Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পুরান ঢাকায় ৪০০ কেমিক্যাল গোডাউন

নিমতলী ট্র্যাজেডির পরও সরেনি

| প্রকাশের সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা
পুরান ঢাকার বংশাল থানা এলাকার আরমানিটোলা, বাবুবাজার, মিটফোর্ড, লালবাগ থানা এলাকার শহীদনগর ও ইসলামবাগ এবং চকবাজার থানা এলাকায় রয়েছে ৪০০টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন। এ ভবনগুলোতে রয়েছে গিøসারিন, সোডিয়াম অ্যানহাইড্রোজ, সোডিয়াম থায়োসালফেট, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, মিথাইল ইথাইল কাইটন, থিনার, আইসোপ্রোপাইল, টলুইনের মতো দাহ্য পদার্থ। ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত হওয়ার পর কয়েক দফা অভিযান চালিয়েও পুরান ঢাকা থেকে এসব কেমিক্যাল গোডাউন অপসারণ হয়নি। ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা বলেন, এসব কেমিক্যাল গোডাউনের ৯৮ শতাংশই অনুমোদনহীন। অগ্নিদুর্ঘটনার বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করছে এসব গোডাউন।
নিমতলী অগ্নিকান্ডের পর পুরান ঢাকার আবাসিক ভবন থেকে কেমিক্যাল গোডাউন সরিয়ে নেয়ার দাবি ওঠে জোরেশোরে। ২০১০ সালের ওই আগুনে ১২৪ জনের মৃত্যুর পর আবাসিক ভবন থেকে কেমিক্যাল গোডাউন সরাতে একযোগে অভিযানেও নামে ফায়ার সার্ভিস ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। তার পরও সরেনি আবাসিক ভবন থেকে কেমিক্যাল গোডাউন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পুরান ঢাকার আরমানিয়ান স্ট্রিটের ২৬/৩ নম্বর বাড়ির নিচতলায় রয়েছে এপি গোডাউন নামে একটি কেমিক্যালের গোডাউন। এর পূর্ব দিকে রাস্তা, পশ্চিমে হাসপাতাল, উত্তর ও দক্ষিণে মার্কেট। ২০০ বাই ৩০০ ফুট আয়তনের গোডাউনটিতে সংরক্ষণ করা হয় ক্যালসিয়াম সোডিয়াম কার্বনেট ও বিøচিং পাউডারের মতো দাহ্য পদার্থ।
রাসায়নিক গোডাউনের মালিক মামুন দাবি করেন, বংশপরম্পরায় তারা রাসায়নিকের ব্যবসা করে আসছেন। এ ব্যবসা বন্ধ করে দিলে তার পরিবারকে না খেয়ে থাকতে হবে। তবে লাইসেন্স আছে কিনা জানতে চাইলে এর কোনো জবাব দেননি তিনি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কেমিক্যাল ব্যবসায়িরা সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ, ডিএসসিসির কর্মকর্তা, বিস্ফোরক অধিদপ্তরের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে মাসোহারার ভিত্তিতে ম্যানেজ করে আবাসিক এলাকায় কেমিক্যাল গোডাউন বানিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। আলাপকালে সংশ্লিষ্ট একজন জানান, কেমিক্যাল গোডাউন আড়াল করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ কেমিক্যালের ড্রাম গোডাউনে প্রবেশ করানো বা বের করার সময় গোডাউনের বাইরে ট্রাক দাঁড় করানো থাকে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গভীর রাতে মালামাল লোড-আনলোড করা হয়। তারপরেও প্রতি মাসে মোটা অংকের টাকা ঘুষ দিতে হয়।
গত বছর গুলিস্তান-মতিঝিলের ফুটপাত থেকে হকারদের উচ্ছেদের পর ডিএসসিসির মেয়র জানিয়েছিলেন, ওই বছরের ১ মার্চ থেকে পুরান ঢাকার আবাসিক ভবন থেকে সব গোডাউন সরাতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। র‌্যাব ও পুলিশের সহায়তা নিয়ে ১ মার্চ থেকে সিটি করপোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়ে অভিযানে নামবেন বলেও সে সময় জানান তিনি। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে গুটিকয়েক কারখানায় অভিযান চালানোর পর হঠাৎ করেই সে তৎপরতা থেমে যায়।
চুড়িহাট্টার অগ্নিকান্ডের পর আবারো কেমিক্যাল গোডাউন সরানোর ঘোষণা দিয়েছেন ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন। গত বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে তিনি বলেন, গত বছরও আমরা একটি উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিছু গোডাউনে অভিযানও চালিয়েছিলাম। কিছু সিলগালা করেছিলাম। পরবর্তী সময়ে শিল্প মন্ত্রণালয় ও এফবিসিসিআই থেকে জানানো হয়, এসব কেমিক্যাল গোডাউন ব্যবসায়ীদের আরো কিছুটা সময় দিলে তারা নিজ থেকেই স্থানান্তর করবেন। সেজন্যই কেমিক্যাল কারখানা ও গোডাউন স্থানান্তরের কাজ বন্ধ করা হয়েছিল। এবার আর কারো কথা শোনা হবে না। শক্ত পদক্ষেপের মাধ্যমে পুরান ঢাকাকে কেমিক্যাল কারখানা ও গোডাউনমুক্ত করা হবে।
পুরান ঢাকাকে কেমিক্যাল কারখানা ও গোডাউনমুক্ত করতে পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার ঘোষণা দিয়েছেন পুলিশের আইজি ড. জাবেদ পাটোয়ারী। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুরান ঢাকাকে বাঁচাতে হলে এখান থেকে সব ধরনের কেমিক্যাল কারখানা ও গুদাম সরাতে হবে। এজন্য পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে।
তবে ভিন্ন কথা বলেছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) বার্ন ইউনিট পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিল্পমন্ত্রী বলেন, পুরান ঢাকার কেমিক্যাল ব্যবসা বংশপরম্পরার। এটা তো বন্ধ করা যাবে না। এর সঙ্গে অনেক কিছু জড়িত। আমি পুরান ঢাকার মানুষ। আমি জানি।
কেমিক্যাল গোডাউন অপসারণের জন্য কয়েক দফা উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। এ বিষয়ে সংস্থাটির পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) মেজর একেএম শাকিল নেওয়াজ গণমাধ্যমকে বলেন, নিমতলী ট্র্যাজেডির পর থেকেই আমরা চেষ্টা করছি পুরান ঢাকা থেকে সব ধরনের কেমিক্যাল গোডাউন ও কারখানা সরিয়ে নিতে। এজন্য গণমাধ্যমকে সঙ্গে নিয়েই আমরা কয়েক দফা অভিযান চালিয়েছি। কিন্তু পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীদের বাধার মুখে সেটা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া ফায়ার সার্ভিসের নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট নেই যে আমরা নিজেদের ইচ্ছেমতো অভিযান পরিচালনা করব। একটি অভিযান চালাতে হলে ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে আবেদন করে অপেক্ষায় থাকতে হয়।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ