Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিদ্রোহীরা নৌকা ডুবাতে তৎপর

সিলেটে উপজেলা নির্বাচন

ফয়সাল আমীন | প্রকাশের সময় : ৩ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

সিলেটে চরম হুমকিতে শাসক দল আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক চেইন অব কমান্ড। পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ২য় ধাপে জেলার ১২টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৮ মার্চ । এ উপজেলা নির্বাচন ঘিরে দলে এহেন অস্থিরতায় বহুদা বিভক্ত হয়ে পড়ছে দলের তৃণমূল। এতে করে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে ওঠছে।
নেতাকর্মীরা পরস্পরকে সন্দেহ-অবিশ্বাসের চোখে দেখছে। ঐক্যে ঘটছে সর্বনাশ। পারস্পরিক বিষেদগার ছড়িয়ে পড়ছে। স্থানীয় নেতাদের ওপর দেখা দিয়েছে আস্থার সঙ্কট। একদিকে নৌকা জেতানোর চেষ্টা, অপরদিকে চলছে ডুবানোর আয়োজন। খোদ দলে অশুভ প্রতিযোগিতায় সক্রিয় নেতাকর্মীরা অভ্যন্তরীণ বিরোধে ক্ষমতালোভী মানসিকতায় নৌকার জয় এখন চ্যালেঞ্জের মুখে। দলের হাই কমান্ডের প্রার্থীকে তোয়াক্কা না করে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন উপজেলা কমিটিগুলোর নেতারা গ্রুপ বাজির নির্মম খেলায় মেতে ওঠেছেন।
সাধারণ মানুষ মোটেই ভালো চোখে দেখছে না এ বিষয়টি।
সিনিয়র-জুনিয়র সকলে জড়িয়ে পড়ছেন নির্বাচন কেন্দ্রীক নিজস্ব শক্তি মত্তা প্রদর্শনে। তাদের পারস্পরিক লবিং-গ্রুপিং বাজিতে হিংসার মুখে নৌকা ও আওয়ামী লীগ। তাদের সাথে সংযোগ ঘটছে নৌকা বিরোধী রাজনীতিক দলের নেতাকর্মীদের। বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিকট বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা এখন অতি গুরুত্বপূর্ণ। বিদ্রোহীরা আশ্বাস দিচ্ছেন, সঙ্গে থাকেন নিরাপদে থাকবেন। বিরোধী দলের নেতাকর্মীরাও কাটা দিয়ে কাটা তোলার এমন মোক্ষম সুযোগ মিস করতে চাইছে না।
নৌকা ডুবিয়ে, স্থানীয় এমপিদের আশীর্বাদপুষ্ট বিদ্রোহী প্রার্থীদের জয় নিশ্চিতে ব্যাপক তৎপর এখন বিরোধী রাজনীতিক কর্মী সমর্থকরা। ত্যাগ তীতিক্ষায় পরীক্ষিত দল মনোনীত নৌকা প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমালোচনায় বসে নেই বিরোধী রাজনীতিক নেতাকর্মীরা। অবস্থার এহেন বাস্তবতা এখন উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে ঘটছে আওয়ামী লীগে। শুক্রবার রাতে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় আশাতীত উপস্থিতি ঘটেনি দলের পদবীধারী ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন নেতাদের। তারা নৌকার প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ করে দলের চেইন অব কমান্ডকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে প্রকাশ্য সরব।
এই সভায় নৌকার বিপরীতে দলের যারা কাজ করবে তাদের মুশতাক অনুসারী বলে আখ্যায়িত করছেন দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতারা। এতে করে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠছে। শুধু দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় নয়, অন্য উপজেলাগুলোতে একই অবস্থা। এই অবস্থায় বিএনপি জামাতের সমর্থকরা ভিড়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীদের বলয়ে। পদবীধারী নেতাদের কমান্ড হাস্যরসে পরিণত হওয়ার উপক্রম। অথচ কিছুদিন আগেও এই নেতাদের নির্দেশনায় মুখিয়ে থাকতো দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
দল ও প্রতীকের চেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রতি তৎপর হওয়ার নৈপথ্যে রয়েছেন বেশিরভাগ এলাকায় স্থানীয় এমপিদের ব্যাক্তিগত স্বার্থ। তারা তাদের বলয় শক্তিশালী করতে নৌকার প্রার্থীকে হারিয়ে অনুগত ব্যক্তিকে বিজয়ী করতে চায়, স্থানীয় নির্বাচনী এলাকায় নিরঙ্কুশ আধিপত্য বজায় রাখতে।
সর্বশেষ অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে ‘বিদ্র্রোহী প্রার্থী’ ফ্যাক্টরের কারণেই আওয়ামী লীগের অধিকাংশ দলীয় প্রার্থীরা পরাজয় বরণ করেছিলেন। ১৩টি উপজেলার মধ্যে মাত্র ৪টিতে জয় পান আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। এ বছর নির্বাচনে ১২টির মধ্যে ৮টি উপজেলাতেই দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিতরা চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। বিএনপির দলীয় প্রার্থী না থাকা স্বত্তে¡ও আবারো পরাজয়ের ‘আতঙ্ক’ নিয়ে নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। নয়টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে এসব বিদ্রোহী প্রার্থীরা হেভিওয়েট হওয়ায় বিএনপিবিহীন নির্বাচন জমে ওঠতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকে।
কোন কোন উপজেলাতে একাধিক প্রার্থী বিদ্রোহী হিসেবে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন নির্বাচনে। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জোরেশোরে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন দলীয় নীতি আদর্শ ও নির্দেশনাকে অবজ্ঞা করে। জেলার আটটি উপজেলায় হেভিওয়েট বিদ্রোহী প্রার্থীরা হলেন-সিলেট সদরে আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট নূরে আলম সিরাজী, কানাইঘাটে জেলা আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক মস্তাক আহমদ পলাশ, দক্ষিণ সুরমায় জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ময়নুল ইসলাম, জৈন্তাপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কামাল আহমদ, বিয়ানীবাজারে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আবুল কাশেম পল্লব, গোয়াইনঘাটে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমদ, কোম্পানীগঞ্জে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম আহমদ, ফেঞ্চুগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা নূরুল ইসলাম।
এদিকে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের এক প্রার্থী বলেন, দলের নীতি নির্ধারকরা ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটিকে স্থানীয় ভোট কেন্দ্রে নৌকার বিজয় নিশ্চিতে নির্দেশনা প্রদান করলে, বিদ্রোহীদের দৌড়ঝাঁপ নিয়ন্ত্রিত হয়ে যেত। পাশাপাশি ওয়ার্ড কমিটির ব্যর্থতা ও দল বিরোধী তৎপরতায় নৌকার পরাজয় হলে কমিটি বিলুপ্তসহ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি ঘোষণা এখন জরুরি।
এ ব্যাপারে মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণে দলের তৃণমূলে বিভক্তিসহ বিব্রতভাব লক্ষণীয়। একই সাথে দলের নির্দেশনা হচ্ছে উপেক্ষিত। এই সুযোগে সরকার বিরোধী কর্মী-সমর্থকরা আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা করছে, বিদ্রোহী প্রার্থীরাও নিজদের নির্বাচনী রাজনীতিতে সুবিধা পেতে কাছে ভেড়াচ্ছেন তাদের। তিনি বলেন, বিষয়টি দলের নীতি নির্ধারকদের নজরে দিয়ে নৌকার বিজয়সহ সাংগঠনিক ভিত্তি অটুট রাখতে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। কোনো অবস্থায় চেইন অব কমান্ড প্রশ্নবিদ্ধ করতে দেয়া হবে না বলেও জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ