Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সেবাবঞ্চিত অধিকাংশ রোগী

সচেতনতায় ৫০ থেকে ৬০ ভাগ কিডনি বিকল প্রতিরোধ সম্ভব

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ১৪ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

দেশে বাড়ছে অসংক্রামক রোগব্যাধি। আর এই অসংক্রামক রোগের অন্যতম একটি কিডনি রোগ। প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে এ রোগের প্রকোপ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পৃথিবীতে অসংক্রামক রোগের যে মৃত্যুহার, তারমধ্যে কিডনি রোগের অবস্থান ১১ তম পর্যায়ে রয়েছে। বাংলাদেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা প্রায় দুই কোটি। বছরে এ রোগে মারা যায় প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় ৮৫ কোটি মানুষ বিভিন্ন ধরনের কিডনি রোগে আক্রান্ত। প্রতি বছর ২৪ লাখ মানুষ ক্রনিক কিডনিডিজিজ বা দীর্ঘস্থায়ী কিডনিরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেন। অন্য দিকে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ লোক আকস্মিক কিডনিরোগে আক্রান্ত হন। এদের মধ্য ১৭ লাখ রোগী অকাল মৃত্যুবরণ করেন। কিডনি সমস্যা এদেশে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এর পেছনে এ্যাকসেস টু ট্রিটমেন্ট বড় কারণ। বাংলাদেশে ২ কোটিরও অধিক লোক কোন না কোন কিডনি রোগে আক্রান্ত। কিডনি বিকলের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় এ দেশের শতকরা ১০ জন রোগীও এ রোগের চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারে না। অর্থাভাবে চিকিৎসাহীন থেকে আক্রান্তদের সিংহভাগ প্রাণ হারান। সারাদেশে ১৩০টি হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা রয়েছে। বছরে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ এ সেবা গ্রহণ করে থাকে।
এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব কিডনি দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘সুস্থ কিডনিসবার জন্য সর্বত্র’। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ রেনাল এসোসিয়েশন, ক্যাম্পস এবং কিডনিফাউন্ডেশন র‌্যালি, স্ক্রিনিং, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশ রেনাল এসোসিয়েশনের সভাপতি প্রফেসর ডা. রফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশে কিডনি রোগী প্রায় দুই কোটি। গড়ে প্রতি বছর বাংলাদেশে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার রোগী এ রোগে মৃত্যু বরণ করেন। বছরে ২৫ থেকে ৩০ হাজার মানুষ একিউট কিডনি ফেইলিউরে আক্রান্ত হন এবং ৩০ থেকে ৩৫ হাজার মানুষ ক্রনিক কিডনি ফেইলিউর সমস্যায় আক্রান্ত হন। একিউট কিডনি ফেউলিউর রোগীদের চিকিৎসায় সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। তবে ক্রনিক কিডনি ফেইলিউর রোগীদের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করতে হয়। তবে শতকার ৯০ ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে ব্যয়বহুল ডায়ালাইসিস সেবা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একটু সচেতন হলে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ ক্ষেত্রে কিডনি বিকল প্রতিরোধ করা সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন প্রাথমিক অবস্থায় কিডনি রোগের উপস্থিতি ও এর কারণ শনাক্ত করে তার চিকিৎসা করা। সুস্থ জীবনধারা চর্চা, নিয়মিত ব্যায়াম করা, ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখা, ধুমপান না করা, পরিমিত সুসম খাবার, কাঁচা লবণ পরিহার করার মাধ্যমে কিডনি রোগ থেকে নিরাপদ থাকা সম্ভব।
প্রফেসর ডা. মো. ফিরোজ খান বলেন, আকস্মিক কিডনি বিকল ও দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের কারণে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, এইডস, ম্যালেরিয়া, টিবি, হেপাটাইটিস ইত্যাদি রোগের ঝুঁকি বহুগুণে বেড়ে যায়। এ কারণে কিডনি রোগকে বলা হয় ডিজিজ মাল্টিপ্লায়ার। বয়স্কদের দীর্ঘমেয়াদী কিডনি রোগ বর্তমান সময়ে অত্যন্ত আলোচিত একটি বিষয়। এ ছাড়া কিডনির পাথর ও প্রস্রাবের রাস্তায় বাধা বা প্রস্রাবের ধীরগতি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে ও সঠিক চিকিৎসা দিতে পারলে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, সম্পূর্ণ কিডনি বিকল রোগের সর্বোত্তম চিকিৎসা হলো কিডনি সংযোজন। ১৯৫৪ সালে পৃথিবীতে প্রথম মানবদেহে প্রথম কিডনি সংযোজন শুরু হয়। বাংলাদেশে ১৯৮২ সালে প্রথম কিডনি সংযোজন শুরু করা হয়। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোলজি বিভাগে, জাতীয় কিডনিইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে এবং বেসরকারি পর্যায়ে কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপন হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ