পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিশ্বে একটি রোল মডেল আখ্যায়িত করে আগামীতেও এই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সব বহুমুখী এবং বহুমাত্রিক সহযোগিতার ফলে আমাদের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিশ্ববাসীর সম্মুখে সু-প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কের দৃষ্টান্তরূপে পরিগণিত হচ্ছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতেও এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
গতকাল বিকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশের চারটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনকালে প্রদত্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নয়া দিল্লীতে তার কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যোগদান করেন। ভারত এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীগণ একত্রে সুইচ চেপে প্রকল্পের ফলক উন্মোচন করেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তরিকতা থাকলে দু’দেশে (বাংলাদেশ-ভারত) বসে অনেক সমস্যাই শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা যায়। আমরা তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সমস্যা, ছিটমহল ও সমুদ্র সীমার সমাধান করেছি। তিনি বলেন, বিগত এক দশকে উভয় দেশের মধ্যে বিভিন্ন প্রথাগত খাত যেমন নিরাপত্তা, বাণিজ্য, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, যোগাযোগ, অবকাঠামো উন্নয়ন, জলবায়ু ও পরিবেশ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, জনযোগাযোগ বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য প্রভৃতি খাতে সহযোগিতা প্রভূত পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন নতুন ও অপ্রচলিত খাত যেমন ব্ল ইকোনমি এবং মেরিটাইম, পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার, মহাকাশ গবেষণা, ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ রপ্তানি এবং সাইবার সিকিউরিটি প্রভৃতি খাতে উভয় দেশ সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করেছে।
তিনি বলেন, দ্বিতীয় লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) আওতায় ভারত থেকে ৬০০ বাস (৩০০ দোতলা বাস, ২০০ একতলা এসি বাস এবং ১০০ একতলা নন-এসি বাস) এবং ৫০০ ট্রাক (৩৫০টি ১৬-টন ট্রাক এবং ১৫০টি ১০-টন ট্রাক) আমদানি, ভারতীয় আর্থিক অনুদানে পাঁচ জেলায় (জামালপুর, শেরপুর, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া) ৩৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন, ভারতীয় অনুদানে বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়ায় ১১টি পানি শোধনাগার স্থাপন এবং সার্কভুক্ত দেশসমূহে ভারতের ন্যাশনাল নলেজ নেটওয়ার্ক (এনকেএন) সম্প্রসারণের আওতায় বাংলাদেশে উক্ত নেটয়ার্কের সম্প্রসারণের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনে অংশগ্রহণ করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাসগুলো বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের বহরে যুক্ত হলে বাংলাদেশের যাত্রীসাধারণের দুর্ভোগ কিছুটা লাঘব হবে এবং আমাদের মহাসড়কগুলোর যানজট খানিকটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আসবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের প্রতি ‘জিরো টলারেন্স’র নীতি পোষণ করে এবং কোন সন্ত্রাসবাদী সংগঠনকে কখনই বাংলাদেশের মাটিতে আশ্রয় প্রদান করা হবে না। দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক এবং বহুপাক্ষিক সহযোগিতার মাধ্যমে আমাদের এ অঞ্চল এবং এর বাইরে সন্ত্রাসবাদ দূর করতে আমরা বদ্ধপরিকর। এ সময় গত মাসে কাশ্মিরের পুলওয়ামায় সন্ত্রাসি হামলার নিন্দা করে শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান প্রধানমন্ত্রী ।
টানা তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শেখ হাসিনার এটাই প্রথম ভিডিও কনফারেন্স। নির্বাচনে বিজয় হওয়ার পর অভিনন্দন জানানোর জন্য মোদিকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়াও ভিডিও কনফারেন্সে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন এবং ভারতের বিদেশ মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
বাংলাদেশের উন্নতি ভারতের জন্য আনন্দের
ভিডিও কনফারেন্সে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নতি সবসময়ই ভারতের জন্য আনন্দের বিষয় এবং প্রেরণার উৎস।
ভাষণের শুরুতেই মোদি বাংলায় বলেন, আশা করি যে, বাংলাদেশের সবাই ভাল আছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নতি ভারতের জন্য সবসময়ই একটি আনন্দের বিষয়তো রয়েছেই উপরন্তু আমাদের জন্য প্রেরণার ও উৎস। ভারত-বাংলাদেশ সহযোগিতার প্রসঙ্গ টেনে মোদী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য মহত্যপূর্ণ লক্ষ্য স্থির করেছেন। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে তৈরী করা এবং ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলায় তার রূপকল্পকে বাস্তব রূপ দিতে সহায়তা করা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এক সাথে মিলে বিগত ৫ বছরে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের সোনালি অধ্যায়ের জন্য কাজ করতে পারাকে অত্যন্ত সৌভাগ্যজনক আখ্যায়িত করেন মোদী। পুলাওয়ামায় শহীদদের প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সমবেদনা জানানোয় এসময় তা (শেখ হাসিনা) প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মোদী শেখ হাসিনা ও নৌকার বিপুল বিজয়ে তাকে পুনরায় অভিনন্দন জানান।
এ সময় বাংলাদেশকে সংসদ সদস্যদের একটি দল সম্প্রতি ভারতে আগমন করায় তাদেরকেও অভিনন্দন জানান মোদি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার এটি ৬ষ্ঠ ভিডিও কনফারেন্স। এতটা সরলতার সঙ্গে এতবার দু’দেশের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মধ্যে যোগাযোগ সাধন নিজে থেকেই বলে দিচ্ছে আমাদের দু’দেশের সম্পর্ক কতটা গভীর এবং মজবুত।
তিনি এ সময় ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী এবং ২৬ মার্চ ৪৮ তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশের জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়ে এরমধ্যেই দু’দেশের জনগণ হিন্দুদের পবিত্র উৎসব হোলি উদযাপন করবে উল্লেখ করে দু’দেশের জনগণকেই শুভেচ্ছা জানান।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্ধুরা ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে কানেকটিভি জোরদার করার বিষয়ে আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রূপকল্পকে সবথেকে বড় প্রেরণা হিসেবে মনে করছি। আর এজন্য আমার খুবই আনন্দ হচ্ছে যে, আজ আমরা কেবল যানবাহন এবং কানেকটিভিই নয় একসঙ্গে মিলে জ্ঞান বৃদ্ধিরও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।
নরেন্দ্র মোদী বলেন, ভারত এবং বাংলাদেশের জনগণের সম্পর্ক পারস্পারিক আত্মীয়তা এবং পারিবারিক চিন্তা-ভাবনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। নরেন্দ্র মোদী এটাকে তার ‘বিশ্বাস’ এবং ‘অঙ্গীকার’ উভয়ই উল্লেখ করে বলেন, আজ আমার এই বিশ্বাস আজ আরো মজবুত হলো। কারণ, আজকে বাংলাদেশকে আসা বেশ কয়েকজন যুব নেতা এবং সংসদ সদস্যের সঙ্গেও আলাপ করার সুযোগ হয়েছে। তিনি বাংলাদেশ থেকে আগত সংসদ সদস্যদের প্রতিভা এবং কর্মচাঞ্চল্যে আগামীতে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের উজ্জ্বল ভবিষ্যত দেখতে পাচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন। তিনি পুনরায় বাংলায় ‘ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব চিরজীবী হোক’ বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তার বক্তব্য শেষ করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।