Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এবার পোড়া মবিল থেকে গ্যাস-তেল

উদ্ভাবনে একজন মিজানের সিরিজ সাফল্যের কথা

বেনাপোল অফিস | প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

অপ্রয়োজনীয় ফেলনা পোড়া মবিল দিয়ে এবার তৈরী হচ্ছে গ্যাস বা জ্বালানি তেলের ন্যায় মূল্যবান সম্পদ। যশোরের সীমান্তবর্তী উপজেলা শার্শার মোটর ম্যাকানিক মিজান উদ্ভাবন করলেন পোড়া মবিল থেকে গ্যাস ও জ্বালানি তেল। যানবাহন বা কলকারখানার ফেলে দেয়া পোড়া মবিল পরিবেশ দূষণ করে। পরিবেশ দূষণমুক্ত করতে মিজান এ উদ্যোগ নিয়েছেন।
গত এক বছর ধরে মিজান পোড়া মবিল নিয়ে গবেষণা করে সফল হয়েছেন। তিনি বলেন, আমি ভেবে দেখলাম দেশে লাখ লাখ যানবাহন ও কলকারখানা থেকে প্রচুর পরিমাণ পোড়া মবিল পাওয়া যায়। এসব মবিল পরিবেশ নষ্টের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করছে। এমন চিন্তাভাবনা থেকে গবেষণায় মনোনিবেশ করি এসব পোড়া মবিল কিভাবে কাজে লাগানো যায়।
একদিন সামান্য পরিমাণ পোড়া মবিল খোলা মাঠে ঘাসের ওপর ফেলে আসি। কয়েকদিন পর দেখতে পাই মাঠের ঘাস মরে গেছে। পানিতে ফেললেও মারা যাচ্ছে মাছ। দিনের পর দিন পোড়া মবিল নিয়ে গবেষণা চালিয়ে গ্যাস তৈরি করেছি। রান্নাসহ বিভিন্ন কাজে এ গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে। অবশিষ্টাংশ রিসাইক্লিং করে ডিজেল মবিল ও কেরোসিন তৈরি করা যায়। শুধু দরকার সরকারের সহায়তা।
পিতা-মাতার ৬ সন্তানের মধ্যে মিজান পঞ্চম। বর্তমান শার্শা উপজেলা সদরের শ্যামলাগাছি গ্রামে তার বসবাস। দারিদ্রের কারণে লেখাপড়া শিখতে পারেনি। বেঁচে থাকার তাগিদে মাঠে মাঠে ইরি ধানের ক্ষেতে শ্যালোমেশিন চালানো এবং মেরামতের কাজ করেন। পরবর্তীতে নাভারন বাজারে একটি মোটরসাইকেলের গ্যারেজ করেন। সেখান থেকেই তার মোটর মেকানিক পেশা হিসেবে কর্মজীবন শুরু। বর্তমানে শার্শা বাজারে ভাই ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপ নামে একটি মোটরসাইকেল গ্যারেজ রয়েছে তার।
মিজানের প্রথম উদ্ভাবন একটি আলগা ইঞ্জিন। তার ইঞ্জিনের সব যন্ত্রপাতি দেখা যেত বাইরে থেকে। এ ইঞ্জিনটি একবার জ্বালানি তেল দিয়ে চালু করলে পরবর্তীতে আর তেল দরকার হতো না। সৃষ্ট ধোঁয়া থেকে জ্বালানি তৈরি করে নিজে নিজে চলতো ইঞ্জিনটি। এটি উদ্ভাবনের পর ২০১৫ সালে যশোর জেলা স্কুলের একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় মিজান এটি প্রদর্শন করে প্রথম স্থান অধিকার করেন।
তার তৃতীয় উদ্ভাবন অগ্নিনিরোধ জ্যাকেট। এ জ্যাকেট গায়ে ব্যবহার করে ড্রাইভার বা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নিরাপদে কাজ করতে পারবেন। আগুনের মাঝে গিয়ে জানমাল রক্ষা করার সময় তার শরীরে আগুন স্পর্শ করবে না। চতুর্থ উদ্ভাবন অগ্নিনিরোধ হেলমেট। এটি ব্যবহার করলে দুর্ঘটনায় আগুনে গলার শ্বাসনালী পুড়বে না। পঞ্চম ছিল মোটরকার উদ্ভাবন। এটি বিদ্যুৎ বা পেট্রোল চালিত।
কৃষকদের স্বয়ংক্রিয় সেচযন্ত্র উদ্ভাবন তার ষষ্ঠ উদ্ভাবন। কৃষকরা দূর-দূরান্তের মাঠে জমিতে পানি দিতে আর ক্ষেতে যেতে হবে না। বাড়িতে বসেই সেচ যন্ত্রটি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বন্ধ বা চালু করতে পারবেন। এ যন্ত্রটি জমিতে পানির প্রয়োজন হলে নিজে নিজেই চালু হয়। পানির প্রয়োজন না থাকলে এটি আপনা থেকেই বন্ধ হয়ে যায়।
দেশীয় প্রযুক্তিতে মিজান তার সপ্তম উদ্ভাবন করেন ফ্যামেলি মোটরযান। ব্যবহার যোগ্য এ যানটি এলাকার মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। মিজানের অষ্টম উদ্ভাবন পরিবেশ সেফটি যন্ত্র। এটি পরিবেশ রক্ষার্থে বহুমুখী কাজ করে থাকে। বাসা-বাড়ি, অফিস বা কলকারখানায় এটি ময়লা পরিষ্কারের কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। হাতের স্পর্শ ছাড়াই যন্ত্রটি পরিষ্কার করার কাজে ব্যবহার হয়। এই যন্ত্র উদ্ভাবনের পর ২০১৬ সালের ৫ জুন মিজান পরিবেশ পদক লাভ করেন। জেলা, বিভাগ ও জাতীয় পর্যায়ে তিনি এ পর্যন্ত ৩৮টি সাফল্য সনদ ছাড়াও পেয়েছেন অসংখ্য ক্রেস্ট ও পুরষ্কার।
ইতোমধ্যে মিজানের উদ্ভাবনায় আবিষ্কৃত দেশীয় প্রযুক্তির মোটরকার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ টু আই প্রকল্পের আওতাভুক্ত করা হয়েছে। গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে ছোট ছোট অ্যাম্বুলেন্স তৈরি করার পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে। ২০১৭ সালে পরিবেশবান্ধব যন্ত্র আবিষ্কারে বিশ্ব পরিবেশ পদক নির্ধারিত হওয়ায় ওই বছরের ৫ জুন মিজানকে আনুষ্ঠানিকভাবে পদক দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। মিজান জানান, তার স্বপ্ন দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ এবং নতুন নতুন জিনিস উদ্ভাবন করা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ