Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাতে ব্যালট বাক্স-গণমাধ্যম বিতর্ক

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

ভোট কারচুপির শঙ্কা থেকে ডাকসু নির্বাচনে সকালে কেন্দ্রগুলোতে ব্যালট ও বাক্স পাঠানোর দাবি উঠলেও গতকাল রাতেই হলগুলোতে সেগুলো পাঠিয়ে দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ছাত্রলীগ ছাড়া স্বতন্ত্র ও বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রার্থী কারচুপির শঙ্কা থেকে দাবি জানান, রাতের আঁধারে হলগুলোতে ব্যালট বাক্স পাঠানো যাবে না। সকালে গণমাধ্যম ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সামনে ব্যালট বাক্স উন্মুক্ত করে দেখিয়ে তা স্থাপন করতে হবে। আবার গণমাধ্যমের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ এবং অস্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহার করা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নতুন বিতর্ক।
স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে ডাকসুর প্রথম ভিপি সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, মানুষ স্বাভাবিকভাবেই সন্দেহ করছে যে স¤প্রতি জাতীয় নির্বাচনকে ভুয়া ভোটের মাধ্যমে যেভাবে একটি প্রহসনে রূপান্তরিত করা হয়েছিলো সেভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনকেও সেই নীল-নকশার বাইরে থাকতে দেয়া হবে না। ভোট কেন্দ্রের ভেতরে তারা কী ধরনের অঘটনগুলো ঘটাবে, সেগুলো যাতে বাইরের মানুষ না জানতে পারে, সেই উদ্দেশ্যেই সেগুলো করা হচ্ছে কী না- সেটা সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এরকম একটা পরিস্থিতি আইয়ুব খানের আমলেও ছিলো। আইয়ুব খান পুরো দেশ নিয়ন্ত্রণ করলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, গণমাধ্যমের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা ঠিক নয়। আমরা যারা গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি এবং সাধারণ মানুষের তথ্যের অধিকারে বিশ্বাস করি- তারা মনে করি, গণমাধ্যমের অভিগম্যতা নিশ্চিত করা উচিত। তিনি আরো বলেন, গণমাধ্যম এসে শুধু নির্বাচন দেখবে। তারা তো কোনো কর্মকান্ডে যুক্ত হবে না। তাই সেই দেখার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করলে স্বাভাবিকভাবেই সন্দেহ এসে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে সন্দেহ সৃষ্টি হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিধিনিষেধ দিয়ে খামাখা একটা বিতর্ক ও সন্দেহ সৃষ্টি করা হলো। সেই সন্দেহ যেনো না থাকে সে জন্যে গণমাধ্যমের ওপর যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে- আমার মনে হয় তা তুলে নেয়াটা যুক্তিসঙ্গত। নির্বাচনকে সবদিক থেকে বিশ্বাসযোগ্য করার স্বার্থেই এটা করা দরকার।
গণমাধ্যমের ওপর কড়াকড়ি কেনো প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রফেসর আসিফ নজরুল বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে দেখা গেছে- নির্বাচনটিকে পর্যবেক্ষণের বাইরে রাখার জন্যে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিলো। সেই ব্যবস্থাটিই এখন পুরোপুরি অনুসরণ করা হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেলে যতটুকু করা যায়। ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেকটা অভূতপূর্বভাবে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। নির্বাচনে কারচুপি এড়ানোর জন্যে একমাত্র সেইফগার্ড হতে পারতো গণমাধ্যম। গণমাধ্যমের ওপর যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে এবং পোলিং এজেন্ট থাকার বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে তা এই নির্বাচনটিকে বৃহদাংশে পর্যবেক্ষণের বাইরে রাখার জন্য।
অস্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের ব্যাপারে তিনি বলেন, এর একটাই কারণ থাকতে পারে তারা হয়তো আগেই কিছু ব্যালট বাক্স ভরে রাখতে চায় এবং সেটা কেউ দেখুক তা তারা চায় না। এছাড়া অন্য কোনো কারণ তো হতে পারে না। অবশ্য ভিন্ন মত দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রফেসর শফিউল আলম ভূঁইয়া। তিনি বলেন, গণমাধ্যমের ওপর কড়াকড়ি কোথায়? পৃথিবীর কোথায় ভোটকেন্দ্রের ভেতর থেকে ভোটগ্রহণের চিত্র সরাসরি স¤প্রচার করা না। সাংবাদিকরা ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবে। কিন্তু, বুথে তো তাদের ঢুকতে পারার কথা না। তিনি বলেন, নানাজন নানাভাবে রাজনৈতিকভাবে অনুপ্রাণিত। সেভাবে তারা প্রতিবেদন লেখে। এটি আমাদের দেশে খুব স্বাভাবিক। তবে আমার বক্তব্য হলো: লিখিত আচরণবিধির ওপর সংবাদমাধ্যমের নির্ভর করা উচিত। একটা সংবাদ বিজ্ঞপ্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গিয়েছে সেটার ওপর তাদের নির্ভর করা উচিত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর কামরুল হাসান মামুনের বলেন, গণমাধ্যমের ওপর এতো কড়াকড়ি কেনো?- সে বিষয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কী যুক্তি তা শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা তো এ বিষয়টির ব্যাখ্যা চায়। এটি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলবে। যেই জিতুক না কেনো প্রশ্নের সুযোগ থেকে যায়। মানুষের মনে এ ধরনের প্রশ্নও এখন আসতে পারে যে- এটি আবার জাতীয় নির্বাচনের নব্য-প্রতিফলন হবে কী না? সেখানকার কৌশলগুলো এই নির্বাচনে কাজে লাগানো হবে কী না?- এ ধরনের প্রশ্ন তো আমি এখনই অন্যদের কাছ থেকে শুনতে পাচ্ছি। যেহেতু নিকট অতীতে আমরা জাতীয় নির্বাচন দেখেছি। যার জন্যে মানুষের মধ্যে প্রশ্ন আসতেই পারে। আমরা শিক্ষকরাই কিন্তু প্রশ্নের মধ্যে পড়ে যাবো। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রফেসর ফাহমিদুল হক এক লিখিত বক্তব্যে বলেন, সংবাদপত্রের মাত্র দু’জন সাংবাদিক এবং টেলিভিশনের ক্ষেত্রে চারটি ক্যামেরা ইউনিটের জন্য অনুমোদন সীমিত রাখা এবং সরাসরি টেলিভিশন সম্প্রচার ও ইন্টারনেট স্ট্রিমিং নিষিদ্ধ করার বিষয়গুলো নির্বাচনের স্বচ্ছতার পরিধিকে সীমিত করে ফেলেছে।



 

Show all comments
  • তাসলিমা বেগম ১১ মার্চ, ২০১৯, ১:৫১ এএম says : 0
    আমি তো ভোর রাতের অপেক্ষায় আছি, তবে সেটা কাজে নাও লাগানো হতে পারে, শুনছি ব্যালট বাক্স নাকি স্বচ্ছ নয়। তাতেই যা বোঝার বুঝেছি...
    Total Reply(0) Reply
  • Mubarak Hossain ১১ মার্চ, ২০১৯, ১:৫২ এএম says : 0
    ছাত্রলীগের প্রস্তুতি মাশাল্লাহ অনেক ভালো। কয়েকশ ব্যট,স্ট্যাম্প রেডি করে রেখেছে ভোটারদের সাইজ করার জন্যে।তবে সেগুলি ধরা পরে গেছে।আপাতত গোপন অস্ত্র দিয়েই সাইজ করবে মনে হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Mahmudol Hasan Hifj ১১ মার্চ, ২০১৯, ১:৫২ এএম says : 0
    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে (ডাকসু) প্রতিহিংসার রাজনীতির শিকার #ইসলামী_শাসনতন্ত্র_ছাত্র_আন্দোলনের ব্যানার : , তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আদর্শিক মোকাবেলায় ব্যার্থ হয়ে যারা ব্যানার-ফ্যাস্টুন ছিড়ে ফেলে তারা প্রগতিশীল নয় বরং ওরা পশ্চাদপদ। তারা ক্যাম্পাস ও সাধারন ছাত্রদের দুশমন।ওরা কখনই ক্যাম্পাসে শান্তি ও উন্নয়নের ধারক-বাহক হতে পারেনা। ওদেরকে বয়কট করে আদর্শের ঝান্ডাবাহী সংগঠন - ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের #আতায়ে_রাব্বী - #মাহমুদুল_হাসান - #শরীয়াত_উল্লাহ প্যানেলকে বিজয়ী করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • Abul Fazal ১১ মার্চ, ২০১৯, ১:৫৩ এএম says : 0
    ব্যালট পেপার সীল হলে হলে চলে গেছে। জাতীয় নির্বাচনে কোনই ঝামেলা হয় নাই আর এখানে তো সব হল দখলে। আবার একটা মিডনাইট শো দেখার অপেক্ষায়
    Total Reply(0) Reply
  • Mostofa Kamal ১১ মার্চ, ২০১৯, ১:৫৩ এএম says : 0
    ভোট দিনে নাকি রাতে হপে
    Total Reply(0) Reply
  • Sharif Uddin ১১ মার্চ, ২০১৯, ১:৫৩ এএম says : 0
    গ্রামের চকিদার হতে সব কিছু আওয়ামীলীগ দের আর নিবাচন দিয়ে লাভ কি
    Total Reply(0) Reply
  • noman rasidi ১১ মার্চ, ২০১৯, ৯:৫৪ এএম says : 0
    ছাএলীগের জয় সময়ের অপেক্ষা মাএ যেমনিভাবে জাতীয় নিরবাচনে আওয়ামীলীগের বিজয় সময়ের অপেক্ষা ছিল মাএ কারন সব কাজ সরকার করে রেখেছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ