পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশ্বের জনসংখ্যার অন্তত অর্ধেক মানুষ এখনো অপরিহার্য স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলোর পূর্ণ সুযোগ থেকে বঞ্চিত। প্রায় ১০০ মিলিয়ন মানুষ স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে গিয়ে দরিদ্র হয়ে পড়ছে। যাদের পক্ষে দৈনন্দিন পর্যাপ্ত খাবারটুকু জোগাড় করাও সম্ভব হয় না। এসব মানুষের পক্ষে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করা এক প্রকার অসম্ভব।
সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ তথ্য প্রকাশ করেছে। সংস্থার তথ্য মতে, বিশ্বব্যাপী ৮০০ মিলিয়ন মানুষ অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার প্রায় ১২ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে গিয়ে তাদের পরিবারের বাজেটের অন্তত ১০ শতাংশ ব্যয় করেছে। জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো সক্ষমতা উন্নয়ন লক্ষ্যগুলোর অংশ হিসেবে ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্যবিধি (ইউএইচসি) অর্জনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
সংস্থার মতে, সর্বজনীন স্বাস্থ্যবিধি কোনো একক বিষয় নয়। এমনকি বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের বিষয়ও নয়। মানব স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল বিষয় এতে অন্তর্ভুক্ত। সর্বজনীন স্বাস্থ্যবিধি হলো স্বাস্থ্যের সকল অনুষঙ্গ সকলের জন্য নিশ্চিত করা, যা অবশ্যই দেশের প্রত্যেক মানুষের সামর্থ্য অনুযায়ী। টেকসই সর্বজনীন স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে কাউকে যেন আবার দেউলিয়া হতে না হয়। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত উপাদান অন্তর্ভুক্ত থাকবে। বিশেষ করে, স্বাস্থ্য পরিষেবা সরবরাহ ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যকর্মী, স্বাস্থ্যের সুবিধাসমূহ এবং যোগাযোগে নেটওয়ার্ক, স্বাস্থ্যপ্রযুক্তি, তথ্যব্যবস্থা, গুণমান নিশ্চিতকরণ প্রক্রিয়া এবং সর্বোপরি এ সংক্রান্ত শাসন ও আইন। সর্বজনীন স্বাস্থ্যবিধি কেবল ব্যক্তিগত চিকিৎসা পরিষেবা নয়। এটি জনসংখ্যা ভিত্তিক সেবা। পাবলিক হেলথ ক্যাম্পেইনগুলো যেমন- বিশুদ্ধ খাবার পানি নিশ্চিত করা, মশার প্রজনন ক্ষেত্র নিয়ন্ত্রণ করা, নিরাপদ পয়ঃব্যবস্থা নিশ্চিত করা ইত্যাদি এতে অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ সর্বজনীন স্বাস্থ্যবিধিতে রোগ হওয়ার পর চিকিৎসার সেবা নিশ্চিতের প্রতি যতটা গুরুত্ব দেয়া হয়, একইভাবে সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার পরিবেশও নিশ্চিত করাতে সমান গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যদিও সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও ওয়ার্কশপেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের ৫৫ ভাগ মানুষ এখনো মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। এসব মানুষের স্বাস্থ্যসেবার প্রধান মাধ্যম এলাকার ওষুধের দোকানদার, কোয়াক ডাক্তার এবং নিজস্ব চিকিৎসা ব্যবস্থা। অর্থাৎ এরা কেউই নিবন্ধিত চিকিৎসকের সেবা পায় না। সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হলে অবশ্যই এই ৫৫ ভাগ মানুষের জন্য মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে গিয়ে ৬৭ ভাগ মানুষকে পকেট থেকে টাকা খরচ করতে হচ্ছে। যার ফলে প্রতি বছর ৫ শতাংশ মানুষ সহায়সম্বলহীন হয়ে পড়ছে, যা সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার পরিপন্থী। সর্বোপরি স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে গিয়ে কাউকে যেন পকেট থেকে ব্যয় করতে না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
তবে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মতে, দেশে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনের সফলতা আশাব্যঞ্জক। সরকার বর্তমানে জিডিপি’র ২ দশমিক ৮ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বর্তমানে ৭১ দশমিক ৮ বছর, যা ২০০০ সালে ছিল ৬৫ দশমিক ৫ বছর। শিশুদের টিকা দানের অর্জন ৯৪ শতাংশ। অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে ৬৫ শতাংশ মানুষকে। মাতৃ মৃত্যুর হার এখন প্রতি লাখে ১৭৬ জন, যা ২০০০ সালে ছিল ৩৯৯ জন। প্রতি ১০০০ জনে নবজাতকের মৃত্যু ২০০০ সালে ছিল ৪২ দশমিক ৬, যা ২০১৫ সালে কমে ২৩ দশমিক ৩-এ দাঁড়িয়েছে। পাঁচ বছরের নিচে শিশু মৃত্যুর হার প্রতি ১০০০ জনে ২০০০ সালে ছিল ৮৮, যা ২০১৫ সালে ৩৭ দশমিক ৬-এ এসেছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, দেশে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হয়েছে, যা সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার অংশ। তবে পূর্ণাঙ্গভাবে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হলে, মানুষের পকেট থেকে যেন বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আশা করছি, ২০৩০ সালের মধ্যে এটা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এ ক্ষেত্রে সর্বস্তরে স্বাস্থ্য বীমা চালু করতে হবে এবং সেটা আবশ্যই সরকারের তত্ত্বাবধানে। যাতে করে সবার মধ্যে অসুস্থ হওয়ার আগেই কিছু টাকা জমানোর মানসিকতা তৈরি হয়।
তবে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে তিনটি বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ। তিনি বলেন, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হলে প্রথমত, জিওগ্রাফিক কাভারেজ নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ দেশের সর্বত্র যেন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হয়। দ্বিতীয়ত, গুণগত মানের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। তৃতীয়ত, এই সেবা নিতে গিয়ে যেন কাউকে দরিদ্র হতে না হয়। তিনি বলেন, এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করা না হলে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিষ্ঠা দিবস হিসেবে প্রতি বছর ৭ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালিত হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস ২০১৯ উদযাপন উপলক্ষে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা : সবার জন্য, সর্বত্র’।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।