পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অস্ত্র হাতে ঘাতক যখন মসজিদের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। তার পথে যাকে পাচ্ছিল তাকেই হত্যা করছিল। কিন্তু আবদুল আজিজ (৪৮) তখন ভয় পেয়ে পালাননি। বরং তিনি রুখে দাঁড়ান। তিনি প্রথমেই হাতের কাছে যা দেখতে পেয়ে কুড়িয়ে নেন তা ছিল একটি ক্রেডিট কার্ড মেশিন। তিনি বাইরে বেরিয়ে এসে খুনির উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বললেন- এখানে এসো।
শনিবার ক্রাইস্টচার্চে বার্তা সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) সাথে এক সাক্ষাতকারে এ ঘটনার বিবরণ দেন আফগানিস্তান থেকে আসা উদ্বাস্তু ও লিনউড মসজিদের মুসল্লিদের প্রাণ রক্ষাকারী আবদুল আজিজ। শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের লিনউড মসজিদে জুমআর নামাজের সময় হত্যাকান্ড চালানো বন্দুকধারী খুনিকে ধাওয়া করেন আবদুল আজিজ। তখন সে ভয় পেয়ে তার গাড়িতে উঠে পালিয়ে যায়। আরো অনেক মুসল্লির হত্যাকান্ড রুখে দিয়ে ‘হিরো’ হিসেবে প্রশংসিত হচ্ছেন তিনি। আজিজ বন্দুকধারীর দিকে ছুটে যাওয়ার সময় মসজিদে তার চার ছেলে ও কয়েক ডজন মুসল্লি ছিলেন। আজিজ বলেন, তিনি মনে করেন অন্য কেউ হলেও এটাই করত। নিউজিল্যান্ডের আধুনিক ইতিহাসের ভয়াবহতম এ গণহত্যায় ১৬ মার্চ এক বন্দুকধারী ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে গুলি চালিয়ে ৪৯ জনকে হত্যা করে। বন্দুকধারী প্রথমে আল নূর মসজিদে গুলি চালিয়ে ৪১ জনকে হত্যা করে। তারপর গাড়ি নিয়ে ৩ মাইল দূরে লিনউড মসজিদে গিয়ে গুলি চালিয়ে আরো ৭ জনকে হত্যা করে। আহত একজন পরে হাসপাতালে মারা যান।
সাদা শ্রেষ্ঠত্ববাদী ২৮ বছর বয়স্ক ব্রেন্টন ট্যারান্টের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। শনিবার একজন বিচারক বলেন, তার বিরদ্ধে আরো অভিযোগ আনার কারণ আছে। লিনউড মসজিদের ভারপ্রাপ্ত ইমাম লতিফ আলাবি বলেন, আজিজ বাধা না দিলে মৃত্যুর সংখ্যা আরো অনেক বেশি হত। তিনি বলেন, ১টা ৫৫ মিনিটের দিকে তিনি মসজিদের বাইরে একটি কন্ঠ শুনতে পান। তিনি নামাজ বন্ধ করেন ও জানাল দিয়ে বাইরে তাকান। তিনি কালো সামরিক ধরনের গিয়ার পরিহিত ও হেলমেটধারী এক লোকের হাতে একটি বড় অস্ত্র দেখতে পান। তিনি তাকে পুলিশ অফিসার বলে মনে করেছিলেন। তারপর তিনি দুটি মৃতদেহ দেখেন ও বন্দুকধারীর চিৎকার করে গালাগালি করা শুনতে পান। তিনি বলেন, তখন আমি বুঝতে পারি যে কিছু একটা ঘটেছে। এ একজন খুনি।
তিনি চিৎকার করে ৮০ জনেরও বেশি মুসল্লিকে শুয়ে পড়তে বলেন। তারা ইতস্তত করছিলেন। এ সময় একটি গুলি এসে জানালার কাঁচ ভেঙ্গে একজনের গায়ে লাগলে তিনি পড়ে যান। তখন লোকজন আসল ঘটনা বুঝতে পারে। আজিজের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সময় এই ভাই আসেন। তিনি বন্দুকধারীকে ধাওয়া করেন ও কাবু করতে সক্ষম হন। এর ফলে আমরা বেঁচে যাই। লোকটি যদি মসজিদে ঢুকতে পারত তাহলে আমরা সবাই হয়ত মারা যেতাম।
আজিজ বলেন, তিনি চিৎকার করে ছুটে যেতে যেতে ঘাতকের মনোযোগ সরাতে চাইছিলেন। তিনি বলেন, হত্যাকারী আরেকটি অস্ত্র আনার জন্য তার গাড়িতে ফিরছিল। সে সময় আজিজ তার দিকে ক্রেডিট কার্ড মেশিনটি ছুড়ে মারেন। তিনি বলেন, তিনি ফিরে আসার জন্য তার উদ্দেশ্যে তার ১১ ও ৫ বছর বয়সী দু’ ছেলের ডাক শুনতে পাচ্ছিলেন।
আজিজ বলেন, ঘাতক অস্ত্র নিয়ে ফিরে এসে গুলি করতে থাকে। তিনি দৌঁড় দেন ও বারান্দায় পার্ক করা গাড়িগুলোর মধ্য দিয়ে দৌঁড়াতে থাকেন। ফলে বন্দুকধারী সরাসরি তাকে গুলি করতে পারছিল না। এ সময় আজিজ বন্দুকধারীর ফেলে দেয়া অস্ত্রটি দেখতে পেয়ে হাতে নেন। কিন্তু ট্রিগার টিপে দেখেন যে তাতে গুলি নেই। এ সময় বন্দুকধারী আরেকটি অস্ত্র আনার জন্য দ্বিতীয়বার গাড়ির দিকে যায়। সে গাড়িতে ওঠে। আমি তার গুলিশূন্য অস্ত্রটি তীরের মত গাড়ির জানালায় ছুড়ে মারি। তাতে কাঁচ ভেঙ্গে যায়। ফলে খুনি ভয় পেয়ে যায়।
তিনি বলেন, খুনি তাকে গালি দিতে থাকে ও বলে যে সে সবাইকে খুন করতে যাচ্ছে। কিন্তু সে গাড়ি নিয়ে চলে যায়। তিনি তার গাড়িটি ধাওয়া করেন। কিন্তু সামনের ট্র্যাফিক সিগন্যালে লাল আলো দেখে ঘাতক গাড়ি ইউটার্ন নিয়ে পালিয়ে যায়। অনলাইন ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ গাড়িটি থামাতে সক্ষম হয় ও লোকটিকে আটক করে।
আবদুল আজিজ আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের মানুষ। বালক বয়সে উদ্বাস্তু হিসেবে তিনি দেশ ছাড়েন। ২৫ বছরে অস্ট্রেলিয়ায় থাকার পর দু’বছর আগে নিউজিল্যান্ডে আসেন। তিনি বলেন, আমি অনেক দেশে ছিলাম। নিউজিল্যান্ড একটি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ দেশ। আজিজ বলেন, বন্দুকধারী খুনির মুখোমুখি হতে তিনি ভয় পাননি। তার বিশ্বাস, আল্লাহ এ সময় তার মৃত্যু লেখেননি।
উল্লেখ্য, নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড পত্রিকা আবদুল আজিজকে লিনউড মসজিদের খাদেম বলে জানিয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।