Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নারীদের নিজেকেই সক্ষমতা অর্জন করতে হবে

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

বর্তমান সরকার নারীর ক্ষমতায়নে সমাজের সর্বস্তরে পুরুষের পাশাপাশি তাদের সমাধিকার নিশ্চিত করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের নারী সমাজকে নিজের ক্ষমতার উপর নির্ভর করে নিজেদেরই সক্ষমতা অর্জনের আহবান জানিয়েছেন।
আমাদের মেয়েরা এখন সব জায়গায় এগিয়ে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চাকরি-বাকরি, খেলাধুলা সব ক্ষেত্রে তারা যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছে। আগামীতে নারীরা বিমান বাহিনীতে ফাইটার জেট চালাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে নারী দিবস উদযাপন উপলক্ষে মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্থানীয় সরকার আইনে আমরা এক তৃতীয়াংশ নারী আসনের ব্যবস্থা করেছি। ইউনিয়ন এবং উপজেলাসহ সব জায়গায় একজন চেয়ারম্যানের সঙ্গে ভাইস চেয়ারম্যানের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। তিনি বলেন, যদিও ক্ষমতা দিয়েছি তবুও তারা সব জায়গায় ক্ষমতাটি প্রয়োগ করতে পারেন না। যারা দায়িত্বে আছেন তাদের নিজেদের ক্ষমতাটা নিজেদের অর্জন করে নিতে হবে। কেউ (ক্ষমতা) কখনও হাতে তুলে দেয় না, এটা হলো বাস্তবতা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা কথা মনে রাখত হবে- শুধু আইন করলেই নারীর প্রতি সহিংসতা এবং বৈষম্য দূর হবে না। এজন্য সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি করা একান্তভাবে দরকার। এক্ষেত্রে আমাদের সকলের মা-বোনেরা যেখানে যারা আছেন সকলকেই এক হয়ে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, একটা সমাজকে যদি গড়ে তুলতে হয় আর সেই সমাজের যেখানে অর্ধেকই নারী, তাদেরকে বাদ রেখে একটা সমাজ কখনও গড়ে উঠতে পারে না। কাজেই সেক্ষেত্রে সকলকে এক হয়ে কাজ করা- এটাই সব থেকে বেশি প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা নারীদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য স্বাধীনতার পর সংবিধানে মেয়েদের জন্য সংরক্ষিত নারী আসন দেন। তিনি মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করে দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, আগে জুডিশিয়াল সার্ভিসে কোনো নারীর চাকরির সুযোগ ছিল না। বঙ্গবন্ধু এই আইন বাতিল করে দিয়েছেন। ওই সময় নাজমুন আরা ছিলেন জেলা জজ। আমরা ক্ষমতায় এসে তাকে হাইকোর্টে নিয়ে আসি।
শেখ হাসিনা বলেন, এখন অনেক ধর্মীয় নেতা নারী শিক্ষার বিরোধিতা করেন। আমি তাদের বলতে চাই বিবি খাদিজা একজন ব্যবসায়ী ছিলেন এবং তিনিই প্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। কোনো পুরুষ তখন সাহস করেননি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীতে এখন অনেক নারী কাজ করেন। এমনিতে নারী পাইলট আছেন। আগামীতে বিমান বাহিনীতে ফাইটার জেট চালাবেন তারা। তিনি বলেন, সেনাবাহিনীতে একসময় মেয়েদের জায়গা ছিল না। ৯৬’ সালে আমি এসে সব চালু করে দেই। এছাড়া আমি প্রথম কয়েকজন নারীকে সচিবের পদমর্যাদা দেই। জেলা ডিসি, এসপির পদে মেয়েদের বাধা ছিল। এরপর আমি যাকে প্রথম নারী এসপি করে মুন্সীগঞ্জে আনলাম। তিনি দায়িত্ব নিয়েই ডাকাত ধরে ফেললেন। তার এ কাজের সঙ্গে আমিও জয়ী হয়ে গেলাম। মেয়েরা খেলাধূলায়ও অনেক এগিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
শিশু এবং নারী ধর্ষণকে অত্যন্ত গর্হিত একটি অপরাধ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ সময় ধর্ষিতা নারীর পরিচয় গোপন রেখে ধর্ষণকারিকে সমাজের সকলের কাছে তুলে ধরার জন্য গণমাধ্যমের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন, যারা (ধর্ষণ) করে তাদের প্রতি ঘৃণা এবং আমি বলবো তাদের নাম, পরিচয় ভালভাবে প্রচার করা কর্তব্য, যাতে করে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ তাকে ঘৃণার চোখে দেখে। তাছাড়া আইগত ব্যবস্থাতো তাদের বিরুদ্ধে নেয়া হবেই।
এ সকল অপরাধীর বিরুদ্ধে তার সরকার মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন, এটা কেবল বাংলাদেশের সমস্যা নয়, উন্নত সভ্য দেশেও এই সমস্যা রয়েছে। কাজেই এর বিরুদ্ধে আরো জনমত সৃষ্টি করা দরকার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কন্যা শিশুরা যেন কোনভাবেই বৈষম্যের শিকার না হয় সেই সচেতনতাটা আমাদের সমাজে ইতোমধ্যেই এসে গেছে। আর আমি এটাই মনে করি সমাজকে গড়ে তুলতে হলে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলেরই একান্তভাবে কাজ করা দরকার।
‘বিশ্বে যা কিছু সৃষ্টি চিরকল্যাণ কর, অর্ধেক তার আনিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর’ কাজী নজরুলের কবিতার এই পংক্তি উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে সমঅধিকার সেই অধিকারের কথা তিনি স্পষ্টভাবে বলে গেছেন। কাজেই সমাজ ও দেশেকে কল্যাণময় করতে হলে নারী-পুরুষের একসঙ্গে কাজ করাটা জরুরি।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে ইউএনডিপি’র প্রতিনিধি মিয়া সেপো বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন নাহার।#



 

Show all comments
  • Akher Ali ১০ মার্চ, ২০১৯, ১:৩৬ এএম says : 0
    ভোট চুরি করে প্রতিষ্ঠিত হতে হয়!
    Total Reply(0) Reply
  • Md Abu Taher Khan ১০ মার্চ, ২০১৯, ১:৩৭ এএম says : 0
    জাতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেই প্রশ্ন জাগে বিবেকের কাছে, নারীরা গনতন্ত্র রক্ষার জন্য রাস্তায়। পুরুষ নামের পুতুল গুলো ঘরে বসে রান্না করবে, সন্ধ্যা হলেই ফিরে আসবে স্বাধীন দেশের বাসার নেত্রী। এরই নাম ইসলামী বাংলাদেশ, সাবাশ বাংলাদেশ যাও এগিয়ে।
    Total Reply(0) Reply
  • Ali Bokthiyar ১০ মার্চ, ২০১৯, ১:৩৮ এএম says : 0
    তোমাকে কি বলিব। বুজিতে পারিতেছি না। ইসলাম বুজিতে হবে, মানিতে হবে, তার পর সে মুসলিম। না হয় সে মোনাফেবক জাহানঁনামে জলিবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Zannatul F Khanam ১০ মার্চ, ২০১৯, ১:৩৮ এএম says : 0
    শিশু ও নারী নির্যাতন আইন এর বাস্তব প্রয়োগ চাই।
    Total Reply(0) Reply
  • Rubel Hossain ১০ মার্চ, ২০১৯, ১:৩৮ এএম says : 0
    ইসলামে একজন নারীকে পর্দায় থাকতে বলেছে। নারীর মাথার চুল মুখও আপন মানুষ ছাড়া দেখা জাবে না সেখানে উনি খাদিজা রাঃ সাথে তুলনা করেন
    Total Reply(0) Reply
  • Md Molla ১০ মার্চ, ২০১৯, ১:৪১ এএম says : 0
    নারী গনধর্ষন হইতে মুক্তি পাইতে হলে নিজ বাড়ি ঘরে নিরাপদে থাকুন, আললাহকে ভযভয় করুন। যে নারী গনধর্ষনকেই প্রতিনিধিত্ব করে, সে আবার কি দিবস পালন করে।যে দেশের প্রধান নারি,সেই নারী গনধর্ষন হয়। দেখেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ইহুদি, ফিলিস্তিনদের হত্যাকরে , কিন্তু নারিকে দিবালোকে ধর্শন করে না।আমাদের প্রধান ম্ন্রী নারী সে মুসলমান দাবি করে, তার দেশে দিবালোকে নারী গনধর্ষন হয়, তাও আবার টিভি চ্যানেল সারা বিশ্ব দেখায়।মাটির মূর্তি যেমন নিজেকে রক্ষা করতে পারে না। সে নারী হয়ে করি করে নারীকে রক্ষা করবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Shah Alam Khan ১০ মার্চ, ২০১৯, ৮:৩০ এএম says : 0
    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন উপলক্ষে নারীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, দেশের নারী সমাজকে নিজের ক্ষমতার উপর নির্ভর করে নিজেদেরি সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। এখন আমাদের সমাজের নারীরা যদি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী নিজেদের সক্ষমতা অর্জন করতে পারে তাহলেই নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে এটাই সত্য। প্রধানমন্ত্রী আরো একটা বিষয় সামনে এনেছেন সেটা হচ্ছে ধর্ষণের বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদেরকে যে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন এভাবে যদি সাংবাদিক ভাইয়েরা কাজ করেন তাহলে ধর্ষকরা মুখ লুকাতে সক্ষম হবে না এবং সাজা পেয়ে যাবে। অপরদিকে ধর্ষিতাকে পর্দার অন্তরালে রেখেদিলে তাঁর সামাজিক সম্মান রক্ষা পাবে এবং তাঁর ভবিষৎ অন্ধকার হবার কোন সম্ভবনা থাকবেনা। মামলা করলে উকিলের মারপেচে এসব ধর্ষকেরা রেহাই পেয়ে যায় এটাই সত্য। তাই সাংবাদিকেরা যদি নেত্রী হাসিনার কথা শুনেন তাহলে ধর্ষকদের দফা রাফা হয়ে যাবে। আল্লাহ্‌ আমাদেরকে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা দান করুন। আমিন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ