Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্যর্থতা ঢাকতে ভুল প্রতিবেদন শিল্প মন্ত্রণালয়ের

চকবাজার ট্র্যাজেডি

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

উচ্চ দহনশীল রাসায়নিক পদার্থ বা কেমিক্যালের কারণে চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে তা নিশ্চিত করেছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্তৃপক্ষ। দুর্ঘটনাস্থলে থাকা যে পিকআপটির সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুনের সূত্রপাতের কথা বলা হয়েছিল, সেই পিকআপের সিলিন্ডারটি অক্ষত অবস্থায় আছে। পাশাপাশি আগুনে পুড়ে যাওয়া ওয়াহেদ ম্যানসনের বেজমেন্টে কেমিক্যালের মজুদ পাওয়ার পর শিল্প মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন ও শিল্পমন্ত্রীর বক্তব্য ভুল প্রমাণিত হয়েছে। কেমিক্যাল ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতা ঢাকতে শিল্প মন্ত্রণালয় তড়িঘড়ি করে প্রতিবেদন দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

অগ্নিকান্ডের ঘটনা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলেছেন, ঘটনাস্থলের আলামত দেখে আমরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত কেমিক্যালের কারণে এই অগ্নিকান্ড ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। শুক্রবার সকালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিস্ফোরক পরিদফতরসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরের তদন্ত দলের সদস্যরা ওয়াহেদ ম্যানসনের বেজমেন্টে ড্রাম ভর্তি কেমিক্যাল থাকার প্রমাণ পান। পাশাপাশি কেমিক্যালের কারণেই এই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে বলে তারা নিশ্চিত হন।
সরকারের সংশ্লিষ্ট অন্য দফতরগুলো এ বিষয়ে একমত হলে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে নিশ্চিত করে বলা হয়েছে, এই দুর্ঘটনা কেমিক্যাল থেকে নয়, গ্যাস থেকে ঘটেছে। ২১ ফেব্রুয়ারি উদ্ধার অভিযান শেষ হওয়ার মাত্র ৬ ঘণ্টার মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি প্রাথমিক প্রতিবেদনে বিষয়টি নিশ্চিত করে। তদন্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে শিল্পমন্ত্রী নিজেও কেমিক্যাল নয়, গ্যাসের কারণে অগ্নিকান্ডের বিষয়টি গণমাধ্যমের মাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন।
ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার পেছনে কেমিক্যাল আছে নাকি নেই তা নিয়ে সরকারের দায়িত্বশীল দফতরগুলো থেকে দুই ধরনের বক্তব্য আসায় জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। এই বিভ্রান্তির জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতি উৎসাহী তৎপরতাকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, এত বড় অগ্নিকান্ডের ঘটনায় এত অল্প সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়া সম্ভব নয়। আর ফায়ার সার্ভিস রয়েছে অগ্নিকান্ড নিয়ে কাজ করার জন্য। যেকোনো অগ্নিকান্ডের ঘটনায় এই বিভাগ পুরো বিষয়টি সরেজমিন দেখে প্রাথমিক প্রতিবেদন দেবে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতি উৎসাহী ভূমিকা আসলে কেমিক্যাল ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার ব্যর্থতাকে ঢাকার একটা প্রয়াস মাত্র।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, মানুষের কারণেই চকবাজারে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। কোনো আইনেই পুরান ঢাকায় কেমিক্যালের ব্যবসা চলতে পারে না। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোরও এ বিষয়ে দায় আছে। নিমতলী ট্র্যাজেডির পর কেমিক্যাল ব্যবসা নিয়ে নানা সুপারিশ করা হয়েছিল। ওই সব সুপারিশ আমলে নেওয়া হয়নি। শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন সম্পর্কে তিনি বলেন, কেমিক্যাল নেই, এটা বলার কোনো সুযোগ নেই।
বিষয়টি নিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) আলী আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, আগুনের ঘটনা তদন্তে কমিটি করা হয়েছে। সেই কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, উদ্ধার অভিযান শেষ হওয়ার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভবনগুলো বেজমেন্টে কেমিক্যাল থাকার বিষয়টি প্রচার করা হয়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন ও শিল্পমন্ত্রীর বক্তব্য সম্পর্কে তিনি বলেন, কে কী বললো সেটা দেখার বিষয় নয়।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক আবু নায়েম শহিদুল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, এমন স্পর্শকাতর ঘটনায় সঠিক তদন্ত না করে কারেই মন্তব্য করা ঠিক নয়। চকবাজারের আগুনের ঘটনার কারণ অল্প সময়ে বের করা সম্ভব নয়।
শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাওয়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) তদন্ত কমিটির এক সদস্য জানান, চকবাজারের হাজী ওয়াহেদ ম্যানসনে নিশ্চিতভাবেই কেমিক্যাল ছিল। এই কারণেই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। একইদিন বিস্ফোরক পরিদফতরের প্রধান পরিদর্শক শামসুল আলম ঘটনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা পুড়ে যাওয়া কয়েকটি গাড়ি চেক করেছি। অনেকেই দুর্ঘটনাস্থলে থাকা যে পিকআপটির সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুনের সূত্রপাতের কথা বলেছিল। কিন্তু সেই পিকআপের সিলিন্ডারটি অক্ষত অবস্থায় আছে। তিনি বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখা গেছে, এই এলাকায় বেশ কিছু কেমিক্যালের দোকান রয়েছে। এছাড়া, ওয়াহেদ ম্যানশনের নিচে বেশ কিছু প্লাস্টিকের দানার দোকান ছিল। এ কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি ২১ ফেব্রুয়ারি দেওয়া প্রাথমিক তদন্তে উল্লেখ করে- কেমিক্যালের কারণে নয়, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে চকবাজারে অগ্নিকান্ড ঘটেছে। গ্যাসের সিলিন্ডারটি ওয়াহেদ ম্যানসনের হোটেল বা ভবনটির সামনে একটি গাড়ি থেকে বিস্ফোরিত হয়েছে। এমনকি অগ্নিদগ্ধ কারও দেহে কেমিক্যালের চিহ্ন বা গন্ধ পাওয়া যায়নি।
এ প্রতিবেদন প্রকাশের আগে একইদিন দুপুর ১২টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েও একই কথা বলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। তিনি বলেন, চুড়িহাট্টায় কোনো কেমিক্যালের অস্তিত্ব ছিল না, গোডাউনও ছিল না। নিমতলী আর চকবাজারের ঘটনা একদম ভিন্ন। এটা কেমিক্যাল সম্পর্কিত কিছুই নয়। সিলিন্ডার থেকে এটা হয়েছে। আজকের ঘটনা ভিন্ন। আমি সরেজমিনে দেখে এসেছি। দিস ইজ ডিফারেন্ট স্টোরি।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ঘটনাস্থলের আশেপাশে কেমিক্যালের কোনো কারখানা বা গোডাউন (গুদাম) ছিল না। এলাকাবাসীর ভাষ্য অনুযায়ী, এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডারবাহী একটি গাড়ি রাখা ছিল। এ সময় হোটেল অথবা গাড়িতে থাকা একটি গ্যাস সিলিন্ডার হঠাৎ করে বিস্ফোরিত হয়। ওই বিস্ফোরণে আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ওই আগুন বৈদ্যুতিক লাইনের ট্রান্সফরমারে ধরে যায়। এতে ওই ট্রান্সফরমার বিস্ফোরিত হয়। ফলে, ওই পুরো এলাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এতে এলাকাবাসী অন্ধকারে বের হয়ে পথ হারিয়ে ফেলেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টায় শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, শিল্প সচিব আবদুল হালিম, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মহাপরিচালক-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিনসহ শিল্প মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের কর্মকর্তারা চকবাজারের অগ্নিকান্ডের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন।
এদিকে, শুক্রবার সকাল ১১ টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা লাশের সন্ধান করতে গিয়ে ওয়াহেদ ম্যানসনের নিচে বেজমেন্টটি কেমিক্যালের গোডাউন হিসেবে আবিষ্কার করেন। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, আমরা গোডাউনে মজুদ করা বস্তা ও ড্রামগুলো থেকে নমুনা নিয়েছি। তাতে দেখা গেছে, আয়রন অক্সাইড, আয়রোনিক ইয়োলো, ইঞ্জিনিয়ার কার্বন, অক্সাইড রেডবার ও এসিড গ্রিন রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। কোনোভাবে আগুন নিচে গেলে এমনভাবে বিস্ফোরণ ঘটতো যা বিল্ডিংটাকে উড়িয়ে নিয়ে যেত। তখন এই আগুন পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ত।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কেমিক্যাল ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব শিল্প মন্ত্রণালয়ের। নিমতলীর ঘটনার পর নানা উদ্যোগ নিলেও শিল্প মন্ত্রণালয় ব্যর্থ হয়েছে কেমিক্যাল ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে আনতে। তাদের এই ব্যর্থতা ঢাকতেই তড়িঘড়ি করে প্রতিবেদন দেয়। যা এখন নিজেদের জন্যই বুমেরাং হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যর্থতার জন্য সরকারের এই বিভাগটির কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা চাওয়া উচিত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব্যর্থতা ঢাকতে ভুল প্রতিবেদন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->