Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দেশের বিভিন্ন স্থানে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি : আহত ৩০

কালবৈশাখী ঝড় শিলাবৃষ্টি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে গতকাল কালবৈশাখী ঝড়, শিলাপাত ও বৃষ্টিসহ বজ্রবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে হঠাৎ কালোমেঘে ঢেকে যায় ঢাকার আকাশ। পরে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টিসহ শিলাপাতও হয়। এদিকে গতরাত পৌনে ১০টার দিকে চট্টগ্রামে বজ্রসহ মুষলধারে বৃষ্টিপাতে রাস্তায় পানি জমে যায়। তবে সারাদিনের ভ্যাপসা গরমের পর বন্দরনগরীতে স্বস্তি নেমে আসে। এছাড়াও গতকাল জয়পুরহাটে প্রচন্ড ঝড়ে টিনের চাল উড়ে এসে এবং গাছপালা পড়ে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। ঝিনাইদহে কোনো প্রকার বৃষ্টিপাত না হলেও শুধুমাত্র শিল পড়ে বাড়িঘরের টিন, আমের গুটি, লিচুসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো সংবাদে এসব তথ্য জানা গেছে।
স্টাফ রিপোর্টার জানান, ঢাকার উত্তরাংশে গতকাল দুপুরে হঠাৎ করে বৃষ্টির সাথে শিলাবৃষ্টি শুরু হলে রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনগুলো থমকে যায়। শিলাবৃষ্টি থেকে রেহাই পেতে কোনো কোনো গাড়ি আশ্রয়ের জন্য ছুটোছুটি করতে থাকে। কাছাকাছি থাকা গাড়িগুলোকে ফ্লাইওভারের নিচে আশ্রয় নিতে দেখা যায়। এ সময় মানুষজনকেও আশ্রয়ের খোঁজে দৌড়াতে দেখা গেছে। আবহাওয়া অফিস জানায়, গতকাল রাজধানীতে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু শিলাবৃষ্টি হয়েছে। তবে এতে ক্ষয়-ক্ষতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি। বৃষ্টির কারণে উত্তরা, গুলশান, বনানী, মিরপুর, মোহাম্মদপুর ও আশপাশের এলাকায় রাস্তায় পানি জমে যায়। তাতে যানবাহন চলাচলে বিঘœ ঘটে যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দুপুর ১২টা হতে পরবর্তী ১২ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী দমকা বা ঝড়োহাওয়া ও শিলাবৃষ্টিসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরসমূহের জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়- টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, সিলেট এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলসমূহের উপর দিয়ে পশ্চিম উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দর সমূহকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, পশিচমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছুজায়গায় এবং রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা-ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে। পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়া অফিস জানায়, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
চট্টগ্রামে কালবৈশাখী বজ্রবৃষ্টি বিদ্যুৎ বিভ্রাট
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, গতকাল মঙ্গলবার পৌনে রাত ১০টায় বন্দরগরীসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায়। এ সময় বিকট বজ্রপাতের সাথে মুষলধারে বৃষ্টিপাত হয়।
হিমেল দমকা হাওয়ার সাথে বৃষ্টির ফলে সারাদিনের ভ্যাপসা গরম কেটে যায়। জনজীবনে স্বস্তি আসে।
কালবৈশাখী ঝড়ের কারণে নগরী ও জেলা চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও বিভ্রাট দেখা দেয়।
অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে অনেক এলাকা। ভারী থেকে মাঝারি ধরনের বর্ষণে রাস্তাঘাটে পানি জমে যায়।

জয়পুরহাটে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি : আহত কমপক্ষে ৩০
জয়পুরহাট থেকে মোঃ আবু মুসা জানান, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার নওদা, বাগুয়ানসহ কয়েকটি গ্রামে কাল বৈশাখী ঝড়ে বেশ কিছু কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি, দোকানপাট লন্ডভন্ড হয়েছে। এ সময় কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছে। আহতদের উদ্ধার করে জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার মানুষ খোলা আকাশের নিচে রাত্রি যাপন করছে। পাঁচবিবি উপজেলার চেয়ারম্যান মুনিরুল শহিদ মুন্না, ধরঞ্জী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা জানান, পাঁচবিবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বজলার রহমান বলেন মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩ টার দিকে কাল বৈশাখী ঝড়ে তার ইউনিয়নের বাগুয়ান, নওদা সহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের বেশ কিছু কাঁচাপাকা ঘরবাড়ি, দোকানপাট লন্ডভন্ড হয়ে যায় এবং গাছ পালা উপড়ে দুমরে মুচরে যায়। এছাড়া ওই সব গ্রামের ঘরবাড়ি দোকান পাটের টিনের চালা উড়ে পাকা টিন সেডের ঘর বাড়ী ভেঙ্গে পড়ে।
এদিকে টিনের চালা ও গাছপালার ডাল ভেঙে পড়ে কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায়- পাঁচবিবি উপজেলার বাগুয়ান গ্রামের জুয়েল হোসেন (৪০), সাজ্জাদ হোসেন (২৮), কাওসার রহমান (৪১), নাসিমা বেগম (২৫), ইয়াসমিন খাতুন (২২), নওদাপাড়া গ্রামের আসলাম হোসেন (৩৪), আব্দুস সাত্তার (৪৬), দরগাপাড়া গ্রামের মন্সুর আলী (৬৫), পার্শ্ববর্তী সদর উপজেলার রাঘবপুর গ্রামের আব্দুল মতিন (২২), কালাই উপজেলার বানদিঘি গ্রামের জায়বর আলীকে (৪৬)কে উদ্ধার করে জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় মানুষের মাথা গোজার থাই ও খাবার নেই। খোলা আকাশের নিচে তারা রাত্রি যাপন করছেন। এদিকে রিপন লেখা পর্যন্ত ঐ এলাকায় ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় প্রশাসন উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন, রাজনৈতিক নেত্রীবৃন্দ সহ বিভিন্ন পর্যায় কর্মকর্তারা এলাকা পরিদর্শন করেছে।
ঝিনাইদহে বৃষ্টি ছাড়াই শিলা বর্ষণ!
মোস্তফা মাজেদ, ঝিনাইদহ থেকে জানান, ঝিনাইদহের পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি গ্রামে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বৃষ্টি ছাড়াই শুধু শিলাখন্ড বর্ষণের খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। অনেকের ঘরের টিন শিলা খন্ডের আঘাতে তছনছ হয়ে গেছে। মাঠের ফসল গুড়িয়ে গেছে। গাছের আম, লিচুসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। মানুষ শুধুই হা-হুতাশ আর বিলাপ করছে। সদর উপজেলার বংকিরা গ্রামের রফিকুল ইসলাম দুলু জানান, ধুসর মেঘ ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে ব্যাপকভাবে শিলাখন্ড পড়তে থাকে। প্রায় ২০ মিনিট ধরে শিলাখন্ড পড়ার পর ছিটেফোঁটা বৃষ্টি শুরু হয়। ওই এলাকার কৃষক ইছানুল বিশ্বাস জানান, এ ধরনের শিলাখন্ড পড়া তার জীবনে দেখেননি। তিনি বলেন, মাঠের ধানে থোড় গজিয়েছে। শিলা বৃষ্টিতে ধানের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হতে পারে। এদিকে হাজরা গ্রামের কৃষক হায়দার আলী জানান, বড় বড় সাইজের শিলায় তাদের এলাকায় ধানের পাশাপাশি শাকসব্জি ও পান বরজের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিলন কুমার ঘোষ বলেন, প্রতিদিনই শিলাবৃষ্টি ও ঝড় হচ্ছে। ফলে আমরা এখনো ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করতে পারিনি। তবে আমরা জানতে পারছি কোন কোন এলাকায় ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। তিনি বলেন, এ ধরনের দুর্যোগ থেকে একমাত্র আল্লাহ-ই রক্ষা করতে পারেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ