Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

তিতাসের লাল মরিচে চাষিদের মুখে হাসি

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল, চান্দিনা, কুমিল্লা থেকে | প্রকাশের সময় : ১৬ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

চলতি মৌসুমে কুমিল্লার তিতাসে মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। ছোট-বড়, নারী-পুরুষ সকলে মিলে লাল টুকটুকে পাকা মরিচ গাছ থেকে তোলা ও শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পাশাপাশি বাজারে দাম ভালো হওয়ায় এবার চাষিদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে মরিচ।
মৌসুমের শুরুতে বাজারে কাঁচা মরিচের ভালো দাম পেয়ে এখন পাকা মরিচ শুকানো হচ্ছে। চরাঞ্চলসহ মরিচ চাষের নির্দিষ্ট এলাকায় এখন বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে শুকনো মরিচের গন্ধ। বাড়ির উঠান আর ঘরের চালে শোভা পাচ্ছে লাল মরিচ। তিতাসের মাঠে মাঠে লাল শুকনো মরিচ আর চাষিদের মুখে হাসি। যেদিকে চোখ যায় শুধু মরিচ আর মরিচ। নদীবেষ্টিত এ উপজেলায় এখন চলছে মরিচ তোলার মৌসুম। বিস্তীর্ণ মাঠে নারী-পুরুষ একসঙ্গে পাকা মরিচ তুলছে। মরিচ এখানকার মানুষের প্রধান ফসল। কুমিল্লা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, তিতাসের চরাঞ্চলে এবার মরিচের উৎপাদন ভালো হয়েছে। পাশাপশি বাজারে উপযুক্ত দাম পেয়ে কয়েক হাজার প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষি নিজেদের ভাগ্যই বদলে ফেলেছে। চাষিরা জানিয়েছে, গত ৪/৫ বছর মরিচের দাম বাড়লেও ভালো ফলন পাওয়া যায়নি। এবার একই সাথে ভালো ফলন ও দাম পেয়ে তাদের মুখে হাসি ফুটেছে। এবার কয়েক বছরের লোকসান এক মৌসুমেই পুষিয়ে নিচ্ছেন।
জমি থেকে দু’দফা কাঁচা মরিচ তুলে বিক্রির পর শেষ পর্যায়ে মরিচ শুকানো হচ্ছে। পুরো উপজেলায় প্রায় প্রতিটি বাড়ির উঠানে লাল টুকটুকে মরিচ শোভা পাচ্ছে। জগৎপুরের মরিচ চাষি আব্দুল আলিম ও আব্দুল সালাম বাড়ির উঠানে মরিচ শুকাতে ব্যস্ত। তারা ভালো ফলন ও দাম পেয়ে মরিচের ঝাঁজকে আমলেই আনছে না তারা।
প্রকৃতির অনুকূল পরিবেশে মরিচ চাষ করে ভালো ফলন পেয়ে হাসিমুখে কয়েকজন চাষি দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, মরিচ চাষে এবার খরচ বেশি হলেও বাজার মূল্যও ছিল বেশি। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় ৯০০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ফলনও ভাল হয়েছে। এ এলাকায় বেলে-দোঁআশ মাটি হওয়ায় মরিচ চাষের জন্য বেশী উপযোগী।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার জগৎপুর থেকে রাস্তার দুই ধারে বিভিন্ন বাড়িতে ও গ্রামের ক্ষেতে মরিচ শুকানো হচ্ছে। কোথাও কোথাও দল বেঁধে মহিলারা মরিচ তুলছে। মাথাভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হালিম জানান, তিনি ৪০ শতক জমিতে মরিচ চাষ করেন। এ সময়ে পাকা মরিচ শুকিয়ে রাখেন। বর্ষা মৌসুমে দাম বেশি হলে বিক্রি করবেন।
একই কথা বললেন ওই গ্রামের রমজান আলী। চাষিরা জানায়, ৩০ শতক জমি চাষ করতে তাদের প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ পড়ে। বিক্রি হয় ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। তিতাস এলাকার চাষিরা এ মৌসুমে তেমন বিপদ না হলে মরিচ বিক্রি করে না। মরিচ শুকিয়ে ঘরে রাখলে কয়েক মাস পর আরো বেশি দাম পাওয়া যাবে। তাই কেউই পাকা মরিচ বিক্রি করতে চায় না।
কড়িকান্দি বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল আল মামুন বলেন, মরিচ চাষ করে এখানকার মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কামরুল হাসান মিতু দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, স্বাদে অনন্য হওয়ায় তিতাসের মরিচের খ্যাতি রয়েছে সারা দেশে। তাই নামি-দামী মসলা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নজর তিতাসের মরিচের দিকে। আমরা চাষিদের লাভবান করে তুলতে মরিচ চাষের উপর প্রশিক্ষণ ছাড়াও মাঠে গিয়ে ফসলের সমস্যার উপর সার্বক্ষণিক পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে আসছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ