পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নিষিদ্ধ হওয়ার পরও বাজারে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ব্রান্ডের এনার্জি ড্রিংকস। কার্বোনেডেট বেভারেজ হিসেবে অনুমোদন নিলেও চটকদার বিজ্ঞাপন আর মুখরোচক ক্ষতিকর উপাদান দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে স্বার্থান্বেষী ব্যবসায়ীরা। কুমিল্লার প্রতিটি দোকানে এসব পানি বিক্রি হলেও দেখার যেন কেউ নেই। এসব এনার্জি ড্রিংকস পান করলে দেখা দিতে পারে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। অথচ নিষিদ্ধ হওয়ার পরেও প্রকাশ্যে এসব পানিয় বিক্রি করছে কুমিল্লার ব্যবসায়ী। যুবকদের অতিরিক্ত চাহিদার কারণে প্রত্যেক দোকানে থরে থরে সাজিয়ে রেখেছে পণ্যটি। বর্তমানে বিভিন্ন স্থানে মাদক বিক্রিতে কড়াকড়ি আরোপ করায় যুবকরা এ ড্রিংকসের প্রতি ঝুঁকে পড়ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেকটা নিরব ঘাতকের মত এসব এনার্জি ড্রিংকস মানুষের ক্ষতি করছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, এনার্জি ড্রিংকস বা হেব্বি এনার্জি শিরোনামে চটকদার বিজ্ঞাপনের নামে বাজার দখল করা পন্যগুলো মূলত কার্বোনেডেটেড বেভারেজ হিসেবে অনুমোদন নেয়া। প্রকাশ্যে অবৈধ এসব পানীয় বাজারে সয়লাব। কিন্তু এসব বন্ধে কোন উদ্যোগ নেই প্রশাসনের। এ মাত্রার এনার্জি ড্রিংকস নিয়মিত পান করলে বাড়তে পারে স্থুলতা। ক্ষয় হতে পারে দাঁতের। এছাড়াও ঘুমেরও সমস্যা হতে পারে। গত কয়েক দিন ধরে কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকায় এনার্জি ড্রিংকস বিক্রির দৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। দোকানগুলোতে তৃপ্তি ক্যান, আনন্দসহ ২০ প্রকারেরও বেশি এসব এনার্জি ড্রিংকস বিক্রি হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্যবসায়ী ইনকিলাবকে বলেন, তারা স্টকে থাকাগুলোই বিক্রি করছেন। নতুন করে নিয়ে আসেননি। সচেতন মহলের কথা যেহেতু এনার্জি ড্রিংক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেহেতু কুমিল্লার বাজারে বিক্রি বন্ধে অভিযান চালানো উচিত। কুমিল্লা নগরীর শাসনগাছা এলাকায় আমিনুল ইসলাম, এনায়েত উল্লাহ ইনকিলাবকে বলেন, এনার্জি ড্রিংক এর বিরুদ্ধে সরকারের দ্রুত পদক্ষে নেয়া উচিত। কারণ এনার্জি ড্রিংকস পান করলে স্বাস্থ্য ঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে। তারা এ ব্যাপারে স্থানীয় ও পুলিশ প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। বিএসটিআই কর্তৃপক্ষ বলছে সমন্বিত টেকনিক্যাল কমিটিও এনার্জি ড্রিংকসের বাজারজাত নিষিদ্ধ করেছে। বিএসটিআই অনুমোদিত হলেও এসব বেভারেজে ক্যাফেইনের সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রা ১৪৫ মিলিগ্রাম। কিন্তু সায়েন্স ল্যারেটরির নমুনা পরীক্ষায়, স্পিডে ক্যায়েইনের মাত্রা, ২৯১ মিলিগ্রাম, রয়েল টাইগারে ২৬৬, ব্ল্যাক হর্স এ ২০৬, পাওয়ার এ ৩৪৪, অস্কার ৩৮৫ এবং ব্রেভারে ৩৬১ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ক্যাফেইন মেশানো।
বিগত বছর দুয়েক আগে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বাজার থেকে ৭ টি কোম্পানির উৎপাদিত এনার্জি ড্রিংকস সংগ্রহ করে রাজধানীর তিনটি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার জন্য পাঠায়। পরীক্ষায় ৭ টি কোম্পানির সাতটি ড্রিংকসেই মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। দেশের যে সাতটি ব্র্যান্ডের এনার্জি ড্রিংকসে উচ্চ মাত্রার ক্ষতিকর ক্যাফেইন পাওয়া গেছে সেগুলো হলো স্পীড, টাইগার, পাওয়ার, অস্কার, ব্রেভার, রেড বুল, ব্ল্যাক হর্স। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, এনার্জি ড্রিংকসে ক্যাফেইনের মাত্রা সর্বোচ্চ ১৪৫ পিপিএমের কথা বলা থাকলেও এসব ব্রান্ডে পাওয়া গেছে ৩০০ থেকে ৪০০ পিপিএম। বিএসটিআই থেকে বেভারেজ হিসাবে অনুমোদন নিয়ে বাজারে এনার্জি ড্রিংকস হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে এসব পণ্য। বিভিন্ন নেশাজাত দ্রব্য মাদকাসক্তরা গোপনে সেবন করলেও এনার্জি ড্রিংকস আসক্তি বাড়ছে প্রকাশ্যেই। দিনের পর দিন অতিরিক্ত ক্যাফেইন শরীরে প্রবেশের ফলে অসুখ সারাতে ব্যবহৃত ওষুধও কাজ করে না। মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইন মিশ্রিত বিভিন্ন ধরনের এনার্জি ড্রিংকস নেশার জগতে নীরব সংযোজন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, এনার্জি ড্রিংক এক জাতীয় পানীয় যা পানে শরীরের সাময়িক স্টামিনা ও কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে দেয়। এসব ড্রিংকসে মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইন, চিনি এবং টাউরিন নামক পদার্থ থাকে যা শরীরের ডায়াবেটিস, হার্ট এট্যাক, ব্লাড প্রেসার ও কিডনী ফেইলরের ঝুঁকির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইন সেবনকারী প্রতিদিন ক্যাফেইন পান না করলে প্রচন্ড মাথা ব্যাথা, ডিপ্রেশন ও নার্ভাসনেসে ভুগেন। এনার্জি ড্রিংকসে ব্যবহৃত ক্যাফেইনের পরিমান ১৬ বছরের নীচে ছেলে মেয়েদের জন্য বিপদজনক। পাশাপশি গর্ভবতী নারী ও দূর্বল চিত্তের লোকদের তো বটেই। টাউরিন, গ্লোকোরোনোলেকটন নামক পদার্থ আমাদের শরীরে এমনিতে তৈরী হয়। টাউরিন একটি এমিনো এসিড জাতীয়। এনার্জি ড্রিংকসগুলোতে প্রচুর পরিমানে এ এসিড ব্যবহার হয়। যার অতিরিক্ত উপস্থিতি শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা বলেন, আমরা অনেকে শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করতে এনার্জি ড্রিংকস পান করি। মনে করি পানির চাহিদা ও মিটলো বাড়তি কিছু এনার্জি ও যোগ হলো। এ ধারনা একদম ভুল। এনার্জি ড্রিংকস শরীরে বাড়তি কিছু স্টামিনা বাড়ালেও পানির অভাব পূরণ করতে পারে না। বরং মারাত্মক ক্ষতি করে। শুধু তাই নয় ক্যাফেইনের কারণে লবণের তারতম্যেও হতে পারে অনিয়মিত হৃদস্পন্দন। এছাড়াও দেখা দিতে পারে ঘুম না হওয়া, অস্থিরতা, পেটের গন্ডগোল, হাত-পায়ে কাঁপুনি, দ্রুত হৃদস্পন্দন এমনকি এতে মানুষ মারাও যেতে পারে। গর্ভবতী মায়েদের জন্য এটি হতে পারে গর্ভপাতের কারণ। এছাড়া গর্ভস্থ শিশু হতে পারে কম ওজনের, দেখা দিতে পারে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা।
কুমিল্লার মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. ইজাজুল হক ইনকিলাবকে বলেন, এনার্জি ড্রিংকসে বিদ্যমান সোডিয়াম বেনজয়েটও শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, এনার্জি ড্রিংসের আমাদানি ও বাজারজাত নিষিদ্ধ করেছে। এনার্জি ড্রিংকসের ক্ষতিকর উপাদানগুলো কিডনি ও লিভারে আক্রমন করে তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন টেলিভিশনে দেখা যায়, বড় বড় তারকারা এসব কোমল পানীর বিজ্ঞাপন করছেন। এজন্য ক্রেতারা সেদিকে ঝুঁকছেন বেশি। তিনি বলেন, বেশকিছু কোমল পানীতে নেশা জাতীয় অ্যালকোহেল রয়েছে। সামান্য অ্যালকোহেলে ক্ষতি না করলেও তবে খোলা বাজারের যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট বা কোমল পানীর মান একেবারে খারাপ। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কুমিল্লা অঞ্চলের উপ-পরিচালক মোঃ মানজুরুল ইসলাম বাজারজাত এনার্জি ড্রিংকসগুলোতে ক্যাফেইনের মাত্রা বেশি থাকলে অনুমোদনহীন এ জাতীয় এনার্জি ড্রিংকস বিক্রি করা হলে এসব বিক্রেতার বিরুদ্ধে শিগগিরি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।