পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আবহাওয়া পরিবর্তন ও পরিবেশ দূষণের ফলে দেশের গাছপালা ও প্রাণিকূল হুমকির মুখে। বিরূপ আবহাওয়া ও পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে দেশের অনেক প্রাণি বিলুপ্ত হতে চলেছে। বাংলাদেশে এক সময় প্রচুর বন্যপ্রাণি ছিল। অজ্ঞতা ও অবহেলার কারণে গত কয়েক দশকের ব্যবধানে দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে অনেক প্রানি। এর মধ্যে রয়েছে একশিঙা গন্ডার, বারশিঙা, প্যারাহরিণ, রাজশকুন, বাদিহাঁস, গোলাপীশির হাঁস, ময়ূর, মিঠাপানির কুমির ইত্যাদি।
বাংলাদেশে বর্তমানে ৩০টি প্রজাতির বন্যপ্রাণির অস্তিত্ব হুমকির মুখোমুখি বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। বিপন্ন প্রাণিসমূহের মাঝে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিতাবাঘ, হাতি, অজগর সাপ, কুমির, ঘড়িয়াল ইত্যাদি। বিগত শতাব্দীতেই বাংলাদেশে ১৯টি প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যার মাঝে অন্যতম হলো গন্ডার, বুনো মোষ, কালো হাঁস, নীলগাই, রাজশকুন ইত্যাদি। অনেক পরিবেশবিদের মতে এই জনপদে ২৭টি বন্যপ্রাণীর অস্তিত্ব বিপন্ন হয়েছে ও ৩৯টি প্রজাতি বাংলাদেশ হতে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং জনবসতির স্থাপনের ফলে বন-জঙ্গল উজার করা, খাল-বিল, পুকুর-ডোবা, নদী-নালা ভরাট করা, চাষাবাদে অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহারে ফলে পশু-পাখি এবং অন্যান্য জলজপ্রাণির জীবন আজ হুমকির মুখে।
এ বিষয়ে পরিবেশ, বন ও আবহাওয়া পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলেছেন, বাংলাদেশের বন্যপ্রাণি সংরক্ষণে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ বনবিভাগ সুন্দরবন সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতরে ৩টি এবং পদ্মা নদীর নগরবাড়ী আরিচা এলাকায় ৩টিসহ মোট ৬টি ডলফিন প্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে অভয়ারণ্য ঘোষণা করেছে। এছাড়া কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন ও সোনাদিয়া দ্বীপে সামুদ্রিক কাছিম ও পরিযায়ী পাখি সংরক্ষণে বনবিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। পরিযায়ী পাখির সংরক্ষণের জন্য পরিবেশ, বন ও আবহাওয়া পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের ভিত্তিতে ইস্ট এশিয়া অস্ট্রেলিয়ান ফ্লাই এশিয়ান প্লাইওয়ে নেটওয়ার্ক পার্টনারশীপের সম্মতিক্রমে বাংলাদেশে ২০১১ সালে টাঙ্গুয়ার হাওড়, হাকালুকি হাওড়, হাইল হাওড়, নিঝুমদ্বীপ ও সোনাদিয়া দ্বীপকে ফ্লাইওয়ে সাইট ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুল মতিন বলেন, পরিবেশ ও প্রাণিদের রক্ষায় জনসচেতনতার পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগ জরুরি। তবে দেশের বন এবং বন্যপ্রাণি রক্ষায় সরকারের পক্ষ থেকে যথার্থ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা যদি ১.৫ থেকে ২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পায় তবে ২০-৩০ শতাংশ গাছপালা ও পশু পাখির জীবন ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবীতে গ্রিন হাউস গ্যাসের প্রভাবে আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, ঝড়ঝঞ্ঝা, খরা, বন্যা, বরফ গলে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি ও পানি সংকট দেখা দিতে পারে। বিজ্ঞানীদের তথ্যানুযায়ী যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের কারণ, তাহলো ২০৮০ সালের মাঝে ১১০ থেকে ৩০০ কোটি মানুষ ভয়াবহ পানি সঙ্কটে পড়বে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে।
বৈচিত্রপূর্ণ অবস্থানের বিবেচনায় বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ জনপদ। সা¤প্রতিক সময়ের জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৩০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৬৫০ প্রজাতির পাখি, ১৪৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ১৫ জাতের উভচর প্রাণি, ৭০০ প্রজাতির সামুদ্রিক ও মিঠা পানির মৎস্য এবং ৫০০০ প্রজাতির উদ্ভিদের নমুনা বিদ্যমান। বাংলাদেশে প্রায় ৫০০০ এর বেশি সম্পূরক উদ্ভিদ রয়েছে। যার মাঝে ২২৪ প্রজাতির কাঠ উৎপাদনকারী বৃক্ষ। ১৩০টি প্রজাতি তন্তু উৎপাদনকারী উদ্ভিদ। এছাড়াও বাংলাদেশে ২৬ প্রজাতির ঘাস পাওয়া যায়।
বর্তমানে মিঠা পানিতে ২৬০ প্রজাতির স্থানীয় মাছ, ৩১ প্রজাতির বিদেশি মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি এবং সমুদ্রে ৪৭৫ প্রজাতির মাছ ও কমপক্ষে ১৬ প্রজাতির সামুদ্রিক চিংড়ি পাওয়া যায়। দেশে প্রাপ্ত ৪৫০ প্রজাতির শামুক ঝিনুকের মাঝে ৩০০টি উপকূল এলাকায় পাওয়া যায়। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির সহায়তায় সাস্টেইনেবল এনভায়রনমেন্ট ম্যানেজম্যান্ট কর্মসূচির অধীনে উন্নয়ন সমবায়ের প্রকাশিত বাংলাদেশের পরিবেশ বিষয়ক জনপ্রতিবেদনের তথ্য মতে বিগত ১৫-২০ বছর পূর্বে বাংলাদেশে যে ধরনের মাছ পাওয়া যেত বর্তমানে তার বহু কিছুই বিলুপ্ত অথবা বিলুপ্তির পথে।
২০ বছর আগে যে মাছ পাওয়া যেত তার মাঝে অন্যতম হলো- পুঁটি, টেংরা, মলা, মিহি, মাগুর, চাঁদা, ধূতরা, গুজা, বাগদা চিংড়ি, বোয়াল, শোল, বেলে, টেপা, ফলি, নারলি, গোটা নাইল্যা, পোগাল, খাঁটি পুঁটি, নেদাই, খাটা, পাবদা, আইড়, কালবাউশ, নৌয়ালি, শাল দাঁকা, শাংকা, বইরগর রাজ, গুজা, চিতল, শাতি, পোয়া, ভাঙনা, চিতল, ছোট পুতনি, খাটা চেং, কালজাটা, চেলা, বাগ, ধুরয়া, নালাছাতা, বাজয়ি, নাড়ালি, পিঠকাটা, রূপচাঁদা, কোনা টেংরা, কাজলী, বোম, ছুরি, গাং, বাঁশ পাতারি, বাকল, চাঁদা, রাজ, কলই, সরপুটি, কালুন, দোয়চেলা, মলা, ইচা, খইলশা, টাকি, চেউয়া, বাইম এবং বোটি ইত্যাদি।
পরিবেশ বিপর্যয় ও আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে দীর্ঘ হচ্ছে বিপন্ন বন্যপ্রাণির তালিকা। ফলে হারিয়ে যাওয়ার পথে ১৩ প্রজাতির মেরুদন্ডী প্রাণি। এর মধ্যে ১০টি স্তন্যপায়ী, দুটি পাখি এবং একটি সরীসৃপ প্রজাতির। বাংলাদেশে প্রায় ১১৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ীর মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বিপন্নপ্রায়। এর মধ্যে রয়েছে হাতি, উল্লুক, লজ্জাবতী বানর, চশমা-পরা হনুমান, এশীয় কালো ভল্লুক, মায়া হরিণ, সাম্বার হরিণ, মেছোবিড়াল, ভোঁদড়, খাটাশ, কাঠবিড়ালি, বাদুড়, ডলফিন, শজারু, গয়াল প্রভৃতি। কয়েক দিন আগে রাজধানীর উপকণ্ঠের নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলা থেকে একটি মেছোবাঘ উদ্ধার করে জাতীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। একসময় প্রায় দেশজুড়ে বাঘের বিচরণ থাকলেও এখন তা সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে শুধু সুন্দরবনে। সুন্দরবনের অন্য দুই বাসিন্দা মেছোবিড়াল ও ভোঁদড়ের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। আইইউসিএন রেড ডাটা বুকের তথ্যমতে, বাংলাদেশের মোট বন্যপ্রাণির প্রায় ১৫ ভাগ বিপন্ন। এ ছাড়া প্রায় ২৫ ভাগ সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই।
প্রকৃতি ও প্রাণি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আ ন ম আমিনুর রহমান বলেন, প্রাণিকূল জীবজগত তথা প্রকৃতির এক অপরিহার্য অঙ্গ। আমাদের অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয় তথা সুস্থতার সঙ্গে জীবনধারনের জন্যই প্রয়োজন সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যের। প্রাকৃতিক ভারসাম্য মানুষ তথা সমগ্র প্রাণি ও উদ্ভিদজগতের বেঁচে থাকার জন্য একান্ত অপরিহার্য। আর এ ভারসাম্য বজায় রাখতে সঠিক সংখ্যায় সকল প্রাণি ও উদ্ভিদ প্রজাতির বেঁচে থাকাটা অতন্ত জরুরি। এ জন্য সকলকে অবশ্যই পরিবেশ সংরক্ষণে সচেতন হতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।