Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিনিয়োগবান্ধব সুদ

অর্থমন্ত্রীর সময়োপযোগী উদ্যোগ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

ব্যাংকিং সেক্টরে সুদের লাগাম টেনে ধরে শিল্প ও ব্যবসা বান্ধব কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে। এখন থেকে সব ধরণের ঋণে সুদ গুণতে হবে ৭ শতাংশ। যারা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ঋণ নিয়ে ঠেকে গেছেন অথচ ভালো ব্যবসায়ী তারাও বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন। আগামী ১ মে থেকে তারা মোট ঋণের ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে বাকী টাকা ১২ বছরে পরিশোধের সুযোগ পাবেন। সুদের হার চক্রবৃদ্ধির বদলে সবক্ষেত্রে ৭ শতাংশ হারে দিতে হবে। ব্যাংকিং সেক্টরে এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, যারা ভালো ঋণগ্রহিতা তাদের সুদের হার আমরা কমিয়ে দিচ্ছি। তাদের ডাউন পেমেন্ট হবে দুই শতাংশ। তাদের যা ঋণ আছে, সেই ঋণ থেকে তারা দুই শতাংশ পরিশোধ করবে। বাকি যে অ্যামাউন্ট (ঋণ) থাকবে, সেটার ওপরে আমরা ৭ শতাংশ সুদ নেব। আর ঋণ খেলাপিদের জন্যও সুযোগ দেয়া হচ্ছে। ব্যাংকিং সেক্টরে খেলাপি ঋণ কমানো এবং ব্যবসায়ীদের ঋণ দিয়ে বিনিয়োগমুখী করতেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। 

গতকাল সোমবার রাজধানীর শেরে বাংলানগরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিবদের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভ‚ঁইয়া এবং পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিএসইসির চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেনও উপস্থিত ছিলেন।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ ধরণের উদ্যোগে ব্যাংকে খেলাপি ঋণ কমে যাবে। আবার বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি সাধারণ ঋণ গ্রহিতারাও ঋণ নিয়ে ছোট ছোট ব্যবসা করতে উদ্যোগী হবেন। বিশেষ করে ব্যাংকগুলোতে যে দুরাবস্থা বিদ্যমান ছিল তা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
মূলত: ঋণ খেলাপিদের বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে ২০১৮ সালের মার্চে অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদ বখতকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু নির্বাচনের কারণে সে কমিটি কাজ শেষ করতে পারেননি। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে বসেছিলেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। সেই কমিটির সুপারিশেই ঋণ খেলাপিদের ঋণ পরিশোধের, অর্থাৎ ঋণ খেলাপি থেকে বেরিয়ে আসার একটি সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ঋণ খেলাপীদের আমরা ১২ বছর সময় দিচ্ছি। যার যা ঋণ আছে ছোট বা বড়, সবাই প্রথমে মোট ঋণের ২ শতাংশ পরিশোধ করবে। আর যে ঋণটা বাকী থাকবে, সেটার ওপর তারা ৭ শতাংশ সরল সুদ দেবে, চক্রবৃদ্ধি হারে দিতে হবে না। এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছি, শেষ করতে সর্বোচ্চ এক মাস সময় লাগবে। কিন্তু এটা কার্যকর হবে ১ মে থেকে। ঋণগ্রহিতাদের মধ্যে কেউ ভালো, কেউ অসাধু। যারা ভালো ঋণগ্রহিতা তাদেরকে সুযোগ দেব, আর অসাধুদেরকে এই সুবিধা দেয়া হবে না। অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল (এক) ডিজিটের হবে, এটা এতোদিন আমরা করতে পারিনি। এখন আমরা সিঙ্গেল ডিজিট নিজেরাই করে দিচ্ছি।
এক প্রশ্নের জবাবে মুস্তফা কামাল বলেন, যারা খারাপ ঋণগ্রহীতা, তাদের রেকর্ডই তো আছে। কারা ভালো আর কারা অসাধু ঋণগ্রহীতা, সেটা বের করার জন্য একটা স্পেশাল অডিটের ব্যবস্থা করেছি। এটা কাজ শুরু হবে। সেখান থেকেও জানতে পারব, কারা ভালো আর কারা খারাপ।
এ সময় অর্থমন্ত্রীর উদাহরণ দিয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, মনে করেন টাকা নিলাম, ১০ বছরে এক টাকাও দিলাম না, তাহলে আমি কি ভালো বা টাকা নিলাম দুই বছরেও এক টাকা দিলাম না, আমি কী ভালো। কিংবা ১০ বার আমি রপ্তানি করলাম, কিন্তু একবারও আমি ব্যাংকে টাকা ঢুকালাম না, তাহলে কী আমি ভালো- প্রশ্ন করেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী জানান, কখনও তারা যদি কোনো এক সময় মনে করে, সুদ করে চলে যাবে, সেই ব্যবস্থাও আমরা রেখে দিয়েছি। যদি মনে করি, এখন তাদের লেনদেন ভালো, স্ট্যাটিক ভালো, সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে আমরা নতুন করে একই ব্যাংক থেকে তাদেরকে ঋণ দেব। তাদেরকে অ্যাক্সিট (ঋণ থেকে বাইরে) দেয়ার জন্য আমরা এই ব্যবস্থা করছি। আমাদের দেশে অ্যাক্সিটের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। কিন্তু আমরা ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
নতুন ঋণের বিষয়ে তিনি বলেন, এখন থেকে যারা আসবে, তাদের জন্যও আমরা সুদের হার কমিয়ে দেব। একটা মার্কেট বেসড (বাজারভিত্তিক) সুদ হবে। সুতরাং সেটার ভিত্তিতে কেউ-ই লস করবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এরপরও যারা এই সুবিধা নিতে পারবে না। একেবারেই টাকা পরিশোধ করতে পারবে না তাদের জন্যও ব্যবস্থা আছে। আমরা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি করব। আমাদের ইনসলভেন্সি আইন তৈরি হচ্ছে। এই আইনের আওতায় নন-পারফর্মিং ঋণগুলো, সব ওই কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেয়া হবে। তারা এগুলো পাবলিক টেন্ডার দিয়ে বিক্রি করে যা পাবে, তা সরকারকে দিবে। এর মাধ্যমে তাদের ঋণের সুদ বাদ হয়ে যাবে।#



 

Show all comments
  • Babul ২৬ মার্চ, ২০১৯, ১২:৪৬ এএম says : 0
    Good Innitiative......Thanks Great Finnance minister A H M Mostafa Kamal
    Total Reply(0) Reply
  • Nahid Hassan ২৬ মার্চ, ২০১৯, ৩:২৩ এএম says : 0
    Thanks to Our Prime Minister who select a dynamic Finance Minister. Congratulation to Finance Minister, after liberation he is the first man who realize actual problem. It is a great news for the Business community. May Allah Bless him.
    Total Reply(0) Reply
  • জাবেদ ২৬ মার্চ, ২০১৯, ৩:২৪ এএম says : 0
    অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাহেবকে আমার কাছে যথেস্ট যোগ্য মানুষ মনে হচ্ছে
    Total Reply(0) Reply
  • Pabel ২৬ মার্চ, ২০১৯, ৩:৩৬ এএম says : 0
    চক্রবৃদ্ধি সুদের বিষয়টি কার্যকর হলে সাধারণ মানুষ যারা ঋণ নেয় তারা উপকৃত হবেন। চক্রবৃদ্ধি সুদের জাতাকলে তাদের পিষ্ট হতে হবে না। ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক উদ্যোগ নিতে তারা আগ্রহী হয়ে উঠবেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Nasir Hossain ২৬ মার্চ, ২০১৯, ৩:৩৬ এএম says : 0
    অর্থমন্ত্রীর এসব ইতিবাচক উদ্যোগ কার্যকর হলে ব্যাংকিং খাতসহ অর্থনীতির বিভিন্ন খাত গতি লাভ করবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Tanvir Ahmad ২৬ মার্চ, ২০১৯, ৩:৩৭ এএম says : 0
    চক্রবৃদ্ধি হারে সুদের ফলে গ্রাহকদের নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বর্তমান ব্যাংক ঋণে তিন মাস, চার মাস ও ছয় মাসে সুদের হিসাব করা হয়। সুদের উপরে আবারও সুদ বসানো হয়। আগামী বাজেট থেকে এটা তুলে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে। সুদের হিসাব আর চক্রবৃদ্ধি হারে হবে না, সরল হারে হবে। আমরা অর্থমন্ত্রীর এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।
    Total Reply(0) Reply
  • Golam Mustafa ২৬ মার্চ, ২০১৯, ৩:৩৮ এএম says : 0
    অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দায়িত্ব নিয়ে ব্যাংকিং খাতসহ অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের উন্নয়ন ও সংস্কারে উদ্যোগ নিয়েছেন এবং নিচ্ছেন। তার এই উদ্যোগ এবং কার্যকর হলে অর্থনীতির গতি যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি ব্যাংকিং খাতে সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরে আসবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mubarak Husain ২৬ মার্চ, ২০১৯, ১০:৪৬ এএম says : 0
    এ ধরণের উদ্যোগে ব্যাংকে খেলাপি ঋণ কমে যাবে। আবার বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি সাধারণ ঋণ গ্রহিতারাও ঋণ নিয়ে ছোট ছোট ব্যবসা করতে উদ্যোগী হবেন। বিশেষ করে ব্যাংকগুলোতে যে দুরাবস্থা বিদ্যমান ছিল তা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
    Total Reply(0) Reply
  • আবদুল মতিন ২৬ মার্চ, ২০১৯, ১০:৫১ এএম says : 0
    ঋণ খেলাপি বন্ধ করতে হবে না হলে কোন পদক্ষেপই কোন কাজে আসবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • ইমরান ২৬ মার্চ, ২০১৯, ১০:৫২ এএম says : 0
    দেশের উন্নয়নের জন্য এরকম আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী
    Total Reply(0) Reply
  • তুষার আহমেদ ২৬ মার্চ, ২০১৯, ১০:৫৫ এএম says : 0
    সরকার, মাননীয় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আশা করি এভাবে দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Imam Uddin Chowdhury ২৬ মার্চ, ২০১৯, ১২:৫২ পিএম says : 0
    অর্থমন্ত্রীকে এইসব উদ্যোগ নেওয়ার জন্য অন্তরের অন্তস্থল থেকে ধন্যবাদ জানাই এই উদ্যোগ অব্যাহত রাখার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করবো
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অর্থমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ