Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

পঞ্চম প্রজন্ম যুদ্ধ : তথ্যে পাকিস্তান এগিয়ে আছে ভারতের চেয়ে

ভ্যালু ওয়াক | প্রকাশের সময় : ২ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

পঞ্চম প্রজন্ম যুদ্ধ কী?
সভ্যতার উষালগ্ন থেকে মানুষ একে অন্যকে ধ্বংস করার নিত্যনতুন কৌশল রচনায় নিয়োজিত। ইতিহাস যখন থেকে লেখা শুরু হয়েছে তখন থেকেই দেখা যায়, মানুষ আদিম কিন্তু কার্যকর যুদ্ধাস্ত্র তৈরি করেছে। সময় আমাদের যুদ্ধের শিল্প-কৌশলের অনেক কিছুই শিখিয়েছে। এখন যাকে বলা হয় পঞ্চম প্রজন্ম যুদ্ধ (ফিফথ জেনারেশন ওয়ার) তা হচ্ছে কোনো সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি।
পঞ্চম প্রজন্ম যুদ্ধকে সহজ কথায় বলা যায় তথ্য নিয়ন্ত্রণ। কোনো সরকার যখন জনগণের একটি গ্রুপের ইচ্ছা দমন করতে চায়, তার নিজের নাগরিক হোক আর শত্রু পক্ষের লোক হোক, তথ্যের সতর্ক প্রকাশ হচ্ছে এক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর পন্থা। কোনো বিষয় আংশিক বর্ণনা করে অথবা কারো পক্ষে বিশদ বিবরণ দিয়ে একটি সুলিখিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি একটি ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়েও বেশি ফলপ্রসূ হতে পারে।
পঞ্চম প্রজন্ম যুদ্ধে পাকিস্তান অধিক অগ্রসর বলে ভারতের স্বীকার
সাম্প্রতিক এক বক্তব্যে ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক সাবেক কোর কমান্ডার সৈয়দ আতা হাসনাইন স্বীকার করেছেন যে পাকিস্তান এ ধরনের যুদ্ধে অত্যন্ত ভালো করেছে। স্পুটনিক তার বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলে, তিনি বলেছেন যে পঞ্চম প্রজন্ম যুদ্ধ কী করে করতে হয় তাদের (ভারতের) তা ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর সংবাদ মাধ্যম)-এর কাছ থেকে শেখা উচিত। পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদীদের শিবিরের কথা থাকার দাবি করে ভারত ইসলামাবাদের কাছে ডোশিয়ার (দলিলপত্র) দাখিল করার পর এক ব্রিটিশ থিংক ট্যাংকের কাছে তিনি এ কথা বলেন।
ডোশিয়ারে দাবি করা হয়েছে যে, কাশ্মিরের পুলওয়ামায় হামলায় ৪০ জনেরও বেশি ভারতীয় সৈন্যকে হত্যার জন্য দায়ী সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি পাকিস্তানের অভ্যন্তরে অবস্থিত। এ অঞ্চলে সহিংসতা চলমান। ভারত ও পাকিস্তান গত ৭০ বছরে ৩টি বড় যুদ্ধ করেছে। যাহোক, এবারই প্রথমবারের মত উভয়পক্ষই জনমত দমনের জন্য পঞ্চম প্রজন্ম যুদ্ধকে ব্যবহার করেছে।
পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাব
এই পঞ্চম প্রজন্ম যুদ্ধে নতুনতম তথ্য প্রকাশ করে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করেেেয, ভারতের এ বিশ্বাস ভুল যে, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয় দিচ্ছে। ৫৪ জনকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, এ পর্যন্ত পুলওয়ামা ঘটনার সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। অনুরূপভাবে ভারতের নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা ২২টি স্থান পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। সেখানে সন্ত্রাসীদের কোনো শিবির পাওয়া যায়নি। অনুরোধ করা হলে পাকিস্তান এসব স্থানগুলো পরিদর্শনের অনুমতি দিতে আগ্রহী।
ইসলামাবাদ ভারতের দাবি সম্পূর্ণ রূপে নাকচ করেনি, তার বদলে সুপারিশ করেছে যে তাদের তদন্ত অব্যাহত রাখতে ভারত সরকারের উচিত পাকিস্তানেেক আরো তথ্য-প্রমাণ সরবরাহ করা। পাকিস্তান যখন তার প্রতিবেশি দেশটির সাথে সহযোগিতা করার চেষ্টা করছে তখন জনসাধারণের জন্য প্রায়ই এ ধরনের বিবৃতি দেয়া হচ্ছে। এই যদি ঘটনা হয় তাহলে এ হচ্ছে প্রজন্মের যুদ্ধে আরেক কৌশল।
ভারতের সাম্প্রতিক উপগ্রহ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা
২৭ মার্চ ভারত তার নিজস্ব একটি কৃত্রিম উপগ্রহ ধ্বংসের লক্ষ্যে মহাকাশে একটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এ পরীক্ষার খবরটি মিডিয়ায় ব্যাপক ভাবে প্রচার করা হয়। এ কর্মসূচির সাথে যারা জড়িত, ভারতের শীর্ষ নেতারা তাদের প্রশংসা করেন। সামরিক শক্তির এ সরকারি প্রশংসা পঞ্চম প্রজন্ম যুদ্ধের আরেকটি দিক। ভারত প্রমাণ করতে চাইছে যে তারা নিম্ন পৃথিবী কক্ষপথে (লো আর্থ অরবিট) শত্রুর গুপ্তচরবৃত্তিতে নিয়োজিত কৃত্রিম উপগ্রহ ধ্বংসের ক্ষমতা অর্জন করেছে।
পঞ্চম প্রজন্ম যুদ্ধ এখন নিয়মিত বিষয়
পৃথিবীর প্রতিটি দেশই এখন তাদের কর্মসূচি প্রচারে আন্তর্জাতিক ও সামাজিক মাধ্যমকে ব্যবহার করার গুরুত্ব উপলব্ধি করে। আমেরিকার প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী ইরানি সমালোচকদের প্রতি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘৃণাপূর্ণ টুইট করা থেকে সারা বিশ্ব পঞ্চম প্রজন্ম যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে যা বেড়েই চলেছে। দেখা গেছে যে রাজনীতিকরা প্রকাশ্যে ক্রুদ্ধ বক্তব্য টুইট করছেন। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় একজন মার্কিন কূটনীতিকও জড়িয়ে পড়েন। মনে হচ্ছে, পঞ্চম প্রজন্ম যুদ্ধ এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নিয়মিত অংশ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ