পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
অফশোর ব্যাংকিংয়ের পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিভিন্ন ব্যাংকের অফশোর ইউনিটের মাধ্যমে অর্থ পাচারসহ নানা অভিযোগ ওঠার পর নীতিমালা তৈরি করার উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ১৯৮৫ সালে এবিষয়ে একটি নীতিমালা জারি করা হলেও সেটি সম্পূর্ণ ছিল না। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রকাশ করা হয়েছে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট ইপিজেড, পিইপিজেড, ইজেড ও হাইটেক পার্কে অবস্থিত শতভাগ বিদেশি মালিকানার যে কোনো প্রতিষ্ঠানকে স্বল্পমেয়াদি ঋণ এবং এসব প্রতিষ্ঠান থেকে আমানত নিতে পারবে। এসব প্রতিষ্ঠানের এলসি খোলা, বিল ডিসকাউন্টিংসহ বৈদেশিক বাণিজ্য সেবা দিতে পারবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে এসব অঞ্চলের বাইরে শতভাগ বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও এ ধরণের লেনদেন করা যাবে। আর প্রবাসী বাংলাদেশিদের ঋণ দিতে না পারলেও তাদের থেকে আমানত নেওয়া যাবে। বাংলাদেশি মালিকানাধীন কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে আমানত নেওয়া যাবে না। তবে দেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের আমদানি ঋণপত্রের বিপরীতে বিল ডিসকাউন্টিং ও বিদেশি পণ্য সরবরাহকারীর পরিশোধের ব্যবস্থা করা যাবে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট থেকে ঋণের অন্তত ৭৫ শতাংশ বাংলাদেশেই বিনিয়োগ থাকতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রায় আমানত গ্রহণ ও ঋণ প্রদানের এ ইউনিট দেশীয় উৎস থেকে যে আমানত নেবে, সেটির পরিমাণ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের মূলধনের ২০ শতাংশের বেশি হবে না। এ ইউনিটের তহবিল সাধারণ শাখায় নেওয়া যাবে না। দেশের বাইরে সাধারণ শাখার ‘নস্ট্রো’ অ্যাকাউন্টে অর্থ স্থানান্তর করা যাবে না। আর এমন কোনো ঋণ বিতরণ বা আমানত নেওয়া যাবে না, যা চাহিবামাত্র গ্রাহককে পরিশোধ করতে হয়। নীতিমালায় কোন ধরনের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে আমানত নেওয়া যাবে এবং কোথায় ঋণ দেওয়া যাবে তা সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে।
দেশের বাইরে থেকে তহবিল সংগ্রহ করে রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠানের মাঝে ঋণ বিতরণের জন্য ১৯৮৫ সাল থেকে বাংলাদেশে অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রমের অনুমোদন দেওয়া হয়। যদিও অফশোর ব্যাংকিং পরিচালনায় পূর্ণাঙ্গ কোনো নীতিমালা ছিল না। ১৯৮৫ সালের ১২ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা আধাপৃষ্ঠার একটি নির্দেশনার আলোকে এ কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছিল। এখন নীতিমালা জারির মাধ্যমে আগের ওই নির্দেশনা বাতিল করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্নিষ্টরা জানান, এতদিন পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা না থাকার সুযোগ নিয়ে অফশোর ব্যাংকিং থেকে ঋণ নিয়ে নানা অপব্যবহারের ঘটনা ঘটেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন পরিদর্শনে উঠে এসেছে, অফশোর ব্যাংকিং থেকে দেশের বাইরে বাংলাদেশি মালিকানাধীন বেনামি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়া হয়েছে। আবার এক খাতের নামে ঋণ নিয়ে অন্য খাতে ব্যবহার, কম সুদে অফশোর ব্যাংকিং থেকে ঋণ নিয়ে বেশি সুদে বাংলাদেশে সঞ্চয় বা দেশীয় ঋণ সমন্বয়সহ নানা অসঙ্গতির তথ্যও পাওয়া গেছে। এরকম প্রেক্ষাপটে পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা হলো।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, ব্যাসেল নীতিমালার আলোকে ব্যাংকের মূলধন হিসাবের ক্ষেত্রে এখন থেকে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটকেও বিবেচনায় নিতে হবে। ব্যাংকের সিআরআর ও এসএলআর সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও এ ইউনিটের ঋণ আমানত বিবেচনায় নিতে হবে। সাধারণ ব্যাংকিংয়ের সব ধরনের বিধিনিষেধ অফশোর ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। যে কোনো তফসিলি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে অফশোর ব্যাংকিং পরিচালনা করতে পারবে। তবে এ জন্য প্রতিটি ব্যাংকের নিজস্ব নীতিমালা করতে হবে, যা পরিচালনা পর্ষদ থেকে অনুমোদিত হতে হবে। অফশোর ব্যাংকিং ব্যবসার হিসাব আলাদাভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। তবে ব্যাংকের আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতের ক্ষেত্রে লেনদেনে সব সার্বিক হিসাব টাকায় স্থানান্তর করে আর্থিক বিবরণীতে উল্লেখ করতে হবে। ধারণা ভিত্তিক কোনো খাতে বিনিয়োগ করা যাবে না।
এতে আরও বলা হয়েছে, এ ইউনিটের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে এখন থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়-সম্পদ ব্যবস্থাপনা (এএলএম) নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। ফলে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলো মোট আমানতের ৮৩ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং ইসলামী ব্যাংকগুলো ৮৯ শতাংশের বেশি ঋণ দিতে পারবে না। এ ছাড়া অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট বিদেশি উৎস এবং ইপিজেড, পিইপিজেড, ইজেড ও হাইটেক পার্কে অবস্থিত প্রতিষ্ঠান এবং প্রবাসীদের বাইরে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে তহবিল সংগ্রহ করতে পারবে।
দেশের ৫৮ ব্যাংকের মধ্যে বর্তমানে অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম রয়েছে ৩৫টির। গত জুন পর্যন্ত এসব ইউনিট থেকে বিতরণ করা ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫৮ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। এক বছর আগে ছিল ৪৬ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা। এ হিসাবে এক বছরে অফশোর ব্যাংকিংয়ে ঋণ বেড়েছে ১১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা বা ২৪ দশমিক ৩২ শতাংশ। গত জুন পর্যন্ত মূল ব্যাংকিংয়ে ১৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ ঋণ বেড়ে ১০ লাখ ৫৯ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।