Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পুরনো ইঞ্জিনে ট্রেনের গতি কমছে

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম | আপডেট : ১২:১১ এএম, ১৩ এপ্রিল, ২০১৯

ইন্দোনেশিয়া থেকে সদ্য আমদানী করা নতুন রেল কোচগুলো ১৪০ কিলোমিটার গতিতে চলতে সক্ষম। কিন্তু কোচগুলোকে ১৪০ কিলোমিটার বেগে টেনে নেয়ার মতো ইঞ্জিন (লোকোমোটিভ) কি রেলের আছে? নতুন বিলাসবহুল কোচ দিয়ে এ মাসেই চালু হচ্ছে ঢাকা-রাজশাহী বিরতিহীন ট্রেন ‘বনলতা এক্সপ্রেস’। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের সুবর্ণ ও সোনার বাংলা এক্সপ্রেসের পর এটি হবে বাংলাদেশের তৃতীয় বিরতিহীন ট্রেন। অবশ্য ঢাকা থেকে দেশের উত্তরাঞ্চলের প্রথম বিরতিহীন ট্রেন এটি। নতুন এই ট্রেনের গতি কতো হবে তা নিয়ে শুরু থেকেই বিভ্রান্তি লেগেই আছে। কেউ বলেন, ১৪০ আবার কেউ বলেন একশ’র উপরে। জানতে চাইলে রেলের উর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, কোচগুলোর ১৪০ কিলোমিটার গতিতে চলার সক্ষমতা থাকলেও আমাদের রেললাইন ও ইঞ্জিনের সেই সক্ষমতা নেই। নতুন ইঞ্জিন না আসা পর্যন্ত গতি বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। বরং দিন দিন ট্রেনের গতি কমছে।
জানা গেছে, মেয়াদোত্তীর্ণ ও আয়ুষ্কাল শেষ হওয়া ইঞ্জিন দিয়েই চলছে রেল। এতে করে ট্রেনের গতি যেমন কমছে তেমনি কমছে ইঞ্জিনের গড় কর্মঘণ্টাও। গন্তব্যে পৌঁছানোতে লাগছে বাড়তি সময়। চলার পথে ইঞ্জিন বিকল হয়ে ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় ঘটছে প্রায়ই। রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নতুন ইঞ্জিন বহরে যোগ না হওয়া পর্যন্ত ট্রেনের সময় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য মতে, বর্তমানে সচল ইঞ্জিন রয়েছে ২৭২টি। এর মধ্যে ১৯৪টির অর্থনৈতিক আয়ু (২০ বছর) শেষ হয়ে গেছে। এগুলোর মধ্যে ৪৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি পুরনো ইঞ্জিনের সংখ্যা সাতটি।
রেলওয়েতে ব্রড গেজ ও মিটার গেজ দুই ধরণের ইঞ্জিন আছে। বর্তমানে রেলের বহরে থাকা সচল মিটার গেজ ইঞ্জিনের সংখ্যা ১৭৮। এর মধ্যে ১৩৯টিই বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে, ব্রড গেজ ইঞ্জিনের সংখ্যা ৯৪। এর মধ্যে ৫৫টির বয়স ২০ বা তার চেয়ে বেশি। রেলওয়ের হিসাব অনুযায়ী, বহরে থাকা ইঞ্জিনের ৭১ শতাংশই পুরনো। পুরনো এসব ইঞ্জিনে নির্ধারিত গতিতে চলতে পারছে না বেশিরভাগ ট্রেন। ব্রড ও মিটার গেজ মিলে গড়ে একটি ইঞ্জিন চলাচল করতে পারছে দিনে প্রায় ১১ ঘণ্টা। যদিও পাঁচ বছর আগের চিত্রটি এর তুলনায় বেশ ভালো ছিল। তখন ব্রড গেজের একটি ইঞ্জিন দিনে গড়ে ১৭ ঘণ্টার বেশি চলত। বর্তমানে তা নেমে এসেছে ১০ ঘণ্টার সামান্য উপরে। একইভাবে পাঁচ বছর আগে একটি মিটার গেজ ইঞ্জিন দিনে চলাচল করত প্রায় ১৮ ঘণ্টা, যা এখন নেমে এসেছে ১২ ঘণ্টার নিচে।
রেলওয়ের কর্মকর্তা জানান, কর্মঘণ্টা কমে যাওয়ার পেছনে ইঞ্জিনগুলোর বয়সই ফ্যাক্টর। অতি পুরনো হওয়ায় ইঞ্জিনগুলো আর আগের মতো চলতে পারে না। একটা নির্ধারিত সময়ের পর চালাতে গেলে বিকল হয়ে পড়ে। এ কারণেই পুরনো ইঞ্জিনগুলো মেরামতের জন্য ঘন ঘন কারখানায় নিতে হচ্ছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রকৌশল (লোকোমোটিভ) শাখার তথ্যমতে, মেরামতের জন্য ইঞ্জিন কারখানায় নেয়া স্বাভাবিক কার্যক্রমেরই অংশ। তবে এর একটা নির্ধারিত মাত্রা রয়েছে। রেলওয়ের নির্ধারিত মানদন্ড অনুযায়ী, প্রতিদিন মোট ইঞ্জিনের ৮০ শতাংশ ব্যবহারের জন্য রাখতে হবে। বাকি ২০ শতাংশ থাকবে সার্ভিসিংয়ে। তবে ২০১৮ সালে সার্ভিসিংয়ে থাকা ইঞ্জিনের পরিমাণ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মেরামত ও ব্যবহার উপযোগী ইঞ্জিনের অনুপাত নির্ধারিত মানদন্ডের চেয়ে বেশি। ওই বছর লাইনে থাকা মিটার গেজ ইঞ্জিনগুলোর ৪০ শতাংশই প্রতিদিন মেরামতের জন্য কারখানায় ছিল। ব্রড গেজ ইঞ্জিনে এর পরিমাণ কম হলেও তা রেলওয়ের নির্ধারিত মানদন্ডের চেয়ে বেশি। গত বছর ২৪ শতাংশ ব্রড গেজ ইঞ্জিন প্রতিদিন সার্ভিসিংয়ে ছিল।
ইঞ্জিনের গড় কর্মঘণ্টা কমে যাওয়া প্রসঙ্গে রেলেওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বেশির ভাগ ইঞ্জিনই অতি পুরনো। বেশিরভাগেরই অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল শেষ হয়েছে। তার পরও এগুলো নিয়মিত মেরামত করে আমরা সচল রেখেছি। পুরনো হয়ে যাওয়ার কারণে অনেকগুলো ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতা কমে এসেছে। আবার যেসব ইঞ্জিনের বয়স তুলনামূলক কম, সেগুলোর কর্মক্ষমতা বেশ ভালো। যেসব ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতা বেশি, সেগুলো দূরপাল্লা ও গুরুত্বপূর্ণ রুটগুলোয় চালানো হচ্ছে। আর অপেক্ষাকৃত কম কর্মক্ষমতাসম্পন্ন ইঞ্জিনগুলো চালানো হচ্ছে স্বল্প দূরত্ব ও তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ রুটে।
ইঞ্জিন সংকটের বিষয়ে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত থাকার কারণেই আজকের এই বেহাল দশায় চলে এসেছে রেল। তবে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর অনেকগুলো নতুন ইঞ্জিন কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রেলমন্ত্রী বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার পরই এর মধ্যে ৬০টি নতুন ইঞ্জিন কেনার চুক্তি হয়েছে। এর আগেও অনেকগুলো ইঞ্জিন কেনার চুক্তি হয়েছে। এসব ইঞ্জিন রেলের বহরে যোগ হলে এ অবস্থা থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারবো। #



 

Show all comments
  • ash ১৩ এপ্রিল, ২০১৯, ৭:১৭ এএম says : 0
    BANGLADESH E LOKSHONGKHA BESHI !! AMADER DESH E OBOSHOI DUITOLA TRAIN BEBOHAR KORA WCHITH !! JETA ONEK DESHE E BEBOHAR HOCHE ! EVEN AUSTRALIA TE LOK SHONGKHA ATO KOM , TAR PORE O EKHANE DUITOLA TRAIN BEBOHAR HOCHE
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ