Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বৈরী আবহাওয়ায়ও বাড়ছে আমের গুটি

রেজাউল করিম রাজু | প্রকাশের সময় : ৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

প্রবাদ আছে ‘আমের আনা মাছের পাই থাকলে কে কত খায়’। অর্থাৎ গাছ ভরে যত মুকুল আসে তার ষোল আনার মধ্যে এক আনা টিকলেই অনেক। আর মাছ যত ডিম পাড়ে তার এক পয়সার সমান থাকলেই প্রচুর উৎপাদন হয়।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আমের রাজ্য রাজশাহী অঞ্চলে গাছ ভরে মুকুল আসে। প্রায় নব্বই ভাগ গাছ এখন মুকুলে পরিপূর্ণ। ডগায় ডগায় ঠাসা গুটি জানান দেয় আমের ভাল ফলনের কথা। আমচাষিরা নেমে পড়ে পরিচর্যায়। সব ঠিকঠাক থাকলে মাস দুয়েকের পর থেকে আম রসিকদের রসনা মেটাবে। কিন্তু বাধ সেধেছে বেরসিক আবহাওয়া। যদিও বৈরী আবহাওয়া মোকাবেলা করে দাবদাহ, ঝড় ঝাপটা সয়ে আমকে বড় হতে হয়। তবে এবার বেশ আগেভাগে ঝড় শিলাবৃষ্টি দাপট দেখাতে শুরু করেছে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারী রাজশাহীতে নজিরবিহীন শিলাবৃষ্টি হয়। শিলার আঘাতে ঝরে যায় অনেক গুটি। বিশেষ করে পুঠিয়া বাঘা এলাকায় মারাত্মক ক্ষতি হয়। এসময় চৈত্রের খরতাপে আমের গুটির গোড়া শুকিয়ে ঝরে পড়ত। এবার খরতাপের তেমন দাপট এখন পর্যন্ত হয়নি। তবে বৈশাখের শুরু আগেই বৈশাখী ঝড়ো হাওয়ায় ঝরছে গুটি। আম বাগানের তলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকছে ঝরে পড়া গুটি। তবে বৃষ্টি বেশ উপকার বয়ে এনেছে। লাগছেনা সেচ পাতা আর গুটিতে এসেছে সবুজতা। পোকা মাকড়ের প্রকোপ নেই। গুটি বাড়ছে দ্রুততার সাথে। আবহাওয়ার রকম ফেরে আশা নিরাশার দোলাচলে দুলছে আম চাষির মন।
এমন বিরুপ আবহাওয়ার মধ্যে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আম বিশেষজ্ঞ কৃষি স¤প্রসারণ দপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি অনুক‚লে রয়েছে। তাছাড়া দিন দিন বাড়ছে আমের বাগান। গত সাত বছরে রাজশাহী অঞ্চলে আমের বাগান বেড়েছে দ্বিগুনের কাছাকাছি। পরিসংখ্যানে দেখা যায় গত ২০১২ সালে এ অঞ্চলে আমের বাগান ছিল ৪২ হাজার ৪১৭ হেক্টর। আর এখন তা বেড়ে দাড়িয়েছে ৭০ হাজার ৩৪৬ হেক্টরে। এর বাইরে রয়েছে বাড়ির আঙ্গিনায় ছোট বাগান। সব মিলিয়ে যেমন বেড়েছে আমের বাগান। তেমনি বেড়েছে উৎপাদনও। ২০১২ সালে যেখানে আম উৎপাদন হয় তিনলাখ ৮৪ হাজার ৭৩ মে.টন। সেখানে গত বছর ২০১৮ সালে উৎপাদন হয়েছে ৮ লাখ ৬৬ হাজার ৩৬১ টন। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, রাজশাহীতে এক বছরে বেড়েছে পাঁচশো হেক্টর। এভাবে রাজশাহী, নবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আম বাগানের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। আম বাগান গড়ে উঠছে বাণিজ্যিক লক্ষ্য নিয়ে।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার ড. আলিম উদ্দিনের মতে বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আমের ফলন ভাল হবে। তাছাড়া এখন চাষিরা অনেক সচেতন। বছর জুড়েই বাগানের পরিচর্যা করেন। এসেছে হাইব্রীডসহ নানান আমের জাত। বিশিষ্ট আম গবেষক বাংলাদেশে ফুট ব্যাগিং আমের জনক হিসাবে খ্যাত ড. শরফ উদ্দিন বলেন এখন আম চাষ হচ্ছে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে পাঠানোর লক্ষ্য নিয়ে। বাগান মালিকরা নিবিড় যোগাযোগ রাখেন সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে। আগে আমের অনসিজন অফসিজন ছিল। বিজ্ঞানের কল্যাণে এখন তা আর নেই। প্রতি বছরই আমের ফলন হচ্ছে সমান তালে। আমের রাজ্য চাপাইনবাবগঞ্জের কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হুদা বলেন, ঝড় ঝাপটা ধারণ করে গাছে গুটি বাড়ছে।
এদিকে রাজশাহী অঞ্চলজুড়ে একই চিত্র দেখা যাচ্ছে উপরে গাছে গাছে গুটি গুটি আমের থোকার দুলনী। আর পাশেই বিস্তৃর্ণ এলাকাজুড়ে বোরো ধানের সবুজ ক্ষেত। চৈত্র মাসে খরতাপ না থাকা ও বৃষ্টির কারণে দু’ফসলেই সেচ কম লেগেছে। আমের থোকায় আর ধানের ক্ষেতে বাতাসের দুলনীর মন হরন করা দৃশ্যের সাথে আবাদকারীর মন দুলছে ভাল ফলনের প্রত্যাশায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ