Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিদ্ধান্তহীনতায় গ্রীন ভবন

আগুন ও ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে সচিবালয়

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ১০ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয় দীর্ঘ দিন ধরে আগুন এবং ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে। সে জন্য বিশ্বের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে বিদ্যুৎ ও পানি সাশ্রয় করে বৃষ্টির পানি ও সৌরশক্তির ব্যবহার উপযোগী দেশের প্রথম প্রশাসনিক একটি ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করছে সরকার।
প্রতি তলায় প্রায় ২০ হাজার স্কয়ার ফুটের ভবনটিতে ব্যবহৃত কাঁচ সোলার প্যানেল হিসেবে কাজ করবে। সোলার প্যানেলে কোন বালু পড়বে না। সেজন্য খরচ বেশি হতে পারে। বৃষ্টির পানি হাউজে ধরে রেখে ব্যবহার করা হবে। নকশটা দেখে একটি খসড়া নিয়ে আর্কিটেকদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা ইনকিলাবকে জানান, সচিবালয়কে শেরে-বাংলানগরে বঙ্গবন্ধু আন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশে স্থানান্তরের বিষয়ে এক সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও আপাতত সে সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে না। তাই সচিবালয়ের ভেতরেই গ্রীন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ে এমন ভবনটি নির্মাণের জন্য পরিকল্পনা প্রস্তুতি শুরু করেছে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বিভাগ। সচিবালয়ের দুই ও তিন নম্বর ভবনের পাশে টিনশেড ভবনের পাশে ‘এল’ আকৃতির এই ভবনটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। প্রতি তলায় প্রায় ২০ হাজার স্কয়ার ফুটের ভবনটিতে ব্যবহৃত কাঁচ সোলার প্যানেল হিসেবে কাজ করবে। নকশটা দেখে একটি খসড়া ব্যয়ের হিসাব করা হচ্ছে। যাতে তিনশ’ থেকে চারশ’ কোটি টাকা খরচ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এ নিয়ে সমস্যার কথা জানিয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রীন বিল্ডিংয়ের ধারণা একেবারেই নতুন। বাংলাদেশে এ বিষয়ে দু’একজন আর্কিটেক রয়েছে। তাদের সঙ্গে কথাবার্তা হচ্ছে।
গণপূর্ত অধিদফতর থেকে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোর একটি হতে যাচ্ছে। বন্যা এবং ভয়ঙ্কর ঘুর্ণিঝড়ের পুণরাবৃত্তি এবং ব্যাপকতা বাড়তে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। ভবনগুলোতে উল্লেখযোগ্য শক্তি ব্যবহার হয়। তবে এই ক্ষেত্রটিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে গ্রীন হাউস গ্যাস নির্গমণ কমানোর অপার সম্ভাবনা আছে। একই সেঙ্গ রয়েছে খরচ কমানোর সম্ভাবনা। এছাড়া সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় প্রায় ২০ হাজার বর্গফুটের গ্রীণ ভবন নির্মাণ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ভবনটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৪২১ কোটি টাকা। তার পরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য ২০১৫ সালের ১৩ অক্টোবর পরিকল্পনা কমিশনে উত্থাপন করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। তা তিনবছর পেরিয়ে গেলেও এ প্রকল্পের বিষয়ে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্পের প্রস্তবায় বলা হয়, প্রশাসনের নতুন ভবনে কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, অত্যাধুনিক সব সুবিধা, সাশ্রয়ী পানি ব্যবহার ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ ব্যবহারের সাশ্রয়ী উপকরণ ব্যবহার, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও ব্যবহার করা হবে। ২০তলা বিশিষ্ট ভবনটি নির্মাণ হলে বিদ্যুৎ ও পানি সাশ্রয় হয়ে খরচ যেমন বাঁচবে তেমনি থাকবে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা। একটি বগুতল ভবন নির্মাণের কথা থাকলেও সেটি কোন মডেলে হবে তা নিয়ে কয়েক দফা সভার পর গ্রীন বিল্ডিং’ ধারণাটিই চূড়ান্ত হয় তিতন বছর আগে। ভবনটি নির্মাণের জন্য উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা বা ডিপিপি তৈরি করা হয়। পরিবেশের উপর প্রভাব বিবেচনায় ভবনের নকশা ও পরিকল্পনা। একই সঙ্গে টেকসই নির্মাণ উপকরণ ও রীতিনীতি খুঁজে বের করার প্রচেষ্টা অব্যহত রয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদসচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম ইনকিলাবকে বলেন, সচিবালয়ের ভেতরে আগুন বা ভূমিকম্প ঝুঁকিতে ১নং ভবন রয়েছে। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী এখানে অফিস করছে না। তবে শিগগিরই সচিবালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিষয়ে সব মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বিভাগের র্কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে।
তিনি বলেন, সচিবালয় মসজিদের পাশে টিনসেড বিল্ডিংগুলো ভেঙে সেখানে ২০ তলা একটি ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হচ্ছে। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে আটটি ভূতাত্তি¡ক চ্যুতি এলাকা বা ফল্ট জোন সচল অবস্থায় রয়েছে। এরমধ্যে সিলেটের হাফলং চ্যুতির ডাউকি চ্যুতি অন্যতম। এসব চ্যুতির কারণে ভূমিকম্প হয়। এটার বেইজটা অনেক পুরনো ধরেন ৬০-৭০ বছর আগে তৈরি করা এ ভবনটি। এটা নিয়ে একটু ঝুঁকি আছে। সেখানে আগুনের ঝুঁকি প্রতিরোধে সব ধরনের ব্যবস্থা থাকবে।
সচিবালয় ইডেন গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তফা কামাল ইনকিলাবকে বলেন, পানি ও বর্জ্য শোধন করে বার বার ব্যবহার ও খরচ কমানোই গ্রীন বিল্ডিংয়ের ধারণা। বগুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা থাকলেও সেটি একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। দেশের সরকারি ভবনগুলোতে ধীরে ধীরে বৈশিষ্ঠ্যগুলো যুক্ত করতে আগ্রহী। সরকারি নীতি মেনে ভবনগুলোতে বিভিন্ন গ্রীন ফিচার সংযুক্ত করা ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। বৃষ্টির পানি সংগ্রহের পদ্ধতি স্থাপন এবং পরিচালনা করার জন্য একটি ম্যানুয়্যাল ইতোমধ্যে তৈরি করা হয়েছে।।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সচিবালয়ের ভেতরে মসজিদের সামনে যেখানে টিনশেড ভবন আছে, সেখানে গড়ে উঠবে বহুতল ভবনটি। অত্যাধুনিক সব ধরনের সুবিধা থাকবে টুইন টাওয়ারে। নতুন ভবনটি হবে বিদ্যুৎসাশ্রয়ী ভবন। সচিবালয়ে বর্তমানে ১০টি ভবন আছে। ভবন ছাড়াও আরো আটটি টিনশেড একতলা ভবন আছে। প্রতিনিয়ত সরকারের কর্মকান্ড ও প্রশাসনের কলেবর যেভাবে বাড়ছে, তাতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।
##

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ