পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উঁচু-নিচু, পাহাড়-টিলাময় ও অসমতল মহানগরী চট্টগ্রাম। বৃষ্টিপাত ও জোয়ারের পানি নিষ্কাশনের মূল পথ এখানকার ৩৬টি খাল-ছরা। দীর্ঘদিন যাবৎ নির্বিচারে বেদখল, ভরাট ও দূষণের কারণে বন্দরনগরীর প্রাণপ্রবাহ খাল-ছরাগুলো পানি নিষ্কাশনে অনেকাংশেই অক্ষম। নগরীর বিশাল অংশ জুড়ে প্রতিবছর পানিবদ্ধতার প্রধান কারণ ৩৬টি মূল খাল-ছরা ও এর সঙ্গে যুক্ত নালা-নর্দমাগুলোর বেহাল দশা। খাল পুনঃখনন, সংস্কারসহ বন্দরনগরীর পানিবদ্ধতা সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে বড়সড় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
কিন্তু চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাথে চট্টগ্রাম মহানগরীর নাগরিক সেবা প্রদানকারী সংস্থা ও বিভাগগুলোর মধ্যকার সমন্বয়ের অভাবে তার বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সিডিএর উদ্যোগে ‘চট্টগ্রাম শহরের পানিবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণকল্পে খাল পুনঃখনন, স¤প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি মেগা প্রকল্প বিগত ৯ আগস্ট’১৭ইং একনেকে অনুমোদিত হয়। এতে সরকারি অর্থায়নে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। বাস্তবায়ন কাজে হাত দিতেই এখন সিডিএ বলছে মেগা প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ে শেষ করা সম্ভব হবেনা। বরাদ্দও বেড়ে যাবে। এরফলে ঝুলে গেছে সিডিএর মেগা প্রকল্পটি। পানিবদ্ধতার অভিশাপ থেকে নগরবাসীর পরিত্রাণের কোনো সুখবর এবছরও নেই।
বর্ষা মৌসুম ঘনিয়ে আসছে। বঙ্গোপসাগর উত্তাল অশান্ত হয়ে প্রবল জোয়ারে দুর্যোগের সময়ও অত্যাসন্ন। গত বেশ কয়েক বছরে দেখা গেছে ভর বর্ষার আগেই ভারী বর্ষণ ও সামুদ্রিক জোয়ারের তীব্রতা। দুইয়ে মিলে তলিয়ে যায় বন্দরনগরীর বিশাল এলাকা। সিডিএর মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় ফের ডুবে যাবে চট্টগ্রাম নগরী। পানিবদ্ধতার ভয়-শঙ্কা শুরু হয়ে গেছে লাখ লাখ চট্টগ্রামবাসীর মাঝে। বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত বন্দরনগরীর ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র আগ্রাবাদের মানুষ রয়েছেন জোয়ার ও বর্ষষের পানির আতঙ্কে।
এছাড়া পশ্চিমে হালিশহর, পতেঙ্গা, কাট্টলী, পূর্ব দিকে চান্দগাঁও, মোহরা, কালুরঘাট, ষোলশহর, শোলকবহর, বাকলিয়া, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জ, নগরীর কেন্দ্রস্থলে মুরাদপুর, চকবাজার, পাঁচলাইশ, কাতালগঞ্জ, প্রবর্তকসহ বিভিন্ন এলাকায় পানিবদ্ধতা সমস্যা এবারও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। এ কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানায় উৎপাদন ব্যাহতের পাশাপাশি স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হওয়ার মুখে। গুদাম-আড়ত, দোকানপাটে কোটি কোটি টাকার মালামাল বিনষ্ট হতে পারে এবারও।
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট নগর পরিকল্পনাবিদ সাদার্ন ইউনিভার্সিটির প্রো-ভিসি অধ্যাপক প্রকৌশলী এম আলী আশরাফ দৈনিক ইনকিলাবকে গতকাল বলেন, সিডিএর সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের এক বছর হয়ে গেলো। আশা করা হয়েছিল বেশকিছু কাজ এগিয়ে যাবে, পানিবদ্ধতা নিরসনের ক্ষেত্রে মানুষ সুফল ভোগ করবে। কিন্তু কাজের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। এ কারণে নগরবাসী হতাশ তো বটেই। সরকার যে উদ্দেশে বড়সড় প্রকল্পটিতে বরাদ্দ দিয়েছে পানিবদ্ধতা নিরসনের মাধ্যমে তার দ্রুত বাস্তবায়ন সবাই দেখতে চান।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সিডিএ ভবনে গণপূর্ত ও গৃহায়ন মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম মতবিনিময় সভা করেন। এতে সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম স্বীকার করেন, পানিবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পটির মেয়াদ তিন বছর। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা যাবে না। যেহেতু এটি বৃহৎ প্রকল্প তাই এর কাজ শেষ হতেও সময় লাগবে। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে হবে। মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী চট্টগ্রামে ৫৭টি খাল বিদ্যামান। সেখান থেকে ৩৬টি খাল প্রকল্পে বেছে নেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকি খালগুলো প্রকল্পের আওতায় আসবে। পানিবদ্ধতা দীর্ঘদিনের সমস্যা। ১১টি খালের ডিটেইল ডিজাইন তৈরি করতেই আবার বর্ষা এসে গেছে। তাই ডিজাইন মোতাবেক কাজ বাদ দিয়ে আপাতত বিকল্প চিন্তা করতে হচ্ছে। ক্রাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে পানিবদ্ধতা মোকাবেলা করা হবে।
পূর্তমন্ত্রী সিডিএর প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজের ধীরগতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। সভায় সিডিএর বোর্ড সদস্য হাসান মুরাদ বিপ্লব নগরীর পানিবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প দ্রুত শেষ করার দাবি জানান। তিনি বলেন, প্রকল্পের কাজ শুরুর এক বছর পার হলো। অথচ এখনও অগ্রগতি নেই। খালগুলো যেভাবে ভরাট হয়ে আছে আসন্ন বর্ষায় চট্টগ্রামবাসী আবারও পানিবদ্ধতার কবলে পড়বে।
বন্দরনগরী চট্টগ্রামের শিরা-উপশিরা ৩৬টি খাল-ছরার একাংশ ভূমি দখলবাজদের কব্জায় চলে গেছে। এসব খাল ও ছরার দৈর্ঘ্য ১৪৬ কিলোমিটার। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের হিসাব মতে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে বড়-ছোট-মাঝারি ৫৭টি খাল রয়েছে। আরএস, পিএস, বিএস জরিপ-খতিয়ান অনুসারে কঠোর অভিযান চালিয়ে খালগুলো একযোগে পুনরুদ্ধার এবং পরিকল্পিত ও মজবুত শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য নাগরিক মহলের দাবি দীর্ঘদিন ধরেই উপেক্ষিত। তাছাড়া মহানগরীর পাহাড়-টিলা কেটে-খুঁড়ে সাবাড় করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে নির্বিকার সিডিএ। পাহাড়-কাটা বালিমাটি বৃষ্টির পানিতে ঢালু বেয়ে নিচের দিকে আসছে। আর তাতে অকেজো হয়ে যাচ্ছে খাল-ছরা, নালা-নর্দমাসহ গোটা ড্রেনেজ ব্যবস্থা। এ অবস্থায় আগামী বর্ষা মৌসুমে এবং তার আগে ও পরে চট্টগ্রাম মহানগরী বৃষ্টিপাত ও প্রবল জোয়ারের পানিতে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সিডিএর মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন না হতেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় এক হাজার কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ অপর একটি প্রকল্প সরকারের অনুমোদন পেয়েছে। গত ২ মার্চ চট্টগ্রামে ‘নগরীর পানিবদ্ধতা নিরসন ও চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ড’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এলজিআরডি মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, পানিবদ্ধতার দীর্ঘদিনের সমস্যা থেকে চট্টগ্রামবাসী স্থায়ী মুক্তি পাবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিক প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন। প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হলে চট্টগ্রামে পানিবদ্ধতার স্থায়ী একটা সমাধান হবে। পানিবদ্ধতা নিরসনে সিডিএর মেগা প্রকল্পের অগ্রগতি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, সিডিএর চলমান প্রকল্পগুলোর গুণগত মান ও অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।