Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ড. সামাদ বেঁচে আছেন, আশাবাদ পরিবারের

কনসাল জেনারেলের ওপর ক্ষোভ

মো. শামসুল আলম খান | প্রকাশের সময় : ১৭ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষিতত্ত¡ বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আব্দুস সামাদের স্ত্রী বেঁচে আছেন এবং তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ বলে দাবি করেছেন ঢাকায় বসবাসরত জ্যেষ্ঠ ছেলে তোহা মোহাম্মদ (৩৮)।
নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশের অনারারি কনসাল শফিকুর রহমান অণু সন্ত্রাসীর গুলিতে ড. আব্দুস সামাদের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করলেও এই তথ্য মানতে নারাজ ছেলে তোহা। তিনি জানান, আমরা আশাবাদী বাবা এখনো বেঁচে আছেন। আরো এক থেকে দুইদিন পর পুরো বিষয়টি খোলাসা হবে।
শনিবার বিকেলে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে মোবাইলে আলাপে এসব জানান ছেলে তোহা মোহাম্মদ। তোহা স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে ঢাকার মিরপুরের একটি বাসায় থাকেন। তিনি একটি বেসরকারি ফার্মে চাকরি করেন।
ড. আব্দুস সামাদ নাগরিকত্ব নিয়ে স্ত্রী কেশোয়ারা সুলতানা (৫৮), দুই ছেলে তারেক মোহাম্মদ ও তানভীর মোহাম্মদকে নিয়ে নিউজিল্যান্ডে স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন। এর মধ্যে তারেক সেখানে একটি ফার্মে চাকরি করেন আর তানভীর এখনো পড়াশোনা করছেন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত¡ বিভাগে চাকরি ছেড়ে ২০১৩ সাল থেকে ড. আবদুস সামাদ নিউজিল্যান্ডে বসবাস শুরু করেন। তিনি ১০ থেকে ১২ বছর আগে স্থানীয় লিংকন ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করতেন। হামলার শিকার আল নুর মসজিদের মোয়াজ্জিনও ছিলেন তিনি।
‘আব্বা হাসপাতালে। তিনি জীবিত নাকি মৃত এটা জানি না’ এমনটি জানিয়ে জ্যেষ্ঠ ছেলে তোহা মোহাম্মদ বলেন, ‘শুক্রবার দিনগত রাত ১২টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত (বাংলাদেশের সময়) আম্মার সঙ্গে কথা হয়েছে। আম্মা ভালো এবং সুস্থ আছেন। তিনি আব্বার সঙ্গে মসজিদে যাননি।’
‘আম্মাকে বললাম, সারা বাংলাদেশের সমস্ত লোক জানে তুমি মারা গেছো। শুনে আম্মা হাসলেন। আম্মাকে বললাম, আব্বার খবর কী? আম্মা বললো, তোমার আব্বার খবর আমরা জানি না’।
তিনি বলেন, নিউজিল্যান্ড কর্তৃপক্ষ ওখানে নিখোঁজদের জন্য একটি সিস্টেম খুলেছে। আব্বাকে পাচ্ছি না সেখানে পোস্ট করে তারা (দুই ভাই) ঘুমিয়েছে। এখনো পর্যন্ত কোনো আনসার আসেনি। কি হয়েছে, না হয়েছে শিগগির জানা যাবে।’ তোহা আরো বলেন, ‘আব্বা গুলি খেয়েছে এটা অনেকে দেখেছে। কেউ বলে বুকে, কেউ হাঁটুতে, কেউ বলে মাথায়, কেউ বলে ঘাড়ে গুলি খেয়েছে। উনি হাসপাতালে এটাই সবাই জানে। বেঁচে আছে না কী মারা গেছে তা আমরা জানি না। সকালে ঘুম থেকে উঠেই আম্মা ও দুই ভাই হাসপাতালে গেছে। ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ক্রাইস্টচার্চের হাসপাতালে অবস্থান করেও তারা কোনো কিছুই শনাক্ত করতে পারেননি।
ক্রাইস্টচার্চে হাসপাতালে লাশ শনাক্তে বিলম্ব হওয়ায় স্থানীয় লোকজন ক্ষোভে ফুঁসে উঠছেন বলেও জানান তোহা মোহাম্মদ (৩৮)। তিনি বলেন, ‘মায়ের সঙ্গে শনিবারে কয়েকবার আমার কথা হয়েছে। সেখানকার লোকজন খুবই উত্তেজিত। শান্তি ও স্বর্গের দেশে এমন বর্বর সন্ত্রাসী হামলা তাদের বিক্ষুব্ধ করছে। স্বজন হারানোর বেদনায় তারা কাতর।’
বাবা’র সম্পর্কে বলতে গিয়েই গলা ধরে আসে তোহা’র। নিজেকে সামলে বলেন, ‘আমরা আশাবাদী আব্বা বেঁচে আছেন। আবার পরিস্থিতিও অনুধাবন করছি। আমার আম্মা খুব শক্ত মনের মানুষ। তবে আমরা চিন্তিত আমার দুই ছোট ভাইকে নিয়ে। আম্মাকে নিয়ে কোনো টেনশন নেই। ভাগ্যের ওপর সবকিছু ছেড়ে দিয়েছি।’
শনিবার (বাংলাদেশ সময় সকালে) নিউজিল্যান্ডের পুলিশ কমিশনার ক্রাইস্টচার্চে হাসপাতালে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় অপেক্ষারত স্বজনদের সঙ্গে এসে কথা বলেন। মায়ের বরাত দিয়ে সেই তথ্য জানিয়ে তোহা মোহাম্মদ বলেন, ‘লাশ শনাক্ত করতে কতোদিন সময় লাগবে এই প্রশ্ন পুলিশ কমিশনারকে করেছিলেন সবাই।
তখন তিনি বলেছিলেন শুক্রবার পর্যন্ত সময় লাগবে। তখন স্থানীয় লোকজন বিক্ষোভ প্রকাশ করলে তিনি বলেন আরো এক থেকে দুই দিন সময় লাগবে। এর মধ্যেই সবারটা শনাক্ত হয়ে যাবে।’
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুই মসজিদে গুলি চালিয়ে হতাহতের ঘটনায় আহতদের মধ্যে ১০ থেকে ১২ জনকে সরকারিভাবে বিভিন্ন শহরে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে বলেও নিজের পরিবারের বরাতে জানান তোহা মোহাম্মদ।
তিনি জানান, ‘ওই সময় তাৎক্ষণিক অনেক রোগীকে এয়ার প্লেনে করে বিভিন্ন শহরের হাসপাতালে নিয়ে গেছে। এদের সংখ্যা হবে ১০ থেকে ১২ জন।
ওই সময় যাদের দ্রুত অপারেশন দরকার ছিলো তাদেরকেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাড়াহুড়া করে নিয়ে যাওয়ার ফলে এদেরও শনাক্ত করা হয়নি। এজন্য সময় লাগবে, বলছিলেন তোহা।
নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশের অনারারি কনসাল শফিকুর রহমান অণু সন্ত্রাসীর গুলিতে ড. আব্দুস সামাদের সঙ্গে তার স্ত্রী কেশোয়ারা সুলতানারও মৃত্যু হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে প্রথম দিকে জানানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাদের সেখানে অবস্থানরত দুই সন্তান তারেক মোহাম্মদ ও তানভীর মোহাম্মদ।
এই তথ্য জানিয়ে তোহা মোহাম্মদ বলেন, ‘কনসাল জেনারেলকে আমার ছোট ভাই বলছে, আমার আম্মা বেঁচে আছে। হাসপাতালের সামনেই দাঁড়িয়ে আছেন। আপনি কেন বলেছেন, আম্মা মারা গেছে? পরে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন।’
প্রসঙ্গত, নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে উগ্র মুসলিমবিদ্বেষ থেকেই দুই মসজিদে গুলি চালিয়ে ৪৯ মুসলিমকে হত্যা করে অস্ট্রেলীয় সাদা নাগরিক ব্রেন্টন ট্যারান্ট। এই হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে চারজনকে আটক করেছে পুলিশ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ