Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

গ্রাহকরা বিনিয়োগের ২০০ কোটি টাকা ফেরত পাননি

কুমিল্লায় হায় হায় প্রতিষ্ঠান আইসিএল

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে | প্রকাশের সময় : ৩১ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

কুমিল্লা অঞ্চলে আইসিএলের ৬টি শাখায় বিভিন্ন প্রকল্পের নামে বিনিয়োগ করা প্রায় দুইশ’ কোটি টাকা ছয় বছরেও ফেরত পাননি গ্রাহকরা। কান্না, ক্ষোভ নিয়ে সম্মিলিতভাবে আন্দোলনের পথে নেমেও টাকা ফেরতের আশ্বাস পাচ্ছেন না তারা। গ্রাহকদের বিনিয়োগের টাকা আইসিএলের সাথে জড়িত ছিল এমন একটি গ্রুপ আত্মসাৎ করেছে দাবি করেন আইসিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রতিষ্ঠানটির মূল উদ্যোক্তা শফিকুর রহমান।
সমবায়ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইডিয়েল কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড (আইসিএল) ২০০১ সাল থেকে কুমিল্লা শহরের কান্দিরপাড়, পদুয়ারবাজার এলাকাসহ চৌদ্দগ্রামে ৬টি শাখা অফিস খুলে দ্বিগুণ মুনাফার লোভ দেখিয়ে প্রায় এক লাখ গ্রাহকের কাছ থেকে হজ আমানত, ডিপিএস, মাসিক মুনাফা, দ্বিগুণ বৃদ্ধি আমানত, আবাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসায়িক, দেনমোহর আমানত এবং লাখপতি ও কোটিপতি ডিপোজিট স্কিম প্রকল্পের নামে অর্থ সংগ্রহ শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটি শুরু থেকে মাত্র তিন বছরে ঢাকার পুরানা পল্টনের প্রধান অফিসসহ কুমিল্লা ও দেশের অন্যান্য জায়গার ৩৬টি শাখা অফিসের মাধ্যমে কয়েক লাখ গ্রাহকের ৪৪৭ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। তারমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকদের একটি বড় অংশ কুমিল্লার। এসব গ্রাহকদের কেউ পেনশনের টাকা, কেউ ব্যাংকের জমানো টাকা উত্তোলন করে, কেউবা শেষ সম্বল জমি বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা জমা রাখে আইসিএলে। আইসিএলের আমানত ও ডিপোজিট স্কিম প্রকল্পে টাকা বিনিয়োগ করে কুমিল্লার কয়েক হাজার পরিবারের লক্ষাধিক গ্রাহক সর্বস্ব খুইয়ে এখন দিশেহারা।
প্রায় ১২ বছর চালু থাকার পর ২০১৩ সালের মার্চ মাসে আইসিএল বন্ধ হয়ে যায়। এরপরই কুমিল্লার বিনিয়োগকারীরা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুর রহমান ও অন্যান্যের বিরুদ্ধে প্রতারণা, চেক জালিয়াতি এবং অর্থ আত্মসাতের মামলা করেন। অন্যদিকে দুদকও অনুসন্ধান এবং তদন্তে নামে। গ্রাহকের মামলায় আইসিএল প্রধান শফিক ও তার স্ত্রী শামসুন নাহার মীনা জেলও খেটেছেন। কিন্তু গ্রাহকরা তাদের আমানত ও ডিপোজিটের টাকা ফেরত পায়নি। প্রায় ছয় বছর ধরে কুমিল্লার গ্রাহকরা বিনিয়োগের টাকা ফেরতের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। গ্রাহক সমন্বয় পরিষদও গঠন করা হয়েছে। কিন্তু আইসিএল প্রধান শফিক প্রতারিত গ্রাহকদের দাবি কর্ণপাত করছেন না। উল্টো বিভিন্ন সময় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন বিবৃতি দিয়ে নিজের দোষ ঢাকার ঢোল বাজিয়েছেন। লুঙ্গি আলম নামে এক ব্যক্তি আইসিএলের সাথে জড়িত থেকে গ্রাহকের টাকা আত্মসাত করেছেন বলে শফিক দাবি করে আসছেন। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য শফিকুর রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়া গ্রাহকরা শফিকের এ দাবিকে আইসিএলের ভাগাভাগির অভ্যন্তরীণ ঘটনা বলে মন্তব্য করেছেন। গ্রাহক সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান ও সদস্য সচিব আজমির হোসেন জানান, প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুর রহমান কুমিল্লার লাখো গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করে কমপক্ষে দুইশ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। শফিকের কারণে কুমিল্লার কয়েক হাজার পরিবার নি:স্ব। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা আইসিএল প্রতারণার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ