৮ এপ্রিল থেকে সারা দেশে এইচডিপিই (হায়ার ডেনসিটি পলি ইথালিন) পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। আর পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধনী ২০১০) অনুযায়ী নিষিদ্ধ পলিথিন উৎপাদন, আমদানি ও বাজারজাতকরণের অপরাধে সর্বোচ্চ দুই বছরের সশ্রম কারাদন্ড অথবা দুই লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডের বিধান করা হয়। পরিবেশবিদরা বলছেন, পরিবেশ অধিদফতরের পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসন ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদিচ্ছা, আন্তরিকতা, সততা ও জবাবদিহিতার অভাবের কারণেই বর্তমানে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার আগের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি সম্প্রতি সর্বনাশা পলিথিনের ব্যাপক ব্যবহারের ফলে পরিবেশের যে মারাত্মক দূষণ হচ্ছে তা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পরিবেশের বিষ পলিথিনের ব্যবহার বন্ধের লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের এনফোর্সমেন্ট বিভাগের কার্যক্রম আরো জোরদার এবং প্লাস্টিক বর্জ্য আমদানি করে রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে পণ্য উৎপাদন করে রপ্তানির ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র না দেয়ার সুপারিশ করা হয়।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান এ বিষয়ে দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধে আইন থাকলেও এর কার্যকারিতা একেবারেই নেই। পরিবেশ অধিদপ্তরের উদাসীনতা ও জবাবদিহিতার অভাবই এর মূল কারণ। আমি মনে করি, এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর পুরোপুরি ব্যর্থ। তাদের ব্যর্থতার জন্য জাতি আজ নানাভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। প্লাস্টিক দূষণ আমাদের ভূমি, নদী-সাগর সব বিষাক্ত করছে। একই সঙ্গে জনস্বাস্থ্যে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সরকার ২০০২ সালে আইন করে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করলেও আইনের কোনো বাস্তবায়ন নেই। পরিবেশ অধিদপ্তরের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তার কারণে নিষিদ্ধ পলিথিন এখনো অবাধে উৎপন্ন ও বাজারজাত করা হচ্ছে। রাজধানীসহ সারাদেশে প্রায় এক হাজার ২০০ কারখানায় নিষিদ্ধ পলিথিন তৈরি হচ্ছে। এগুলোর বেশির ভাগই পুরান ঢাকা-কেন্দ্রিক।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক আবদুস সোবহান বলেন, বলা হয় আমরা বিকল্প উপস্থাপন করতে পারিনি, এ জন্য পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ হচ্ছে না। এটা সঠিক নয়। আইনের সঠিক প্রয়োগ হলে বিকল্প বাজারে চলে আসবে। পাটের ব্যাগ, কাগজের ঠোঙ্গা, কাপড়ের ব্যাগ- এগুলো চাহিদা তৈরি হলে অবশ্যই সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে। আইন প্রয়োগের মাধ্যমে ঢাকা থেকে বেবিট্যাক্সি তুলে দেয়া সম্ভব হয়েছে। তাই আইনের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে নিষিদ্ধ পলিথিনের উৎপাদন ও বিপণনও সম্ভব।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক সৈয়দ নাজমুল হাসান ইনকিলাবকে বলেন, পলিথিনের বিরুদ্ধে সারাদেশেই আমাদের অভিযান চলছে। তবে প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে ঢাকায় নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা যাচ্ছে না। তারপরও আমরা আমাদের সাধ্যমতো প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-এর সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্যে উল্লেখ করা হয়, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নিষিদ্ধ পলিথিন তৈরির প্রায় এক হাজার ২০০ কারখানা রয়েছে। যার বেশির ভাগই পুরান ঢাকা-কেন্দ্রিক। শুধু পুরান ঢাকার অলিগলিতে আছে নিষিদ্ধ ৩০০ কারখানা। সংস্থাটির দেয়া তথ্য মতে, কেরানীগঞ্জ, জিঞ্জিরা, কামরাঙ্গীরচর, মিরপুর, কাওরান বাজার, তেজগাঁও, টঙ্গীতে ছোট-বড় বেশ কিছু কারখানা আছে। আর যাত্রাবাড়ী থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা পর্যন্ত বুড়িগঙ্গার পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠেছে শতাধিক কারখানা। আর ঢাকার পলিথিন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে আছে একাধিক প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। পলিথিন বাজারজাতকরণে ‘পরিবহন সিন্ডিকেট’ নামে আরেকটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করছে। সিন্ডিকেটটি এই পলিথিনগুলো ‘জরুরি রপ্তানি কাজে নিয়োজিত’ লেখা ট্রাকে করে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে দেয়। এমনকি পণ্য বহনে পরিবেশবান্ধব পাটজাত ব্যাগ ও কাগজের ব্যাগ ব্যবহার করার কথা থাকলেও আইন অমান্য করে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগ, উৎপাদন, মজুদ, বাজারজাত ও ব্যবহার করা হচ্ছে। বর্তমানে রপ্তানিযোগ্য কিছু পণ্য, প্যাকেজিং, নার্সারির চারা, রেণু পোনা পরিবহন ও মাশরুম চাষের জন্য পলিথিন উৎপাদনের ছাড়পত্র নিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পলিথিন ব্যাগ তৈরি করছে।
পুরান ঢাকায় পলিথিন তৈরির কারখানাগুলো সম্পর্কে তথ্য জানলেও স্থানীয় বাসিন্দারা ঝামেলা এড়াতে পুলিশ ও প্রশাসনের লোকদের কাছে লুকানো কারখানা সম্পর্কে মুখ খুলতে চান না। ইসলামবাগের পলিথিন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শুধু ইসলামবাগেই রয়েছে শতাধিকের ওপর পলিথিন কারখানা। এ ছাড়া চকবাজার এলাকায় প্রতিদিন লাখ লাখ পলিব্যাগ বিক্রি হচ্ছে। তিনি আরো জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল দেয়ার আগেই ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে দেয়া হয়। ফলে আগেই তারা কারখানা বন্ধ করে দেন। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়মিত মাসোয়ারা দেয়ার মাধ্যমেই ব্যবসায়ীরা এই অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।