Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুখ থুবড়ে পড়েছে প্রকল্প

দারিদ্র্য বিমোচনে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ৪ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৩ এএম | আপডেট : ১২:১৮ এএম, ৪ মার্চ, ২০১৯

২০২০ সালের মধ্যে দেশে দরিদ্রতার হার শতকরা ১০-এ নামিয়ে আনার লক্ষ্যে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। দারিদ্র্য বিমোচন স্বপ্ন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ নেয়া এই ক্ষুদ্র সঞ্চয় মডেলের প্রকল্প এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে। দেশের ৬৪ জেলায় ৪৮৫টি উপজেলায় ৪ হাজার ৫০৩টি ইউনিয়নের দুই হাজার সমিতি বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় তিন হাজার সমিতি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। সেগুলো এখনো চালু রয়েছে সেগুলোয় উঠান বৈঠক হচ্ছে না। ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে ৪০ হাজার ৫২৭টি সমিতি গড়ে তোলা হয়েছিল। অবশ্য প্রকল্প পরিচালক আকবার হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, ৪০ হাজার ৫২৭টি সমিতির মধ্যে ১১ হাজার সমিতির কার্যক্রম চলছে না। আর বাকিগুলো চলছে।
‘কাজীর গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেই’ প্রবাদের মতোই ২০১৫ সালের পর থেকে নামেই ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ রয়েছে, বাস্তবে দেখার কেউ নেই। অন্য দিকে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক প্রকল্পের টাকাও অনলাইনের লেনদেন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ১৬টি বেসরকারি ব্যাংকে প্রকল্পের টাকা রেখে বন্ধ করে দিয়েছে ঋণ এবং বঞ্চিত করছে এক কোটি গরিব সদস্যকে। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. মিহির কান্তি মজুমদার এবং প্রকল্পের পরিচালক আকবর হোসেনসহ সমিতির অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রয়েছে সরকারি টাকা তসরুফ, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ।
গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষের জন্য এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগের প্রথম প্রকল্পটি। বর্তমানে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছে। ঝুঁকিগুলো হচ্ছে- ঋণখেলাপি বৃদ্ধি, ঋণের সঠিক ব্যবহার না হওয়া, ঋণের সীমাবদ্ধতা, ঋণ পেতে দীর্ঘসূত্রতা, ঘন ঘন নীতিমালা পরিবর্তন, ঋণ ফেরত না পাওয়া, স্বেচ্ছাচারিতা ও প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা ইত্যাদি। এ ছাড়া নানা দুর্বলতার কারণে প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়েছে।
পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. মিহির কান্তি মজুমদার ইনকিলাবকে বলেন, ব্যাংকের অনলাইনের লেনদেন বন্ধ করা হয়নি। সদস্যদের স্বার্থে ১৬টি বেসরকারি ব্যাংকে প্রকল্পের টাকা রাখা হয়েছে। যত দুর্নীতি হয়েছে তা সাবেক এমডি করেছে। আমরা করিনি। প্রকল্পের পরিচালক আকবার হোসেন বলেন, ৪০ হাজার ৫২৭টি সমিতি। এর মধ্যে ১১ হাজার সমিতির কার্যক্রম চলে না। আর বাকিগুলো চলছে। আমাদের প্রকল্পের ৯ হাজার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মধ্যে ৬ হাজারই নেই। আছে মাত্র ৩ হাজার। সদস্যদের ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ১৬-১৭টি ব্যাংকে রাখা হয়েছে। গত বছর ৫৮ কোটি টাকা লাভ আছে। ৪ হাজার ১৬২ জনকে ব্যাংকে নেয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেই বলেছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। এসডিজি ২০৩০ ও উন্নত বাংলাদেশ ২০৪১ দুটোই নির্ভর করছে সরকারের বিশেষ বিশেষ প্রকল্প ও কর্মসূচির ওপর। সাথে ব্যাংকিং খাতের সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতি দূরীকরণ। শেখ হাসিনা বিশেষ উদ্যোগ-১ হচ্ছে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, যার সাথে সম্পৃক্ত পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক। দেশে প্রথম সরকারি সহায়তায় দরিদ্র মানুষের স্থায়ী তহবিল গড়ে দেয়া। এটি প্রচলিত মাইক্রোফিন্যান্সিংয়ের উন্নত এক নতুন অধ্যায়।
প্রকল্পটি দেশব্যাপী ৪ হাজার ৫০০ ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে একটি করে মোট ১ লাখ সমিতির ৬০ লাখ হতদরিদ্র ও দরিদ্র পরিবার নিয়ে কাজ করছে। এ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, দরিদ্র জনগণ মাসে ২০০ টাকা সঞ্চয় করলে সরকার ২০০ টাকা বোনাস দেয় এবং ৬০ জনের একটি সমিতিতে বছরে অতিরিক্ত দেড় লাখ টাকা ঘূর্ণায়মান তহবিল দেয়। এভাবে একটি সমিতিতে বছরে প্রায় ৪.৫ লাখ টাকার তহবিল, যা দুই বছরে প্রায় ৯ লাখ টাকায় উন্নীত হয়। এসবই সামাজিক নিরাপত্তা খাতের অনুদানের টাকা।
২০১৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত ৪০ হাজার সমিতির মোট মূলধন গড়ে ওঠে ৩৩৯৫ কোটি টাকা যার মধ্যে গরিব সদস্যদের ১০৭৪ কোটি এবং সরকার দিয়েছে ২১৪০ কোটি; যাতে যোগ হয়েছে নিজেদের দেয়া ৮ শতাংশ সার্ভিস চার্জ ও ব্যাংক সুদ ৫২ কোটি টাকা। এ অর্থ দরিদ্র জনগোষ্ঠী উঠান বৈঠকে বসে নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ছোট ছোট ৩১ লাখ পারিবারিক খামার গড়ে তোলে এবং কিস্তিতে কিস্তিতে তা পরিশোধ করে।
প্রধানমন্ত্রীর ক্ষুদ্র সঞ্চয় মডেলের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ৬০ জন সদস্যের ৪০ জনই নারী। তৃতীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, গরিবের এ আর্থিক লেনদেন স্বচ্ছতার সাথে নিশ্চিত হয় উঠান বৈঠকে বসে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। এ তহবিল উপকারভোগীদের গ্রাম উন্নয়ন সংগঠনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা থাকে অর্থাৎ তহবিল স্থায়ী, প্রয়োজন শুধু স্থায়ী বিনিয়োগ, যার মাধ্যমে স্থায়ী আয় ও স্থায়ী দারিদ্র্য বিমোচন ঘটবে। প্রকল্পের মোট বরাদ্দ ৮ হাজার কোটি টাকা টার্গেট গ্রুপ ৬০ লাখ পরিবার বা ৩ কোটি দারিদ্র্যসীমার নিচের মানুষ। কাজেই বলা যায়, এ প্রকল্পের ক্ষুদ্র সঞ্চয় মডেলের সঠিক বাস্তবায়নের ওপরই নির্ভর করছে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন।



 

Show all comments
  • Mong hla marma ৪ মার্চ, ২০১৯, ২:০৮ পিএম says : 0
    lack of people service holder
    Total Reply(0) Reply
  • মামুন ৪ মার্চ, ২০১৯, ৭:১৫ পিএম says : 0
    এক বছর ধরে মাঠ সহকারী নিয়োগের ভেরিফিকেশন হচ্ছে কিন্তু নিয়োগ এখনো হলনা আজব দেশে আছি আমরা! অথচ মাঠে লোকের অভাব!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রকল্প


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ