পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) মর্গের সামনে রড দিয়ে ঘেরা একটি জায়গায় তখন শত মানুষের ভিড়। চকবাজারের চুড়িহাট্টার আগুন থেকে উদ্ধার করা যেসব লাশ এখনও শনাক্ত করা যায়নি, তাদেরই শনাক্ত করতে স্বজনদের ডিএনএ নমুনা দিতে এসেছেন এরা। একজন একজন করে আসছেন, নমুনা দিয়ে অপেক্ষা করছেন সামনে। এরই মধ্যে এক শিশুর কান্না নাড়িয়ে দিয়ে যায় সবাইকে। কান্না করতে করতে সে বলছে, আমাকে বাইরে নিয়ে যাও। আমি এখানে থাকব না। আমার মাথা ঘুরাচ্ছে। বলতে বলতে একজনের কোলে উঠে বসে সে। তাকে আর নামানো যায় না। পাশে দাঁড়ানো আরেকজন তাকে কোলে নিতে চাইলে তার কোলেও যায় না শিশুটি।
পাঁচ বছর বয়সী শিশুটির নাম বিবি মরিয়ম সানিন। মা বিবি হালিমা আক্তার শিল্পীর লাশটি যেন অন্তত শনাক্ত করা যায়, তার জন্য নিয়ে আসা হয়েছে তাকে। কিন্তু মর্গের সামনে পরিবেশ আর ডিএনএ নমুনা দিতে আসা স্বজনদের কান্না-আহাজারিতে বিহŸল হয়ে পড়ে শিশুটি।
গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এই স্থানে সংগ্রহ করা হয় ডিএনএ নমুনা। সেখানেই মামা শিমুলের কোলে উঠেও কাঁদছিল সানিন।
শিমুল জানান, সানিনদের বাসা রহমতগঞ্জ। কয়েকদিন হলো পাতলা পায়খানা আর জ্বরে আক্রান্ত সানিন। তার জন্যই ওষুধ কিনতে চকবাজারের একটি ফার্মেসিতে গিয়েছিলেন তার সানিনের মা হালিমা আক্তার শিল্পী। তারপর আর বাসায় ফেরেননি তিনি। কোনো খোঁজও আর পাওয়া যায়নি তার।
শিমুল বলেন, এখানে যেসব লাশ ছিল, সেগুলো সব দেখেছি। যতগুলো হাসপাতালের মর্গে লাশ পাঠানো হয়েছে, সেসব জায়গাতেও গিয়েছি। সব লাশ দেখেছি। কিন্তু বোনকে পাইনি। তাই এখানে এসেছি ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে।
শিমুলের পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন সানিনের বাবা জহিরুল হক। প্রথমে তার কাছ থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিএনএ অ্যানালিস্ট নুসরাত ইয়াসমিন। এরপর শিশু সানিনের কাছ থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়েই বাধে বিপত্তি। সানিন যেভাবে কান্নাকাটি শুরু করে, তাতে সেখানে উপস্থিত সবার চোখই ভিজে যায় পানিতে। কিন্তু আবেগকে সরিয়ে রেখে সানিনের কাছ থেকে ডিএনএ নমুনাও তো সংগ্রহ করতে হবে! দায়িত্বে থাকা নুসরাত ইয়াসমিন তখন সানিনের মামা শিমুলকে অনুরোধ করেন সানিনকে কোলে নিয়ে বসতে। চেয়ারে বসিয়েই ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করতে ব্যস্ত হন না পুলিশ সুপার। আদর করেন। সবাইকে অনুরোধ করেন একটু চুপ থাকার জন্য, যেন সানিন ঘাবড়ে না যায়। উপস্থিত সবাইও সানিনের জন্যই চুপ হয়ে যান।
সানিনকে নুসরাত ইয়াসমিন বলেন, ভয় পেও না, তোমাকে একটুও ব্যাথা দেবো না। তার আন্তরিকতা আর স্নেহমাখা কণ্ঠে যেন আশ্বস্ত হয় সানিন। সেই সুযোগে তার মুখ থেকে লালা সংগ্রহ করেন তিনি। সেটুকুই হয়তো ভরসা- মা’কে না পেলেও হয়তো মায়ের লাশটি খুঁজে পাবে সানিন। নমুনা সংগ্রহের পর বাইরে একটু খোলা জায়গায় সানিনকে নিয়ে এসে দাঁড়ান মামা শিমুল ও জহিরুল হক। শিমুল জানান, সানিনের ছোট একটি বোনও আছে। পাঁচ মাস বয়সী বোনটির নাম ফাতেমা আক্তার সামিম।
মেয়ে দু’টির বড় খালা সুরমা মজুমদার বলেন, স্বামী-সন্তান নিয়ে বোনটার খুব সুখের জীবন ছিল। ওর সুখ দেখে আমাদের খুব আনন্দ হতো। কিন্তু এখন তো বুঝতে পারছি, ওর এই সুখ এত ক্ষণস্থায়ী! আমাদেরকে সারাজীবনের জন্য দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে চলে গেল। সুরমা বলেন, মেয়ে দুইটাকে নিয়ে ওদের বাবা এখন কী করবে? পাঁচ মাসের বাচ্চাটাকেই বা বুকের দুধ কে খাওয়াবে? মেয়েটা তো না খেতে পেয়েই মরে যাবে!’ সানিন আর সামিম তাদের কাছেই রয়েছে বলে জানান তিনি।
একরাশ আক্ষেপ নিয়ে সুরমা বলেন, বোনের লাশটা পেলে অন্তত বাচ্চা দু’টি মাকে না পেলেও মায়ের কবরের কাছে যেতে পারত। বলতে পারত, এটাই আমাদের মায়ের কবর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।