পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে ধীরগতির কারণে বিদেশি উন্নয়ন সংস্থাগুলো বরাবরই বিরক্তি প্রকাশ করে আসছে। অর্থমন্ত্রী ও পরিকল্পনা মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে একাধিকবার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নে তাগিদ দিয়ে আসছেন এ সব সংস্থার প্রতিনিধিরা। প্রকল্পের নজরদারী বাড়াতে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারসহ বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। ইতোমধ্যে বিভাগের পক্ষ থেকে প্রতিটি জেলার জেলা প্রশাসকের সাথে ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়েছে। এত কিছুর পরও প্রত্যাশিত গতি না আসায় এবার নিজেই মাঠে নেমেছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। ইতোমধ্যে দুটি বিভাগ খুলনা ও সিলেট বিভাগ সফর করেছেন। তবে দুটো বিভাগ সফর করে প্রকল্প কাজে ধীরগতির কারণ হিসেবে পরিকল্পনা মন্ত্রী প্রকল্প পরিচালকদের প্রকল্পে সময় না দেওয়াকে চিহ্নিত করেছেন। আর তাদের কারণেই অধিকাংশ প্রকল্প আলোর মুখ দেখছে না। গত রোববার নিজ জেলা সিলেট বিভাগের উন্নয়ন প্রকল্পের চিত্র দেখে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান হতাশাও প্রকাশ করেন। কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠককালে পরিকল্পনা মন্ত্রী জানতে পারেন যে, প্রকল্প পরিচালকরা অধিকাংশ সময় কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন। এ নিয়ে হুসিয়ারি উচ্চারন করে মন্ত্রী বলেন, সময়মত প্রকল্পের কাজ শেষ করতে প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। তাই সকলকে এই নির্দেশরা অনুসরন করতে হবে।
বিভাগ সফরে পরিকল্পনা মন্ত্রী জানতে পারেন, দেশের অধিকাংশ প্রকল্প পরিচালকরা নিজ প্রকল্পে সময় দেন না। ফলে অধিকাংশ প্রকল্প আলোর মুখ দেখছে না। পিছিয়ে পড়ছে প্রকল্পের অগ্রগতি। এতে করে একদিকে যেমন উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে অন্যদিকে চরম আর্থিক ক্ষতিতে পড়ছে সরকার।
পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেন, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি আনতে বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এ মুহূর্তে সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার উন্নয়ন নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্যে প্রকল্পের গতি বাড়ানোর বিকল্প নেই। প্রকল্পের সমস্যা চিহ্নিত করতে দেশের প্রতিটি বিভাগ সফর করবেন বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
আইএমইডির কর্মকর্তারা জানান, পরিকল্পনা মন্ত্রী বিভাগ সফর করে চলমান প্রকল্পের সমস্যাগুলো তুলে ধরছেন। পাশাপাশি এ সব সমস্যা সমাধানে সম্ভাব্য করণীয় নির্ধারণ করে দেয়া হয় আইএমইডির পক্ষ থেকে। নির্ধারিত সময়ে মান নিশ্চিত রেখে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে মন্ত্রীর পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে বলেও তারা জানান।
আইএমইডি সূত্র জানায়, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি খুলনা সফর করেন পরিকল্পনা মন্ত্রী। এর পর ২৪ ফেব্রুয়ারি সিলেট বিভাগ সফর করেন। পর্যায়ক্রমে সারা দেশের সব বিভাগেই সফরে করবেন মন্ত্রী।
সূত্র জানায়, বর্তমান অর্থমন্ত্রী ও সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল-এর সময়ে প্রকল্পভিত্তিক পরিদর্শন দল পাঠানো ও সংশ্লিষ্টদের মন্ত্রনালয়ে ডেকে আনার বাইরে ২০১৭ সালে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন শুরু করে আইএমইডি। ওই বছরের শেষ অর্ধেক সময়ে ২৯টি জেলায় ভিডিও কনফারেন্স করা হয়। তার আগে পরীক্ষামূলকভাবে কনফারেন্স করা হয় ১০ জেলায়। গতবছরের শুরুর দিকে অবশিষ্ট জেলাগুলোর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়।
আইএমইডি সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এডিপি বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে ৪৯ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা। ৫৭ মন্ত্রনালয় ও বিভাগ মিলে এবার ১ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকার এডিপি বাস্তবায়ন করছে। এ হিসাবে এডিপি বাস্তবায়নের হার ২৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ। শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন করতে পরবর্তী ছয় মাসে ব্যয় করতে হবে ১ লাখ ৩১ হাজার ২২৪ কোটি টাকা।
শুরুর দিকে এডিপি বাস্তবায়নে গতি না আসায় শেষের দিকে লক্ষ্য পূরণে মন্ত্রনালয় ও বিভাগগুলোর সামনে বাড়তি অর্থ ব্যয়ের চাপ পড়ছে। এর ফলে কাজের গুনগত মান নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। শেষ দিকে ব্যয়ের বড় একটা অংশ অপচয় হতে পারে বলেও মনে করেন তারা। তাই এডিপি বাস্তবায়নে গতি আনতে সব মন্ত্রনালয় ও বিভাগের সচিবদের অংশগ্রহণে বিভাগে এ সভার আয়োজন করা হচ্ছে পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে।
বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, পরিকল্পামন্ত্রীর মাঠ পর্যায়ে সফর ভালো উদ্যোগ। কারণ অর্থছাড় হলেও প্রকল্প শেষ হচ্ছে না। তাই পরিকল্পনামন্ত্রীর এ তদারকি কাজে গতি বাড়াবে ঠিক। তবে এটিই সমাধান নয়; কারণ সমস্যাটা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনার দুর্বলতা, দরপত্রের দীর্ঘসূত্রিতা, প্রজেক্ট ব্যবস্থাপনার অস্থিতিশীলতা (প্রকল্প পরিচালকের বদলি), দুর্নীতি, ঠিকাদারদের অনিয়ম এসব মৌলিক সমস্যা দূর করতে হবে। তাই মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শনের পাশাপাশি প্রকল্পের মৌলিক সমস্যা দুরীকরণে ভূমিকা রাখতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।