পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টা। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের সামনের রাস্তায় ৮-১০টি রিকসার জটলা। সবাইকে দেখে কিছুটা অস্বাভাবিক মনে হলো। মিনিট পাঁচেক তাদেরকে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেল একজন অন্যদের কাছ থেকে ৩০ থেকে ৫০ টাকা করে চাঁদা নিলো। পরে অন্য একজন একটি রিকসা নিয়ে চাঁনখারপুল মোড়ের দিকে গিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যেই আবার ফিরে আসে। তাকে ফিরতে দেখে আরেক রিকসা চালক রিকসার গদি খুলে একটি সিরিঞ্জ বের করে। এরপরে একটি ইনজেকশনের শিশি নিয়ে সিরিঞ্জে ভর্তি করে প্রত্যেকের শরীরে নির্দিষ্ট পরিমাণে পুশ করে দেয়। অন্তত ১৫ জনকে একটি সিরিঞ্জ ব্যবহার করে নেশা জাতীয় কিছু শরীরে ঢুকাতে দেখা গেলো। নেশা গ্রহনের এমন চিত্র একদিনের নয়। প্রতিদিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কিছু এলাকাসহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে এমন চিত্র চোখে পড়ে। মাদকাসক্তদের কাছে ঢাবি ও ঢামেক এলাকা যেন মাদক সেবন ও বিক্রির ‘হটস্পট’।
শিক্ষার্থী, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মূল ভবনের সামনের সড়কে, নব নির্মিত বার্ন ইনস্টিটিউিটের কোনা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল, চানখাঁরপুলসহ আশপাশের অনেকগুলো স্পটে প্রকাশ্যে এমন মাদক সেবন ও কেনাবেঁচা চলে। এ সব জায়গায় গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিল ও নেশাজাতীয় ইনজেকশন পাওয়া যায়। তবে ঢাকা মেডিক্যাল এলাকায় সব থেকে বেশি আনাগোনা ‘ইনজেকশন’ দিয়ে মাদক গ্রহনকারীদের। ঢাকা মেডিক্যাল ও আশপাশের বেশিরভাগ মাদকসেবীরা ইনজেকশনের মাধ্যমে নেশা গ্রহন করে থাকে। এর বাইরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েল বিভিন্ন স্পটে ইয়াবা ও গাঁজা সেবন ও বিক্রয়কারীদের আনাগোনা বেশি। সারা দেশে মাদকবিরোধী জোড়ালো অভিযান চললেও এখানে প্রকাশ্যে মাদক সেবন ও কেনাবেঁচা চলে।
স্থানীয় বাসীন্দা ও ফার্মেসি দোকানদারদের ভাষ্য, কথিত এনজিওর আড়ালে এক শ্রেণির লোকজন ইনজেকশন সরবরাহ করে থাকে। এছাড়া কিছু কিছু ফার্মেসির অসাধু দোকানীরাও অধিক লাভের আশায় তাদের কাছে চড়া দামে ইনজেকশন ও সিরিঞ্জ বিক্রি করে। ইনজেকশন গ্রহনকারীদের বেশিরভাগই ভাসমান লোকজন। তাদের কারো ঘরবাড়ি বা পরিবার থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে পরিবারের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। স্থানীয়রা বলেন, মাদকসেবী ও বিক্রেতাদের কেউ রিকসা চালায় আবার কেউবা ভাঙারি কুড়িয়ে বিক্রি করে। এখানে উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলে মেয়েরা কম আসে। তবে মাঝে মধ্যে উচ্চবিত্ত পরিবারের কেউ কেউ ইনজেকশনের মাধ্যমে নেশা করতে আসে। এছাড়া ভাসমান নারীদের পাশাপাশি পরিবারের সাথে থাকা অনেক নারীও এখনে এসে গাঁজা ও ইয়াবা সেবন ছাড়াও ইনজেকশনের মাধ্যমে নেশা গ্রহন করে।
ঢাবির অমর একুশে হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, এখানকার বেশিরভাগ মাদকসেবী ছিন্নমূল। যার কারণে মাঝে মধ্যে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করলেও আবার ছেড়ে দেয়। তবে অনেক সময় বইরে থেকে আসা মাদকসেবীদের আটক করে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।
এসব শিক্ষার্থীরা বলেন, অভিযান চালানো হলেও অবস্থার কোন পরিবর্তন হয় না। অভিযান শেষ হওয়ার ঘণ্টাখানিকের মধ্যেই আবারও সব কিছু আগের অবস্থায় ফিরে আসে। তারা বলেন, কয়েকটি সিন্ডিকেট এসব এলাকায় মাদক বিক্রি করে থাকে। এছাড়া ছাত্রদের মধ্যেও কেউ কেউ মাদক কেনাবেঁচার সাথে পরোক্ষভাবে জড়িত। যার কারণে অভিযান চালানোর পরেও মাদক কেনাবেঁচা বহাল তবিয়তে টিকে থাকে।
গত কয়েকদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিক্যালের বিভিন্ন স্পটে সরেজমিনে মাদক সেবন ও বিক্রির এমন চিত্র দেখা গেছে। এর মধ্যে শাহবাগের ছবির হাট, টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বরের দিকে যেতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সীমানা প্রাচীর ঘেষা ফুটপাথ, শহীদ মিনার, শেখ রাসেল টাওয়ারের সামনে জগন্নাথ হলের সীমানা প্রাচীরের ফুটপাথ, ঢাকা মেডিক্যালের প্রশাসনিক ভবনের সামনের সড়ক, শহীদুল্লাহ হলের পাশ্ববর্তী কয়েকটি স্পট ও চানখাঁরপুল মোড়সহ অনেকগুলো স্পটে প্রকাশ্যে মাদক সেবন করতে দেখা গেছে। এর মধ্যে ছবির হাট, টিএসসি ও জগন্নাথ হল সংলগ্ন ফুটপাথে গাঁজা সেবন করতে দেখা গেছে। ঢাকা মেডিক্যাল, চানখাঁরপুল ও শহীদুল্লাহ হল সংলগ্ন এলাকায় ইয়াবা ও ইনজেকশন দিয়ে নেশা করতে দেখা গেছে। এসব মাদকসেবীরা প্রকাশ্যে নেশা গ্রহন করলেও তাদেরকে পথচারী বা অন্য কাউকে বাধা দিতে দেখা যায়নি। মনে হলো, প্রতিদিন একই চিত্র দেখে সবাই অভ্যস্ত হয়ে গেছে।
বুধবার সন্ধ্যার পরে টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সীমানা প্রাচীরের ফুটপাথে ৮-১০ জন যুবককে গান করছিল। তাদের পাশেই কয়েকজন প্রকাশ্যে গাঁজা তৈরি করছে। মিনিট পাঁচেক পড়ে সিগারেটের ভেতরে গাঁজা ভর্তি করে সবাই দুই তিন টান করে দেয়। এভাবে ঘণ্টাঘানিক একের পর এক সিগারেটে করে গাঁজা সেবন করে যায়। ঢাবির শিক্ষার্থীরা বলেন, মাদক সেবীদের বেশিরভাগই বহিরাগত। সন্ধ্যার পরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বন্ধ থাকায় তারা এখন ফুটপাথে বসে গাঁজা সেবন করছে। তবে দিনের বেলা উদ্যানের ভেতরেই থাকে। এসএম হলের আবিদ রহমান পলাশ বলেন, প্রকাশ্যে মাদক সেবন করলেও কেউ কিছু বলে না। মাঝে মধ্যে পুলিশকে লোক দেখানো অভিযান চালাতে দেখা যায়। তাকে কার্যত কোন লাভ হয় না। কিছুক্ষণ পরেই আগের অবস্থায় ফিরে আসে।
চানখাঁরপুল সংলগ্ন স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, এক শ্রেণির ভাঙ্গারি ক্রেতা বিক্রেতারা নাজিমুদ্দীন রোড ও চানখাঁরপুলে ঘুরে বেড়ায়। তাদের সঙ্গে বাইরের এলাকা থেকেও ক্রেতারা আসে। অনেক মাদক বিক্রেতারাও বাইরে থেকে এসে বিক্রি করে চলে যায়। স্থানীয় ও আশপাশের কয়েকটি সিন্ডিকেট এসব মাদক ব্যবসায়ীদের মদদ দিয়ে যাচ্ছে। এসব সিন্ডিকেটের অনেকে মাদক বিক্রেতাদের কাছ থেকে মাসোহারা নিলেও কেউ কেউ সরাসরি জড়িত। তারা অর্ডার পেলে চানখাঁরপুল, আনন্দবাজার ও পলাশীর ভাসমান মাদক কারবারিদের দ্বারা আশপাশের এলাকায় ইয়াবা ও ফেনসিডিলসহ অন্যান্য মাদক পৌঁছে দেয়।
ঢামেকের সামনের কয়েকজন ফার্মেসি দোকানী বলেন, এনজিও কর্মী পরিচয়দানকারী কিছু লোক ব্যাগের ভেতরে করে ইনজেকশন ও সিরিঞ্জ সরবরাহ করে। তারা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুরে এ কাজ করে। এনজিও কর্মী পরিচয়দানকারী এসব ব্যক্তিদের কাছে মাদকসেবীদের তালিকা রয়েছে। এছাড়া কিছু ফার্মেসিও অধিক লাভের আশায় তাদের কাছে ইনজেকশন ও সিরিঞ্জ বিক্রি করে। দোকানীরা বলেন, পুলিশসহ সবাই মাদক সেবন ও বিক্রির বিষয়টি জানলেও তাদের বিতারতি করতে কার্যকর কোন উদ্যোগ নেওয়া হয় না। মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযান চালিয়ে তাদেরকে সরিয়ে দেওয়া হলেও তারা আবার ফিরে আসে।
ঢাকা মেডিক্যালের কয়েকজন চিকিৎসক বলেন, ভাসমান মাদক সেবীদের অধিকাংশ এইডসসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত। তারা একটি সিরিঞ্জ ব্যবহার করে অনেকের শরীরে নেশাদ্রব্য পুশ করে থাকে। যার কারণে একজনের রোগ দ্রুত অন্যের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া অনেকের হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পচন ধরাসহ বড় বড় ক্ষত দেখা যায়। তারা এসব ক্ষতের চিকিৎসা না করিয়ে আরও বড় করে ভিক্ষাবৃত্তি করে থাকে।
এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ওসি আবুল আহসান বলেন, বর্তমানে সন্ধ্যার পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বন্ধ করে দেওয়ায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় প্রক্টোরিয়াল বডির টহল থাকায় মাদক সেবীরা ক্যাম্পাসের প্রবেশপথগুলো বেছে নিয়েছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হয়।
ওসি বলেন, রাস্তায় ভাসমান ছিন্নমূল মাদকসেবীরা অনেক নোংরা ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারাত্মক ক্ষত থাকায় তাদেরকে আটক করে অন্যান্য বন্দীদের সাথে কারাগারে রাখা যায় না। তাই তাদেরকে তাড়িয়ে দেওয়া হলেও তারা আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায়। তবে তাদের জন্য স্থায়ী চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা থাকলে এ সংখ্যা অনেক কমবে।
##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।