Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

আন্দোলনে চৈত্রের উত্তাপ

হোসেন মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০১৯, ১২:১০ এএম

আজ ১ মার্চ। আজ থেকে ৪৮ বছর আগে ১৯৭১ সালের মার্চের এ দিনে এদেশের ইতিহাসে সূচিত হয়েছিল এক নবতর অধ্যায়। প্রতি বছর মার্চ এলেই নতুন করে জীবন্ত হয়ে ওঠে সে ইতিহাস।
পদ্মা-মেঘনা-যমুনা-সুরমাসহ অসংখ্য নদ-নদী বিধৌত এ বাংলাদেশ প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য শোভিত ও সম্পদে সমৃদ্ধ। আবহমান কাল ধরে এ দেশ আকৃষ্ট করেছে সবাইকে। ভৌগোলিক অবস্থান বাংলাদেশকে পরিণত করেছে বিশ্বের বুকে এক গুরুত্বপূর্ণ ভ‚খন্ডে। যুগে যুগে নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে রচিত হয়েছে এ পাললিক জনপদের তরঙ্গমুখর ইতিহাস। নদীপ্রবাহের মতই কালের পথ বেয়ে অগ্রসর হয়েছে বাংলাদেশ। এদেশের ইতিহাসের পাতায় পাতায় লেখা রয়েছে সে কাহিনী। স্বাধীনতার জন্য, স্বাধীন মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য চিরকাল লড়াই করে এসেছে বাংলার মানুষ। সে লড়াইয়ের ইতিহাস রক্তপাতের, অশ্রুর, বেদনার। একই সাথে তা সাহস, বীরত্ব ,গর্ব ও গৌরবের। শতকের পর শতক পেরিয়ে স্বাধীনতার সে লড়াই চূড়ান্ত রূপ নেয় বিশ শতকের শেষার্ধে। তার পরিণতিতে বাংলাদেশ আজ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। বাংলাদেশের স্বাধীনতার লড়াইয়ের সর্বশেষ পর্যায়ের সূচনা হয়েছিল ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের আত্মপ্রকাশের পর। সেদিনের ভাষার লড়াই পরে পরিণত হয় দেশের স্বাধীনতার লড়াইয়ে।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরই পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসী তথা বাঙালিরা নির্মম বঞ্চনা, বৈষম্য, শোষণের শিকার হয়। পাশাপাশি আসে বাংলা ভাষার উপর হামলা। এর ফলে গোড়াতেই পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে পড়ে যা পরে আর দৃঢ় হতে পারেনি। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগ অচিরেই জনগণের আস্থা ও নেতৃত্ব হারায়। আত্মপ্রকাশ করে আওয়ামী মুসলিম লীগ যা স্বল্পকাল পরই রূপ নেয় আওয়ামী লীগে। পরবর্তীতে শোষণ-নিপীড়নের অবসান ও বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন প্রবল হয়ে ওঠে। ছয় দফা, ছাত্র আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বিরোধী আন্দোলন ইত্যাদির মধ্য দিয়ে আসে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন। এ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে জয়ী হয় আওয়ামী লীগ। ফলে পাকিস্তানের ইতিহাসে সর্বপ্রথম বাঙালির নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। কিন্তু তখনি শুরু হয়ে যায় ষড়যন্ত্র। পাকিস্তানের কুচক্রিরা বাঙালির হাতে নেতৃত্বের ভার অর্পণে রাজি ছিল না। তাই ডিসেম্বর থেকে সময় গড়িয়ে ফেব্রুয়ারিও শেষ হয়ে যায়, কিন্তু নিয়মানুযায়ী বাঙালির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর ঘটেনি। এতে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষের বিস্তার ঘটে। বাঙালির আন্দোলনে ছড়িয়ে পড়তে থাকে চৈত্রদিনের উত্তাপ।
পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের তারিখ নির্ধারিত ছিল ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ। ১ মার্চ সামরিক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সে অধিবেশন স্থগিত রাখার ঘোষণা দেন। তৎকালিন গণঅসন্তোষের সময়ে এ ঘোষণা ছিল আগুনে ঘি ঢালার মত। বিক্ষোভ-প্রতিবাদে ফেটে পড়ে বাঙালি। রাজপথে নামে মিছিল। জাগো জাগো বাঙালি জাগো, তোমার নেতা আমার নেতা শেখ মুজিব শেখ মুজিব, বীর বাঙালি অস্ত্র ধর বাংলাদেশ স্বাধীন কর, তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা মেঘনা যমুনা, তুমি কে আমি কে বাঙালি বাঙালি, পিন্ডি না ঢাকা ঢাকা-ঢাকা প্রভৃতি স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে আকাশ বাতাস। বাঙালির অবিসম্বাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান হরতাল ও অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। অচল হয়ে পড়ে পূর্ব পাকিস্তান। এ কর্মসূচির সাথে ৭ মার্চ তিনি রেসকোর্স মাঠে জনসভা অনুষ্ঠানের কথা ঘোষণা করেন। শুরু হয় বাঙালির আন্দোলন-সংগ্রামের নতুন অধ্যায়। সরকার ঢাকায় কারফিউ জারি করে। অন্যদিকে স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াসের নির্দেশে ১লা মার্চ স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। সিদ্ধান্ত হয় ২রা মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ছাত্র-গণসমাবেশ অনুষ্ঠানের, আর এই ছাত্র-গণসমাবেশে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলনের।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: স্বাধীনতা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ