পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশকে আজকে কেউ দরিদ্র দেশ হিসেবে অবহেলা করতে পারে না। কেউ করুণার চোখে দেখে না। বরং সারা বিশ্ব বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দেখে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ১০ বছরের মধ্যে এই পরিবর্তন আনতে পেরেছি। বাংলাদেশকে নিয়ে আমরা আরো অনেক দূর এগিয়ে যেতে চাই। এদেশকে গড়ে তুলতে চাই। আজকের শিশুদের জন্য আগামীতে সুন্দর জীবন, সুন্দর ভবিষ্যত রেখে যেতে চাই। আমি‘স্বজন হারানোর বেদনা নিয়েই আমার যাত্রা শুরু করেছি। মা-বাবা-ভাই হারিয়ে ছিল। তখন একটাই আলো পেয়েছিলাম তা হলো জনগণের ভালোবাসা। জনগনের ভালোবাসা পেয়েছি, জনগনের আস্থা পেয়েছি। জনসেবা করার জন্যই কাজ করছি। বাংলাদেশের মানুষকে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্যমুক্ত একটা সমাজ উপহার দেবার আকাঙ্খা নিয়ে সোনার বাংলা গড়তে আমার বাবা সারাটা জীবন ত্যাগ স্বীকার করেছেন। আমি সেই কথা মনে রাখার চেষ্টা করেছি। তাঁর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে যেতে পারেননি। তার সে কাজের একটুও যুদ করতে পারি তাহলে মনে করবো সেটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য।
তিনি বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে কুমুদিনী কমপ্লেক্সের ভারতেশ্বরী হোমস প্রাঙ্গণে ‘দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা স্মারক স্বর্ণপদক’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা কালে এ কথা বলেন। রণদা প্রসাদ সাহা প্রতিষ্ঠিত কুমুদিনী কল্যান সংস্থা এই পদক প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
রণদা প্রসাদ সাহা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা এক হাতে অর্থ উপার্জন করতেন, আরেক হাতে বিলিয়ে দিতেন। মানুষের কল্যাণে তিনি দান করেছেন। মেয়েদের শিক্ষায়, চিকিৎসায় তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন। কুমুদিনী ট্রাস্ট্রের মাধ্যমে অনেক কাজ করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, নারী শিক্ষার প্রতি রণদা প্রসাদ সাহার ছিল গভীর আগ্রহ। একে একে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ভারতেশ্বরী হোমস, কুমুদিনী কলেজ এবং পিতার নামে দেবেন্দ্র কলেজ। ১৯৫৪ সালে তিনি ঢাকা সেনানিবাসে সম্মেলিত সামরিক হাসপাতালে ম্যাটারনিটি বিভাগের বিল্ডিং স্থাপন করেন। দেশের বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তিনি আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের পরবর্তী প্রজন্ম প্রতিষ্ঠাতার মানবিক প্রয়াস-প্রান্তিক অসহায় জনপদে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান ও নারী শিক্ষা প্রসারে নিজেদের নিবেদিত রেখেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রণদা প্রসাদ সাহা স্মারক স্বর্ণপদক প্রদান করেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর পক্ষে বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, কাজী নজরুল ইসলামের পক্ষে তার নাতি খিলখিল কাজী এবং অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ও শাহাবুদ্দিন আহমেদ নিজেরা উপস্থিত থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে স্বর্ণপদক গ্রহন করেন।
কুমুদিনী কল্যান সংস্থার পরিচালক (শিক্ষা) প্রতিভা মুৎসুদ্দির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, স্থানীয় সাংসদ একাব্বর হোসেন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন, সংস্থার পরিচালক ও রণদা প্রসাদ সাহার পূত্রবধূ শ্রীমতি সাহা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজিব প্রসাদ সাহা। অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান, টাঙ্গাইল জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান খান ফারুক, জোয়াহেরুল ইসলাম (ভিপি জোয়াহের) এমপি, একাব্বর হোসেন এমপি, তানভীর হাসান ছোট মনির এমপি, আহসানুল ইসলাম টিটু এমপি, আতাউর রহমান খান এমপি সহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সকাল সাড়ে ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানস্থলে পৌছলে জাতীয় সঙ্গীত ও দেশাত্মবোধক সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী ভারতেশ্বরী হোমসের শিক্ষার্থীদের মনোমুগ্ধকর শরীর চর্চা প্রদর্শন উপভোগ করেন। অনুষ্ঠানে রণদা প্রসাদ সাহার জীবন ও কর্ম এবং কুমুদিনী কল্যান সংস্থার উপর প্রামান্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা ও তাঁর পুত্র ভবানী প্রসাদ সাহাকে ১৯৭১ সালের ৭ই মে নারায়ণগঞ্জ কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের হেড অফিস থেকে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী ও দেশীয় বর্বর দোসররা অপহরণ করে। তখন থেকে তাঁরা নিখোঁজ হন। হানাদার বাহিনী তাঁদের হত্যার পর লাশ গুম করে ফেলে। রণদা প্রসাদ সাহা’র পরিবার ব্যক্তিগতভাবে আমার পরিচিত। দানবীরের বড় মেয়ে বিজয়া খানকে আমি ফুফু বলে ডাকতাম। ছোট মেয়ে জয়াপতি মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এবং পরবর্তীতে সকল প্রতিকূলতায় পরিবার ও ট্রাস্টকে আগলে রেখেছিলেন। তাঁরা আজ নেই। আমি তাঁদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি এবং তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে আমরা আজ জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজগুলো বাস্তবায়ন করছি। বিগত ১০ বছরে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, তথ্য-প্রযুক্তি, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন, কূটনৈতিক সাফল্য ও সহযোগিতা বৃদ্ধিসহ প্রতিটি সেক্টরে আমরা ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’।
ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন বাস্তবতা। সারাদেশে সড়ক, মহাসড়ক, সেতু, ফ্লাইওভার, পাতাল সড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রেল, নৌ ও যোগাযোগ অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ করছি। মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মাদক নির্মূলে আমাদের সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে কাজ করে যাচ্ছে। আমরাই বিশ্বে প্রথম শত বছরের ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ বাস্তবায়ন শুরু করেছি।
অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বিশ্বের ৫টি দেশের একটি বাংলাদেশ। উন্নয়নের ৯০ ভাগ কাজই নিজস্ব অর্থায়নে করছি। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার সম্পন্ন করেছি। জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্র“তি অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্য পরিচালনা করছি. বিচারের রায় কার্যকর করা হচ্ছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আগামী প্রজন্ম পারে সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ।
সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে বিপুলভাবে বিজয়ী করেছে। আমাদের ওপর দেশের মানুষ যে দৃঢ় আস্থা রেখেছে, আমরা তার পরিপূর্ণ মূল্যায়ন করব। আমরা ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। আমরা ২০২১ সালের মধ্যে বংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের আগেই উন্নত দেশে পরিণত করব, ইনশাআল্লাহ।
আসুন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের এই উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ধারাবাগিকতা রক্ষা করি। দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মনিয়োগ করি। গড়ে তুলি জাতির পিতার ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী মির্জাপুর কুমুদিনী কমপ্লেক্সে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু ভিআইপি অডিটরিয়ামসহ ১২টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ১৯টি প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন।
প্রকল্পগুলো হচ্ছে, ধেরুয়া রেলওয়ে ওভারপাস, ৩৩/১১ কেভি সুইচিং স্টেশন, টাঙ্গাইলের বৈল্যা গ্রীড সাবস্টেশন, টাঙ্গাইলের ইন্দ্রবেলতা ৩৩/১১ কেভি ২০ এমভিএ ইনডোর উপকেন্দ্র, বাসাইল, দেলদুয়ার ও নাগরপুর উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়ন উপজেলা ঘোষনা, সখিপুর উপজেলা কমপ্লেক্স এর প্রশাসনিক ভবন সম্প্রসারণ ও হলরুম উদ্বোধন, কালিহাতী (ধুনাইল)-সয়ার হাট হাতিয়া রাস্তার উদ্বোধন, মির্জাপুর উপজেলা কমপ্লেক্স সম্প্রসারিত ভবন এর উদ্বোধন, টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু ভিআইপি অডিটরিয়ামের উদ্বোধন, মির্জাপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের ভবন, মির্জাপুর উপজেলা প্রাণি সম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। এছাড়া ১৯টি প্রকল্পের ভিত্তি ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। এগুলো হচ্ছে এলেঙ্গা-জামালপুর জাতীয় মহাসড়ক (এন-৪) প্রশস্তকরণ প্রকল্প (টাঙ্গাইল অংশ), এলেঙ্গা-ভূঞাপুর-চরগাবসারা সড়কে ১০টি ক্ষতিগ্রস্থ সেতু ও ০১ টি কালভার্ট পু:ন নির্মাণ এবং আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, ঙ্গাইল-দেলদুয়ার জেলা মহাসড়ক (জেড-৪০১৫), করটিয়া (ভাতকুড়া)-বাসাইল জেলা সড়ক (জেড-৪০১২) এবং পাকুল্লা-দেলদুয়ার-এলাসিন (জেড-৪০০৭) অংশকে যথাযথমানে ও প্রশস্থতায় উন্নীতকরণ প্রকল্প, কালিহাতী উপজেলা কমপ্লেক্সের প্রশাসনিক ভবন সম্প্রসারণ ও হলরুম নির্মাণ কাজ, করটিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দেলদুয়ারের বাতেন বাহিনীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যালয়, ঘাটাইলের রসুলপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস, লোকেরপাড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস, জেলা সদর মডেল মসজিদ, টাঙ্গাইল সদর উপজেলা মডেল মসজিদ, বাসাইল উপজেলা মডেল মসজিদ, টাঙ্গাইল সদর উপজেলা ভূমি অফিস, সখীপুর উপজেলা ভূমি অফিস, মধুপুর উপজেলা ভূমি অফিস, মির্জাপুর উপজেলা ভূমি অফিস, টাঙ্গাইল সার্কিট হাউসের নতুন ভবন নির্মান কাজ, ভারতেশ্বরী হোমসের মাল্টিপার্পাস হল নির্মান, কুমুদিনী কল্যান ট্রাস্ট, ইন্সটিটিউট অব পোস্ট গ্রাজুয়েট নার্সিং কমপ্লেক্সের ভিত্তি ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।