Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঐক্যফ্রন্টে বিএনপিতে ক্ষোভ

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ইস্যুতে ক্ষুব্ধ বিএনপির তৃণমূলের নেতারা। বিএনপির অনেক নেতাই মনে করেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর ২০ দলীয় জোট গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। একই সাথে বিএনপিও তার নিজস্ব রাজনৈতিক স্বকীয়তা থেকে দূরে সরে গেছে। মঞ্চে বসে ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতারা যখন বঙ্গবন্ধু-জয়বাংলা ইত্যাদি বলে মুখে ফেনা তোলেন অথচ চেয়ারপার্সনের মুক্তির কথা বলতে ভুলে যান তখন বিএনপির রাজনৈতিক স্বকীয়তা কোথায় থাকে? শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যে রাজনৈতিক দর্শন ও আদর্শ নিয়ে বিএনপি গঠন করেছেন তার বিপরীত আদর্শের ¯েøাগান যেখানে উচ্চকিত সেখানে নিজস্ব চেতনা কি ¤øান হয়ে যায় না? তৃণমূলের অনেক নেতাই এ ভাবে তাদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে একদলীয় শাসনের বিরুদ্ধে জাতীয় প্রয়োজনে ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়েছিল। ফ্রন্টের শরিক দল গণফোরামের দুই সদস্য সরকারের সাথে আঁতাত করে জাতীয় বেঈমানে পরিণত হয়েছে। যারা জাতীয় বেঈমান, সরকারের তাবেদার-দালাল তাদের ব্যাপারে সতর্ক হওয়া জরুরি। বিএনপির এখন দ্রæত নিজস্ব রাজনীতিতে ফিরে আসা উচিত। দলকে পুর্ণগঠন করে চেয়ারপার্সনের মুক্তির দাবি নিয়ে রাজপথে নামাই এখন প্রধান লক্ষ হতে হবে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে বিএনপির তৃণমুলের ক্ষোভ বিরাজ করছে। নির্বাচনের আগে ঐক্যফ্রন্ট যে সব দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সংলাপ করেছিল তার কোনটিই পূরণ হয়নি। তারপরও কেন ঐক্যফ্রন্ট অনেকটা চুপচাপ নির্বাচনে অংশ নিল এ বিষয়টি তৃণমূলের অনেক নেতার মনেই বিরাট প্রশ্ন হয়ে রয়েছে। এরপর নির্বাচনে ন্যাক্কারজনকভাবে যে ভোট ডাকাতির ঘটনা ঘটলো, ভোটের আগেরদিন রাতেই নৌকা মর্কায় সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরে রাখা হলো তারও কোন জোরালো প্রতিবাদ বা আন্দোলন হলো না কেন? এসব প্রশ্নের কোন সদোত্তর আজও পায়নি তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। নির্বাচনের পর সারা দেশের নেতাকর্মীরা বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষনার দাবি জানায়। তাদের দাবির পর ঐক্যফ্রন্ট থেকে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আজও কোন কর্মসূচী ঘোষিত হয়নি। চেয়াপার্সনের মুক্তির দাবিতে জোরালো আন্দোলন কর্মসূচি না দেয়ায় ঐক্যফ্রন্টের প্রতি বিএনপির নেতাদের ক্ষোভ আরও বাড়তে থাকে। আর গণফোরামের দুইজন সংসদ সদস্য হিসাবে শপথ নেয়ার পর সে ক্ষোভ এখন চরম আকার ধারণ করেছে। অনেকের প্রশ্ন করছেন, যে গণফোরামকে নিয়ে ঐক্যফ্রন্ট গঠন করতে গিয়ে ২০দলীয় জোটকে উপেক্ষা করা হলো তারাইতো আজ বেঈমানী করছে। যাকে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা করা হলো সেই গণফোরামের সদস্যরাই তার কথা শুনছেনা। তাহলে এই নেতাকে নিয়ে সফলতা কতটুকু আশা করা যায়?
ঐক্যফ্রন্টের দুই নেতার সংসদ সদস্য হিসাবে শপথ নেয়ার বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এরা বেঈমান। জনগণের সাথে বেঈমানি করেছে, প্রতারণা করেছে। এটা নিজের দলের সাথে, জনগণের সাথে এবং ঐক্যফ্রন্টের সাথে প্রতারণা।
নেতাকর্মীদের এই ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ইতোমধ্যে ঘটতে শুরু করেছে। সম্প্রতি জাতীয় প্রেসক্লাবে ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে আয়োজিত স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভায় শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন উপস্থিত কর্মীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন। বঙ্গবন্ধুর উদ্ধৃতি দিয়ে ড. কামাল হোসেন যখন বক্তব্য দিতে থাকেন তখন উপস্থিত নেতাকর্মীরা বলেন আমরা এসব শুনতে চাই না, স্বাধীনতার ঘোষকের কথা বলুন? তখন ড. কামাল তার বক্তব্য বন্ধ করে চুপচাপ বসে থাকেন। এরপর এক পর্যায়ে তিনি রাগে বেশ উত্তেজিত হয়ে যান। এর আগে দলীয় এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিবও নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েন। ঐক্যফ্রন্ট বিএনপিকে ভুল পথে চালিত করছে সেখানে নেতাকর্মীরা এমন দাবি তুলেন।
বিএনপির এক প্রবীন কেন্দ্রীয় নেতা মনে করেন, এখন দল পুর্নগঠনে মনোযোগি হওয়া খুবই জরুরি। দলের স্থায়ী কমিটির শূন্যপদগুলো দ্রæত পূণ করা উচিত। বছরের পর বছর স্থায়ী কমিটির অনেক পদ শূন্য রয়েছে। এগুলো ৭দিনের মধ্যে পূরণ করা যায়। দলের অন্যান্য কমিটি এবং সহযোগি ও অঙ্গ সংগঠগুলো দ্রæত পুর্নগঠন করে আন্দোলনে যেতে হবে। আর আন্দোলনে বিজয়ী হতে হলে শুধু শক্তি দিয়ে নয় বুদ্ধি দিয়েও নানা কৌশলে অগ্রসর হতে হবে।
শেরপুর জেলা বিএনপির নেতা মাহমুদুল হক রুবেল বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে বিএনপির কোন লাভ হয়নি, উল্টো বিএনপি তার নিজস্ব স্বকীয়তা হারাতে বসেছে। ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে আমাদের নানা প্রশ্ন শুনতে হচ্ছে। সবার জিজ্ঞাসা, ভোটের আগের দিন ২৯ ডিসেম্বরের রাতের নৌকা মার্কায় সিল মেরে বাক্স ভরার ঘটনা সম্পর্কে কেন্দ্রীয় নেতাদের জানানোর পর কেন কোন কর্মসূচি নেয়া হয়নি? তাহলে কি এর পিছনে অন্য কোন ষড়যন্ত্র আছে? এত প্রশ্নে মধ্যে সব চেয়ে বড় প্রশ্ন আমাদের প্রাণ প্রিয় নেত্রী এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাবন্দি। তাকে মুক্তির জন্য কেন কোন কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে না।



 

Show all comments
  • Kazi Nasir ৪ এপ্রিল, ২০১৯, ৪:১৫ এএম says : 1
    জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে বিএনপির কোন লাভ হয়নি, উল্টো বিএনপি তার নিজস্ব স্বকীয়তা হারাতে বসেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • সোহরাব ৪ এপ্রিল, ২০১৯, ৪:১৬ এএম says : 0
    বিএনপির উচিত সবাইকে সাথে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া।
    Total Reply(0) Reply
  • রিমন ৪ এপ্রিল, ২০১৯, ৪:১৬ এএম says : 0
    কিছু ক্ষোভ রাগ অভিমান তো থাকবেই।
    Total Reply(0) Reply
  • Mubarak Husain ৪ এপ্রিল, ২০১৯, ৪:১৮ এএম says : 0
    যাকে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা করা হলো সেই গণফোরামের সদস্যরাই তার কথা শুনছেনা। তাহলে এই নেতাকে নিয়ে সফলতা কতটুকু আশা করা যায়?
    Total Reply(0) Reply
  • আরিফ ৪ এপ্রিল, ২০১৯, ৪:১৯ এএম says : 0
    স্বার্থের কাছে সব কেন জানি ম্লান হয়ে যাচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Tahmid ৪ এপ্রিল, ২০১৯, ৬:০৫ এএম says : 0
    Oykowfront goton kore kharap kechu hoi nai,r bnpr treno mul ar neta kormira je fala chey,2014 saal election tara ke protirodh kore che lo.
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Abdus Sobur ৪ এপ্রিল, ২০১৯, ১০:২০ এএম says : 0
    We should choose any islami party Not BNP & Jamati.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঐক্যফ্রন্ট


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ