Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

কর্ণফুলীতে উচ্ছেদ বন্ধ রাখার সুযোগ নেই

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৬ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

চট্টগ্রাম বন্দরের ধারক কর্ণফুলী নদীর তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ সাতদিনের মধ্যে ফের শুরুর আহবান জানিয়েছেন এ সংক্রান্তে উচ্চ আদালতে রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরশেদ। অন্যথায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ করবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
হাইকোর্টের নির্দেশনা বাইপাস করার বা সেটা থেকে দূরে থাকার কোনো সুযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, যদি এমন কিছু করেন তাহলে আপনাদের আদালত অবমাননার মুখোমুখি হতে হবে। কর্ণফুলী নদী পরিদর্শন শেষে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে বৃহস্পতিবার সন্ধায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন মনজিল মোরশেদ।
ফেব্রæয়ারির শুরুতে কর্ণফুলী নদীর তীরে উচ্ছেদ অভিযান শুরুর পর প্রথম ধাপের কাজ শেষে সেটি বন্ধ হয়ে গেছে। জেলা প্রশাসন বলছে, উচ্ছেদের পর উদ্ধার করা ভ‚মির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মহাপরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে। সেজন্য উচ্ছেদে সাময়িক বিরতি দেওয়া হয়েছে। আবার স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী চট্টগ্রামের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন কৌশলগত কারণে উচ্ছেদ আপাতত বন্ধ রয়েছে। এই অবস্থায় নয় বছর আগে জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিট করে কর্ণফুলী নদীর পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের আদেশ নিয়ে আসা আইনজীবী মনজিল মোরশেদ চট্টগ্রামে আসেন। কর্ণফুলী নদী পরিদর্শনের পাশাপাশি তিনি জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
মনজিল মোরশেদ বলেন, কথা বলে বুঝতে পারলাম, এখানে কিছু জটিলতা আছে। সেজন্য উচ্ছেদ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। আমি জেলা প্রশাসন ও বন্দরের কর্মকর্তাদের বলেছি যে, হাইকোর্টের নির্দেশনাটা বাইপাস করার বা সেটা থেকে দূরে থাকার কোনো সুযোগ নেই। উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ রাখার কোন সুযোগ নেই। আমি বলেছি, সাতদিনের মধ্যে যদি তারা উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু না করেন, তাহলে আদালত অবমাননার বিষয়ে হাইকোর্টে আবেদন করব। তখন তাদের জবাবদিহি করতে হবে।
উচ্ছেদে জটিলতার বিষয়ে তিনি বলেন, বড় সমস্যাটা হচ্ছে, নদীর তীরের অবৈধ স্থাপনার জরিপটা হয়েছিল ২০১৫ সালে। তখন যে তালিকা হয়েছিল, এর বাইরে গত চার বছরে আরও অনেক স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এখন তালিকায় থাকা একটি উচ্ছেদ করতে গেলে তো পাশেরটিও উচ্ছেদ করতে হচ্ছে। কিন্তু সেটি তো তালিকায় নেই। আমি বলেছি- হাইকোর্টের নির্দেশনা যেভাবে আছে, সেভাবে উচ্ছেদ করতে হবে। নতুন যেসব স্থাপনা আছে সেগুলোর বিষয়ে আবার হাইকোর্টের নির্দেশনা চাইব। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সেগুলোও উচ্ছেদ করতে হবে।
মনজিল মোরশেদ বলেন, এর আগে যেগুলো উচ্ছেদ করা হয়েছিল, সেগুলো ছিল জেলা প্রশাসনের খাস খতিয়ানভুক্ত। কিন্তু এর মধ্যে বড় একটা জায়গা আছে, যেটা মূলত বন্দরের। সেখানে কয়েক হাজার লোক আছে। তাদের পেছনে রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়া আছে। সে কারণে প্রশাসন ভয় পাচ্ছে। যারা উচ্ছেদ করতে গেছেন, তাদের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। এই নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি আমি আদালতের নজরে আনব। তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় উচ্ছেদ করতে হলে বন্দরের সার্বিক সহযোগিতা লাগবে। কিন্তু তাদের ওপর আদালতের কোনো প্রত্যক্ষ নির্দেশনা নাই।
আগামী সপ্তাহেই আমি হাইকোর্টে আবেদন নিয়ে যাব, যেন বন্দরের উপরও একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়। নগরীর চাক্তাই খালের পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয়েও আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। কর্ণফুলী নদীর তীরে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষ্ক্রিয় ভ‚মিকারও কঠোর সমালোচনা করেছেন তিনি। মনজিল মোরশেদ বলেন, পরিবেশ অধিদফতর একেবারে অকার্যকরভাবে কাজ করছে। নদী দখল করে এতগুলো স্থাপনা গড়ে উঠল, পরিবেশ অধিদপ্তর কি কিছুই দেখল না ? তাহলে এই অধিদপ্তর থেকে লাভ কি ? নদী-পাহাড় মনিটরিং করা তাদের দায়িত্ব। অথচ তারা তাদের দায়িত্ব পালন না করায় আমাদের আদালতে যেতে হয়।
২০১০ সালের ১৮ জুলাই হিউম্যান রাইটস পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে জনস্বার্থে করা রিট আবেদনে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ নদী দখল, মাটি ভরাট ও নদীতে সবধরণের স্থাপনা বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়। একইসাথে আদালত স্থানীয় প্রশাসনকে নদীর প্রকৃত সীমানা নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দিতে বলে। আদালতের নির্দেশের পর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু করে। এ নদীর প্রকৃত সীমানা নির্ধারণ করতে গিয়ে ২১৮১টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে ২০১৫ সালের নভেম্বরে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়।
এরপর চলতি বছরের ৪ ফেব্রæয়ারি কর্ণফুলীর তীরে নগরীর সদরঘাট থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু হয়। টানা পাঁচদিন অভিযান চালিয়ে প্রায় চারশটি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের মাধ্যমে ১০ কিলোমিটারেরও বেশি ভ‚মি দখলমুক্ত করা হয়। এর মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রথম পর্যায়ের অভিযান।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ