Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্যবসায়ীদের দাবি প্রতিষ্ঠিত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

সব ধরনের পণ্য ও সেবায় ভ্যাটের হার কত হবে তা নিয়ে গত কয়েকবছর ধরে সরকার ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে যে টানাপড়েন চলছিল, অবশেষে তার অবসান হয়েছে বলে দাবি করেছে দুই পক্ষই। প্রস্তাবিত মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আইনে কর হার এক স্তর বা ১৫ শতাংশ হারে চালুর অবস্থান থেকে সরে এসেছে সরকার। 

গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে সরকার ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের মধ্যে দীর্ঘ দুই ঘন্টাব্যাপী বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে- ভ্যাটের হার হবে তিন স্তরে। ভ্যাটের হার হবে পাঁচ শতাংশ, সাড়ে সাত শতাংশ এবং দশ শতাংশ। সেক্ষেত্রে কোন পণ্যে পাঁচ শতাংশ হারে ভ্যাট বসবে, কোন পণ্যে সাড়ে সাত শতাংশ এবং কোন পণ্যে দশ শতাংশ হারে ভ্যাট বসানো হবে, তা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ঠিক করবে। তবে বিদ্যমান ১৫ শতাংশ হারেও ভ্যাট থাকবে; অবশ্য সেটি সিগারেট, মোবাইল ফোনসহ নির্দিষ্ট কয়েকটি খাতের জন্য। এছাড়া এখন ভ্যাট ছাড়ের ক্ষেত্রে বছরে ৩৬ লাখ টাকার যে ছাড় রয়েছে, সেটিকে ৫০ লাখ টাকায় উন্নীত করার বিষয়েও সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের দাবি প্রতিষ্ঠিত হলো।
ভ্যাট ও প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে গতকালের মতবিনিময় সভায় সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, অর্থসচিব আবদুর রউফসহ এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। অন্যদিকে বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই এর বর্তমান সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, নতুন সভাপতি হতে যাওয়া শেখ ফজলে ফাহিম, ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিনসহ অন্যরা।
সভা শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ভোক্তাদের ওপর কোনো বোঝা চাপানো হবে না। তারা যতটা বইতে পারবে, ততটাই ভ্যাট বসানো হবে। তিনি বলেন, মতবিনিময় সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, ভ্যাটের হার এক স্তর নয়, তিন স্তরে হবে। কোন পণ্যে কত শতাংশ বসানো হবে, তা শিগগিরই এনবিআর ঠিক করবে। অবশ্যই আমরা নতুন অর্থবছর থেকে ভ্যাট আইন কার্যকর দেখতে চাই। বাংলাদেশে সাধারণত প্রতিবার জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে বাজেট ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এবছর জুনের প্রথম সপ্তাহে ঈদের ছুটি থাকায় বাজেট ঘোষণার দিনক্ষণ জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে চলে যাবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। আসন্ন ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট আগামী ১৩ জুন সংসদে উপস্থাপন করা হবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। একই সঙ্গে বাজেট হবে সহজ ভাষায়। সবাই তা বুঝতে পারবে।
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আগামী অর্থবছরের শুরু থেকে ৫০ হাজার ইসিআর মেশিন দিয়ে আমরা যাত্রা শুরু করব। রাজধানীসহ বড় বড় শহরে বসানো হবে এসব ইসিআর মেশিন। এসব ইসিআর মেশিন পরিচালনার জন্য আমরা প্রতি দশটি মেশিনের জন্য একজন করে রাজস্ব কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেব। যাতে করে ভ্যাট জাতীয় কোষাগারে জমা পড়ে। পরবর্তীতে আমরা সরকারের গ্রোথ সেন্টারেও মেশিন বসাব। সেজন্য প্রয়োজনে আরো রাজস্ব কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে। শুধু জেলা ও উপজেলায় নয়; আমরা সারা দেশেই যেখানে ভ্যাট দেওয়ার সক্ষমতা আছে বেচাকেনা আছে সেখানে মেশিন বসাব। তবে অবশ্যই কাউকে হয়রানি করা হবে না। স্বচ্ছতার সঙ্গেই কাজটি করা হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশে ১৬ কোটি ৩০ লাখ মানুষের মধ্যে চার কোটি মধ্যম আয়ের মানুষ। কিন্তু কর দেয় মাত্র ১৬ লাখ। বিশ্বের সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশে জিডিপির অনুপাতে কর আদায়ের হার সর্বনি¤েœ। এটা বলতেও লজ্জা লাগে। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে মুস্তফা কামাল বলেন, ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা যাবে না এটা বলা যাবে না। তবে কাউকে কষ্ট দিয়ে ভ্যাট কিংবা রাজস্ব আদায় করা হবে না। কোনো ব্যবসায়ীকে ভ্যাটের জন্য হয়রানি করা হবে না। ব্যবসায়ীদের সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা হবে। ব্যবসায়ীরা যাতে কোন ধরনের সমস্যায় না পড়েন দিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করছি। কেননা বর্তমান সরকার ব্যবসাবান্ধব সরকার। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, সরকার ব্যবসায়ীদের জেলে পাঠাতে চায়না। বরং ব্যবসায়ীরা হয়রানী, ক্ষতিগ্রস্ত, দুদক, পুলিশ, জেল-জরিমানা এসব থেকে কিভাবে বাঁচতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করছি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ভ্যাট আইন-২০১২ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপাচাপিতে করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এবার তা বাস্তবায়ন করা হবে। কেননা রাজস্ব আদায় বাড়াতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই। যে কোনো দেশের ট্যাক্স জিডিপি রেশিও ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ। অথচ আমাদের মাত্র ১০ শতাংশ। এজন্যই সবাইকেই ভ্যাট দিতে হবে। তাহলে রাজস্ব আদায় বাড়বে।
মতবিনিময় সভা ব্যাংকের সুদের হার বেশি হওয়া নিয়েও আলোচনা হয়। এর আগে সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঋণের সুদের হার কেন কমছে না তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকের সুদের হার অবশ্যই যৌক্তিক হতে হবে। এখানে ঋণের পরিমাণ বাড়ছে, কিন্তু ঋণ আদায়ের হার কমছে। সুদের হার কত হলে ঋণগ্রহীতা তা পরিশোধ করতে পারবে, সুদের হার তাই ঠিক করা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান তার বক্তব্যে বলেন, সরকার ও ব্যবসায়ীরা মিলে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমি সেটিকে স্বাগত জানাই। এরমাধ্যমে সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটবে। এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনও একই কথা বলেন।
সভায় আলোচনা হয়, বাংলাদেশে এখনো জিডিপির অনুপাতে কর আদায়ের হার দশ থেকে সাড়ে দশ শতাংশ। এটাকে জিডিপির অনুপাতে ১৫ থেকে ১৬ শতাংশে নিয়ে যাওয়া জরুরি। তবে যেসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর বার্ষিক টার্নওভার ৫০ লাখ টাকার নিচে থাকবে, তাদেরকে ভ্যাটের আওতায় আনা হবে না বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন যেটি ৩৬ লাখ টাকা পর্যন্ত রেয়াত দেওয়া রয়েছে।#



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ