পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এই যে বড়ি দিয়ে ঝোল রাঁধুনি পাগল। মহল্লার অলিগলিতে এমনভাবে হাঁক ডাক হচ্ছে গৃহিনীদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। মাষ কালাই ডালের সঙ্গে পাকা কুমড়ো দিয়ে তৈরী বড়িগুলো দেখতে প্রায় সাদা সন্দেশের মত। বিভিন্ন আকারের সাদা বড়িগুলো সহজেই ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে।
বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলে শুধু কালাইয়ের রুটি জনপ্রিয় খাবার নয়। মাষ কালাইয়ের বড়িও কম যায় না। ইলিশ ও রুই মাছ, পালংশাক, বেগুন, লাল চিংড়িতে বড়িসহ বিভিন্ন তরকারীতে বড়ি অন্য রকম স্বাদ আনে। এই বড়ির স্বাদেই ভোজন রসিকদের তালিকায় প্রিয়তা পাচ্ছে এবং দিন দিন চাহিদা বাড়ছে। তরকারী ভর্তা সব রকম ভাবেই খাওয়া যায়। সংরক্ষণ করে সারা বছর এর স্বাদ নেয়া যায়।
আগে বাড়িতে নিজেদের খাবার জন্য মাষ কালাইয়ের ডাল ও পাকা চাল কুমড়ো দিয়ে বড়ি তৈরী হতো। বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে তৈরী হচ্ছে। প্রবাসীদের কাছে এর কদর কম নয়। ফলে বিদেশে পাড়ি দিয়ে তার স্থান দখল করে নিচ্ছে।
সাধারণত শীতকালেই শুরু হয় বড়ি তৈরী। এ সময় বাজারে পাওয়া যায় বড় বড় চাল কুমড়ো ও নতুন মাষ কালাইয়ের ডাল। আগে সাধারণত পাকা চাল কুমড়ো বিক্রি হতো মোরব্বা। এখন বড়ি তৈরীর জন্য ব্যাপকহারে ব্যবহার হচ্ছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়াতে আবাদও বেশী হচ্ছে। বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলের চাঁপাইনবাবগঞ্জ রাজশাহী, নওগাঁ ও নাটোরে চলছে বড়ি তৈরীর ধুম। বিভিন্ন আকারের বড়ি তৈরী হচ্ছে। স্পেশালভাবে তৈরীর জন্য অর্ডারও নেয়া হচ্ছে।
বাড়ির ছাদে কাপড় বিছিয়ে পাশ্ববর্তী খোলা মাঠে মাচান করে বড়ি শুকানোর দৃশ্য এখন সহজেই চোখে পড়ে। কোন কোন পরিবারের বউ ঝিরা উৎসবের মত করে বড়ি তৈরীতে মেতেছে। অনেক খুঁজে পেয়েছে ক্ষণিকের কর্মসংস্থান। লেখাপড়ার ফাঁকে বড়ি তৈরীতে হাত লাগাচ্ছে নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়েরা। বিত্তবান গৃহ বধূরা শখের বসে বানাচ্ছেন কুমড়ো বড়ি।
রাজশাহী অঞ্চল ছাড়িয়ে যশোরসহ বিভিন্ন স্থানে তৈরী হচ্ছে এমন বড়ি। উপকূলীয় অঞ্চলে এ বড়ি তৈরী হয় এ্যাংকর ডাল দিয়ে। আবার বড়ি তৈরীতে চাল কুমড়ো ছাড়াও ব্যবহার হচ্ছে পাতাকপি, আলু, মুলা ও পেপেসহ বিভিন্ন সবজি।
তারপরও মাষ কালাইয়ের ডাল আর পাকা চাল কুমড়োর বড়ি সবার সেরা। যে বড়ি নিয়ে এতো কথা তা বানানোর পদ্ধতি খুব সহজ নয়। প্রথমে ভাল মাষ কালাইয়ের ডাল সংগ্রহ করে পানিতে কমপক্ষে চার পাঁচ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হয়। এরপর ডাল পেষাই করে রোদে শুকিয়ে ডালের আটা বানানো হয়। অন্যদিকে পাকা চাল কুমড়ো ধুয়ে কেটে বিচি মুক্ত করার পর পাতলা করে পিষে পেষ্ট বানানো হয়। ডালের আটার পেস্ট আর কুমড়োর পেস্টের মিশিয়ে কয়েক ঘণ্টা রেখে দেয়া হয়। এর সাথে সামান্য পরিমান আটা ও কালোজিরা মেশানো হয়।
মেশানো ঠিকমত হয়েছে কিনা তা বোঝার জন্য খানিকটা পানি গামলা কিংবা হাড়িতে নিয়ে পেস্টগুলো বড়ি আকৃতির মত করে পানিতে ছেড়ে দেয়া হয়। যদি বড়ি পানিতে ডুবে যায় তবে বুঝতে হবে মেশানোর পর ঠিকমত ফেটানো হয়নি। বেশী করে ফেটাতে হবে। এরপর আংশিক ভাবে ভাসলে বুঝতে হবে বড়ি তৈরীর জন্য প্রস্তুত।
নওগাঁ জেলার বিভিন্ন স্থানে তৈরী হচ্ছে কুমড়ো বড়ি। কজন কুমড়ো বড়ি প্রস্তুতকারক জানালেন একজন নারী পুরুষ প্রতিদিন তিন চার কেজি মাষ কালাইয়ের ডালের বড়ি তৈরী করতে পারে। মহিলারা বাড়িতে বসে বানাচ্ছেন। দুটো পয়সার মুখ দেখছেন। অনেক স্থানে এটি ছোট শিল্পের মত হয়ে উঠেছে। শত শত নারী পুরুষ শীতকালের কটি মাসের জন্য খুঁজে পেয়েছেন কর্মসংস্থান। যা প্রান্তিক পর্য্যায়ের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।
এক সময়ের সহজলভ্য মাষ কালাইয়ের ডালের দাম একশো টাকার উপরে। আবার বেশী দাম দিয়ে কেউ বড়ি নিতে রাজী হয়না। ফড়িয়াদের হাতে তুলে দিতে হয়। তারা কেজি প্রতি ৮০ থেকে একশো টাকার বেশী দেয়না। কম দামের জন্য একটি চক্র ডালে মিশ্রন ও ভেজাল দিচ্ছে। ফলে মানহীন এসব বড়ি কিনে মানুষ প্রতারিত হচ্ছে।
রাজশাহীর সাহেব বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেল ভাল মানের প্রতি কেজি বড়ি বিক্রি হচ্ছে দুশো টাকার উপর। আবার একশো কুড়ি টাকা কেজির বড়িও রয়েছে। পুষ্টিবিদরা বলছেন, কুমড়ো বড়ি একটি উৎকৃষ্ট মানের পুষ্টি সম্পন্ন খাবার। পেটের জন্য ভাল উপকারী। আর স্বাদে কম যায়না। রুচি বাড়ায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।