Inqilab Logo

শনিবার, ০৬ জুলাই ২০২৪, ২২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

চারদিনে ৭৬টি ভবনের পরিষেবা বিচ্ছিন্ন

রাসায়নিকের গুদাম উচ্ছেদে টাস্কফোর্সের অভিযান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০১৯, ১২:৪৮ এএম

পুরান ঢাকায় চলমান টাস্কফোর্সের অভিযানে গতকাল চতুর্থদিনে ২৯টি কেমিক্যাল গোডাউনের গ্যাস, বিদ্যুৎসহ সকল সার্ভিস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। চকবাজারে অগ্নিকান্ডের পর ডিএসসিসির নেতৃত্বাধীন টাস্কফোর্স নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে। এ নিয়ে গত ৪ দিনে মোট ৭৬টি হোল্ডিংয়ের পরিষেবা বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। যতদিন কেমিক্যাল গোডাউনের অস্তিত্ব পাওয়া যাবে ততদিন পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন ডিএসসিসি’র মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।
গতকাল সোমবার ৪টি টাস্কফোর্স অভিযান পরিচালনা করে। এর মধ্যে টাস্কফোর্সের ৫ নম্বর টিম তাঁতিবাজার এলাকায় মোট ৭টি, ২ নম্বর টিম হরনাথ ঘোষ ও নন্দকুমার দত্ত রোডের ৮টি হোল্ডিং ১ নম্বর টিম হাজারীবাগের নীলাম্বর এবং মনেস্বর রোড এলাকার মোট ৮টি হোল্ডিং এবং ৩ নম্বর টিম ৬টিসহ মোট ২৯টি কারখানার পরিষেবা বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।
এদিকে বিগত চারদিনে যেসব বাড়ির পানি, বিদ্যুৎ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল তাদের মধ্যে হতে ১৫টি কারখানার মালিক কারখানাগুলোতে পুনরায় পরিষেবা সংযোগ প্রদানের জন্য ঢাকা দক্ষিণের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বরাবর আবেদন করেছেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে টাস্কফোর্স যাচাই করে ইতোমধ্যে ৮টি কারখানা পরিষেবা পুনরায় সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আবেদনকৃত আরো ৭টি কারখানা টাস্কফোর্স কর্তৃক পরিদর্শন সাপেক্ষে পুনরায় সংযোগ প্রদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ডিএসসিসি’র জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায় বলেন, আবেদনে হোল্ডিং মালিকরা জানিয়েছেন যে, পরিষেবা বিচ্ছিন্নকৃত কারখানাগুলোতে এখন জানমালের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এমন মালামাল বা দাহ্য পদার্থ এখন আর নেই। এটি যাচাইপূর্বক পরিষেবা লাইন পুনঃসংযোগদানের জন্য আবেদন জানাচ্ছি। কৃত আবেদনের প্রেক্ষিতে বর্ণিত হোল্ডিংসমূহ পরিদর্শন করে বক্তব্যের সত্যতা পাওয়ায় ৮টি হোল্ডিংয়ে পরিষেবা পুনরায় সংযোগ দেওয়া হয়েছে। বাকী ৭টি আবেদন করা হোল্ডিংগুলো পরিদর্শন করে সংযোগ প্রদান করা হবে। গত ২ মার্চ ৪টি পুনঃসংযোগ প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া ৩ মার্চ শহীদনগর এলাকার পুনঃসংযোগ দানকৃত ৪টি হোল্ডিং হল ৭৮, ১৩৫-ক, ৮১ এবং দাগনং ৬৬১৫। পুনঃসংযোগ বিবেচনাধীন হোল্ডিংগুলো হলো- ইসলামবাগের ১২/৪, ১৫/১, ১১/১, ৭০/৩, ৭২, ৭৪/২ এবং আজগর লেনের ২৯/১।
গতকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত পুরান ঢাকার নাজিরাবাজার, সিদ্দিকবাজার, হাজারীবাগ, তাঁতীবাজার ও চকবাজার এলাকায় ৪টি টাস্কফোর্স অভিযান পরিচালনা করে। টাস্কফোর্সের ৩ নম্বর টিম পুরান ঢাকার নাজিরাবাজার থেকে সিদ্দিকবাজার পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করে। এই অভিযানে এলাকার ৭টি ভবনের তিনটি সিলিন্ডারের দোকান ও ৩টি কেমিক্যালের গোডাউন ও প্লাস্টিক কারখানার গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। অভিযানের সঙ্গে থাকা বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাহিদুর রহমান বলেন, সিদ্দিকবাজারের হাজী ওসমান গনি রোডে দুপুর ১টা পর্যন্ত ৭টি সিলিন্ডার, প্লাস্টিক ও কেমিক্যালের গোডাউনের সব ধরনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এর আগে তাদের সতর্ক করা হলেও কেউ মালামাল স্থানান্তর করেনি।
এদিকে, পুরান ঢাকার হাজারীবাগ এলাকার কেমিক্যাল গোডাউন অপসারণে অভিযান চালায় টাস্কফোর্সের ১ নম্বর টিম। এই টিমের নেতৃত্ব দেন ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুবর্ণা শিরিন। ডিএসসিসি’র অঞ্চল-৩ এর কর কর্মকর্তা জুনায়েদ আমিন বলেন, হাজারীবাগ এলাকায় ৮টি আবাসিক ভবনে অভিযান পরিচালনা করা হয়। সেখানে রঙয়ের গোডাউন ছিল। ওই ৮টি ভবনে থাকা গোডাউনের গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
টাস্কফোর্সের ৫ নম্বর টিম পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। এই এলাকার ৭টি আবাসিক ভবনে থাকা প্লাস্টিক ও কেমিক্যাল গোডাউনের গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। ডিএসসিসির অঞ্চল-৪ এর নির্বাহী কর্মকর্তা উদয়ন দেওয়ান বলেন, তাঁতীবাজার এলাকার ৭টি কারখানার গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এর মধ্যে একটা ব্যাটারির কারখানা ছিল।
এদিকে, ডিএসসিসির টাস্কফোর্সের ২ নম্বর টিম পুরান ঢাকার চকবাজার এলাকার নন্দ কুমার দত্ত ও আজগর লেনে অভিযান পরিচালনা করে। সেখানে প্লাস্টিক ও কসমেটিকসের ৮টি গোডাউনের গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। ডিএসসিসি’র স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, চকবাজারের বিভিন্ন আবাসিক ভবনে অভিযান চালানো হয়েছে। এর মধ্যে ৮টি প্লাস্টিক ও কসমেটিকস গোডাউনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। টাস্কফোর্সের অভিযানগুলোতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) কর্মকর্তাসহ বিস্ফোরক অধিদফতর, পরিবেশ অধিদফতর, ঢাকা জেলা প্রশাসন, তিতাস গ্যাস, ঢাকা ওয়াসা ও ডিপিডিসি, ফায়ার সার্ভিস ও সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
চরবাজারের চুড়িহাট্টায় গত ২০ ফেব্রুয়ারি ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ৭১ জনের প্রাণহাণির পর পুরান ঢাকা থেকে সব রাসায়নিকের গুদাম সরাতে সময় বেঁধে দেয় সরকার। চুড়িহাট্টায় অগ্নিকান্ডে অন্তত পাঁচটি ভবন পুড়ে যায়, যেগুলোতে প্লাস্টিক দ্রব্য, রাসায়নিক কিংবা প্রসাধন সামগ্রীর গুদাম ছিল। নয় বছর আগে নিমতলীতে অগ্নিকান্ডে শতাধিক মানুষের প্রাণহানির পর পুরান ঢাকার সব রাসায়নিকের গুদাম সরিয়ে ফেলার সুপারিশ করা হয়েছিল। সেই উদ্যোগ নেওয়া হলেও ব্যবসায়ীদের অসহযোগিতায় তা সম্ভব হয়নি বলে সরকারের ভাষ্য। চুড়িহাট্টার অগ্নিকান্ডের পর সরকার আবারও উদোগী হলে প্রথম দিনই আপত্তি তোলেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ভবন মালিকদের অনেকে। গত রোববার লালবাগের শহীদনগর এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা। তাদের প্রায় দুই ঘণ্টা একটি প্লাস্টিক কারখানায় অবরুদ্ধ করে রাখেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। #



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ