Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খালেদা জিয়াকে হত্যা করতে সরকার উন্মত্ত হয়ে উঠেছে

সংবাদ সম্মেলনে রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যা করতে উন্মত্ত হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে চরম প্রতিহিংসার বাসনা চরিতার্থ করতে পেয়ে বসেছে। তিনি পরিত্যক্ত অন্ধকার স্যাঁতসেতে কারাগারে ভয়াবহ ও চূড়ান্ত অসুস্থ দেশনেত্রীর যন্ত্রনার ছটফটানি দেখে আনন্দ উপভোগ করছেন। তিনি খালেদা জিয়াকে জীবিত দেখতে চান না। চিকিৎসার অভাবে গুরুতর অসুস্থ ৭৪ বছরের একজন নারীকে প্রহসনমূলক বিচারের জন্য কারাগারে স্থাপিত ক্যাঙ্গারু আদালতে টেনে-হিচড়ে প্রায় প্রতিদিনই হাজির করা হচ্ছে। দেশনেত্রীকে চলৎশক্তিহীন করার জন্য তাঁর সুচিকিৎসা করানো হচ্ছে না। কতটা অমানবিক নিষ্ঠুর হিংসুক ক্রুর হলে একজন প্রৌঢ় মহিয়সী নারীর ওপর এমন বর্বর নিপীড়ন চালানো সম্ভব হয়। গতকাল (বৃহস্পতিবার) বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বর্ণনা দিতে গিয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আদালতে আনার আগে তিনি (খালেদা জিয়া) অসুস্থতায় থরথর করে কাঁপছিলেন। বার বার বমি করছিলেন। মাথা সোজা রাখতে পারছিলেন না। মরণাপন্ন অবস্থার মধ্যে টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্যই দেশনেত্রীকে কোন চিকিৎসা না দিয়ে শেখ হাসিনার নির্দেশে জোর জবরদস্তি করে হুইল চেয়ারে বসিয়ে হাজির করা হয় ক্যাংগারু কোর্টে। আদালতে এনে বেগম জিয়াকে বসিয়ে রাখার পর তিনি চোখ মেলতে পারছিলেন না। মাথা স্থির রাখতে পারছিলেন না। বারবার মাথা কাত হয়ে যাচ্ছিল। আদালতে উপস্থিত আইনজীবীরাও তার এই অসুস্থ অবস্থা দেখে বিচলিত হয়ে পড়েন।
তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি সচেতন মানুষ এখন প্রশ্ন করছেন, কোন সুস্থ মস্তিস্কের মানুষ কি এতটা নির্মম-নির্দয় হতে পারেন? যিনি এটা করছেন, যার নির্দেশে দেশনেত্রীকে হত্যা প্রক্রিয়া চলছে তিনি কি করে নিজেকে মানুষ বলে পরিচয় দেন? তিনি কি করে প্রধানমন্ত্রী থাকেন? প্রধানমন্ত্রীর কথা ও কাজের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান। তিনি বলেন-আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা, আমার ক্ষমতার দরকার নাই, আবার মিডনাইট নির্বাচনের মাধ্যমে অবৈধ প্রধানমন্ত্রীত্ব ধরে রাখেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ধৈর্য্যরে একটা সীমা আছে। দেশনেত্রীকে হত্যা চেষ্টা বন্ধ করে আজই তাঁর পছন্দমত বিশেষায়িত ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করুন। তাঁকে মুক্তি দিন। জনগণের ধৈর্য্য ও সহ্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। সরকার যেন নিজেদেরকে অশুভ পরিণতির দিকে ঠেলে না দেয়। মিডনাইট ভোট ডাকাতির পর গোটা দেশের ভোট বঞ্চিত মানুষ এমনভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে আছে যে, গণবিস্ফোরন শুরু হলে গণভবনের ইট পাথরও থাকবে না। জনগণ কতটা ঘৃনা করছে এই সরকারকে তার সামান্য প্রমাণ হচ্ছে উপজেলা নির্বাচনে ভোটাররা ভোট দিতে না এসে তীব্র নীরব প্রতিবাদ করছে। ভোট কেন্দ্রে এখন কুকুর-বিড়াল আর পুলিশ ছাড়া কেউ আসছে না। মাংশ-খিচুড়ি খাইয়েও ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনতে পারছে না ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা।
সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, চোখ কান খোলা রেখে জনগণের দিকে তাকিয়ে দেখুন। তারা কি চাচ্ছে? তাদের ফুসেঁ ওঠার সময় এসেছে। গণতন্ত্রের মায়ের জন্য তাঁর আন্দোলনরত সন্তানরা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত হয়ে আছেন। সরকারের বিরুদ্ধে অভিমান, ক্ষোভ ও বিদ্রোহের জন্য জনগণ অগ্নিগর্ভ হয়ে আছে। যেকোন সময় জনতার বিস্ফোরন শুরু হবে-যা কল্পনাও করতে পারছেন না। ভোট না দিতে পারার প্রতিশোধ আর মা কে বাঁচানোর অবিনাশী অঙ্গীকারে তারা এই অবৈধ স্বৈরাচারের তখতে তাউস খানখান করে ফেলবে। তাই সরকারকে বলছি-আজই নিজেদের শোধরান। দেশনেত্রী ও বাংলাদেশের মা-কে মুক্তি দিন।
শেখ হাসিনা আজীবন ক্ষমতায় থাকার খোয়াব দেখছেন মন্তব্য করে রিজভী বলেন, স¤প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের এক আলোচনা সভায় বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রবর্তিত বাকশাল থাকলে নির্বাচন নিয়ে কোনো বির্তক থাকত না, প্রশ্ন উঠত না। বাকশাল ছিল সর্বোত্তম পন্থা। প্রধানমন্ত্রীর কথায় প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে, একদলীয় স্বৈরতান্ত্রিক বাকশাল পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের মতো বিনাভোটে, বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় আজীবন ক্ষমতায় থাকার খোয়াব দেখছেন শেখ হাসিনা। তিনি আগে-ভাগে জানিয়ে দেন তিনি কি করতে চাচ্ছেন। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, বাকশালের ভোট কোথায়? বাকশাল মানে তো একদলীয় ব্যবস্থা। তার মানে আওয়ামী সরকার ও তার যে প্রধান জনগণকে একেবারে বেকুব, একেবারে বোকা মনে করে। উনি মনে করেন, তার অবৈধ ক্ষমতার জোরে যা ইচ্ছা বলবেন, সেটাই মানুষ বিশ্বাস করবে। অথচ মানুষ এতো বেকুব নয়। মানুষ যদি বোকা হত তাহলে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন এবং উপজেলা পরিষদের দুই দফা নির্বাচনে ভোট দিতে কেন্দ্রে যেত।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবে রহমান শামীম, কেন্দ্রীয় নেতা এবিএম মোশাররফ হোসেন, আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন প্রমূখ। #



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ