Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘দিনের মেঘে ধান রাতের মেঘে পান’

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ৭ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

‘দিনের মেঘে ধান, রাতের মেঘে পান’। তাহলে কী দেশে ধান-চাল আবাদ উৎপাদনের চেয়ে পানের বরজে ফলন বেশি হতে চলেছে! আবহাওয়ার মতিগতিতে তাম্বুল রসিকজনদের জন্য সুখবর! চারপাশের মাটি, গাছপালা, আলো-বাতাস, পরিবেশ-প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করেই ‘আবহাওয়া-জলবায়ুর পূর্বাভাস’ প্রদানে সক্ষম ছিলেন যার বহুল পরিচিত নামটি খনা। সুপ্রাচীন যুগে জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী এবং বিচক্ষণ বাঙ্গালী নারী সেই খনার প্রবাদ-প্রবচনগুলোতে দেয়া পূর্বাভাস আজও বাস্তবে ফলছে। যা সত্যিই এক বিস্ময়!
‘ধান’ কিংবা ‘পানে’র যেটিরই ফলন বাড়–ক না কেন; খনার বচন অনুসারে বর্তমানে চৈত্র শেষের বিচিত্র আবহাওয়া দৃশ্যমান। গত প্রায় এক সপ্তাহ যাবৎ চট্টগ্রাম অঞ্চলে দিনভর তীর্যক সূর্যের কড়া দহনের মাঝে সূচালো তীব্র গা জ্বলা ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে। অথচ অন্যদিকে রাত ৯টা থেকে ১১/১২টার দিকেই হঠাৎ পাল্টে যায় আবহাওয়ার স্বাভাবিক চালচিত্র। শুধু চট্টগ্রামই নয়; ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ অঞ্চলে তেমনি বিপরীতমুখী আবহাওয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
রাতের আকাশ হঠাৎ করেই ঘনঘোর মেঘে ঢেকে যায়। সেই সাথে শুরু হয় চৈতালী দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়া অথবা ধূলিঝড়। আবার কোথাও কোথাও কালবৈশাখী ঝড়ের তান্ডব। এর আগে ও পরে বিকট শব্দ সহকারে বজ্রপাত। তারপর নামে বৃষ্টি। এ বর্ষণ হয় ক্ষণিকের। কোথাও মুষলধারে, কোথাওবা হালকা থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত।
গত শুক্রবার রাত ৯টার পর চট্টগ্রামজুড়ে স্বাভাবিক আবহাওয়ায় ছন্দপতন ঘটে। হঠাৎ বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করে। ক্ষণিকের বর্ষণে সড়ক, রাস্তাঘাট, অলিগলিতে কাদা-পানি জমে যায়।
চৈত্র মাসের শেষ সপ্তাহ চলছে। বাংলা ১৪২৬ সালের পয়লা বৈশাখ দরজায় কড়া নাড়ছে। কেন এমন বিপরীতমুখী খেয়ালী আবহাওয়া?
পতেঙ্গা আবহাওয়া বিভাগ সূত্র জানায়, চৈত্র-বৈশাখের মাঝামাঝি সময়টাতে কালবৈশাখী ঝড়, বজ্রপাত, হঠাৎ বর্ষণ, শিলাবৃষ্টি, দমকা হাওয়া অনেকটা স্বাভাবিক। অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে বজ্রপাতের সাথে বজ্র-ঝড় ও টর্নেডোও হতে পারে। এরজন্য মানুষের সতর্কতা প্রয়োজন। হিমেল দমকা হাওয়ার সাথে বৃষ্টিপাতের ফলে সারাদিনের ভ্যাপসা গরম কেটে যায়। জনজীবনে নিয়ে আসে অপার স্বস্তি।
তবে গত কয়েকদিনে বজ্রপাতের সাথে কালবৈশাখী ঝড়ের কারণে বন্দরনগরী ও জেলা চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিচ্ছে।
বিদ্যুতের হাই ভোল্টেজ ও লো ভোল্টেজ নিত্যদিনের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে করে অনেক অফিস-আদালত, শিল্প-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং বাসাবাড়িতে বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট ও বিভিন্ন ধরনের গোলযোগের কারণে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বিকল হয়ে যাচ্ছে। অনেকেই এ ধরনের সমস্যার কথা জানান।
তেঁতুলিয়ায় ৭৫ মি.মি. বৃষ্টিপাত
পশ্চিমা লঘুচাপের সাথে পূবালী বায়ুমালার সংযোগের ফলে গতকাল (শনিবার) দেশের অধিকাংশ জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। বিক্ষিপ্তভাবে কোথাও কোথাও গুঁড়ি গুঁড়ি বর্ষণ, আবার কোথাও সাময়িক ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে দেশের সর্ব উত্তর-পশ্চিম প্রান্তের জনপদ পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়ায় ৭৫ মিলিমিটার।
এ সময় ঢাকায় ৪, টাঙ্গাইলে ১১, নিকলিতে ২২, ময়মনসিংহে ১, সীতাকুন্ডে ২, কুমিল্লায় ১২, রাজশাহীতে ২, রংপুরে ২৪ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়। তবে এ সময় খুলনা ও বরিশাল বিভাগে তেমন বৃষ্টি হয়নি।
আজ (রোববার) সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে।
সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যহত থাকতে পারে। এর পরের ৫ দিনে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল খেপুপাড়ায় ৩৫.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বর্তমানে পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ